রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০:০০ অপরাহ্ন
চলতি সাউথ এশিয়ান (এসএ) গেমসে স্বর্ণ জয়ের শুরুটা হয় রাঙামাটির ছেলে দিপু চাকমার হাত ধরে। এরপর নবম দিনে এসে ১৯টি স্বর্ণ জয়ের গল্প লিখে নতুন উচ্চতায় উঠল বাংলাদেশ।
এসএ গেমসের ইতিহাসে এবারই রেকর্ড সর্বোচ্চ স্বর্ণ জিতল বাংলাদেশের অ্যাথলেটরা। এর আগে ২০১০ সালে দেশের মাটিতে আয়োজিত এই আসরে ১৮টি স্বর্ণ জিতেছিল বাংলাদেশ। দেশের বাইরে নিজেদের ইতিহাসে এত স্বর্ণ জয় এবারই প্রথম। এর আগে বিদেশের মাটিতে ১৯৯৫ সালে মাদ্রাজ এসএ গেমসে ৭টি স্বর্ণ জিতেছিল বাংলাদেশ।
তবে এবার সোনায় মোড়া বাংলাদেশ ছাড়িয়ে গেলো নিজেদের ইতিহাসকে। নেপালের কাঠমান্ডুর পোখারায় দ্বিতীয় দিনে তায়কোয়ান্দোতে প্রথম স্বর্ণ জয়ে বাংলাদেশকে উচ্ছ্বাসে ভাসান দিপু চাকমা। এরপর ধীরে ধীরে অষ্টম দিনে এসে নতুন স্বপ্ন বুনতে থাকে লাল-সবুজ পতাকা বহনকারীরা।
সেই স্বপ্নের পালে হাওয়া দেয় বাংলাদেশের আর্চারির দলগুলো। রোববার (০৮ ডিসেম্বর) তারা আর্চারিতে ছয়টিতে ছয়টি স্বর্ণ জিতে নেয়। সেই সঙ্গে যোগ হয় মেয়েদের ক্রিকেটে স্বর্ণ জয়ও। বাংলাদেশ এবারের এসএ গেমসের অষ্টম দিন শেষ করে ১৪টি স্বর্ণ জয়ে। অবশ্য তা ১৫-ও হতে পারতো। স্বাগতিক নেপালের বিপক্ষে ফুটবলের ফাইনালে হেরে যাওয়ায় তা আর সম্ভব হয়নি।
তবে সোমবার (০৯ অক্টোবর) নবমদিন বাংলাদেশকে দিল দু’হাত ভরে। সকালে আর্চারিতে মেয়েদের কম্পাউন্ডে সুমি বিশ্বাসের হাত ধরে শুরু। এরপর বিকেল হতেই আর্চারিতে দশে দশ স্বর্ণ জিতে নেয় বাংলাদেশ। এবারই প্রথম আর্চারিতে যৌথ ও একক মিলিয়ে সব বিভাগেই স্বর্ণ জিতল বাংলাদেশ আর্চারি দল। বিকেলে রোমান সানার হাত ধরে অষ্টাদশ স্বর্ণ জয়ের পরপরই নিজেদের পুরনো রেকর্ড ছুয়েঁ ফেলে বাংলাদেশ।
ছাড়িয়ে যাওয়ার জন্য দরকার ছিল আরেকটি সোনা। সেটিও এলো বিকেলেই। ক্রিকেটের টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের ফাইনালে শ্রীলঙ্কাকে ৭ উইকেটে হারিয়ে নিজেদের ইতিহাসে ১৯তম স্বর্ণ জয়ের নতুন চূড়ায় ওঠে বাংলাদেশ।
এর আগে নেপালের কাঠমান্ডুতে ১৩তম সাউথ এশিয়ান (এসএ) গেমসে এর আগে রোববার সকালে অষ্টম স্বর্ণ জেতে বাংলাদেশ। আসরের অষ্টম দিনে আর্চারিতে পুরুষদের দলগত রিকার্ভে শ্রীলঙ্কাকে ৫-৩ পয়েন্টে হারিয়ে এই সফলতা পান রুমান সানা, তামিমুল ইসলাম এবং হাকিম আহমেদ রুবেল।
এরপর শ্রীলঙ্কাকে ৬-০ পয়েন্টে হারিয়ে আর্চারিতে নারীদের দলগত রিকার্ভে স্বর্ণ জেতে বাংলাদেশ। রিকার্ভ মিশ্র ইভেন্টে সোনা জিতে নেন বাংলাদেশের রোমান সানা ও ইতি খাতুন জুটি। ফাইনালে রোমান-ইতি জুটি ভুটানকে ৬-২ পয়েন্টে হারিয়েছে।
ছেলেদের কম্পাউন্ড দলগত ইভেন্টের ফাইনালে বাংলাদেশের সোহেল রানা, অসীম কুমার দাস আর আশিকুজ্জামান ২২৫-২১৪ স্কোরের ব্যবধানে ভুটান দলকে হারিয়েছেন। পরে শ্রীলঙ্কা দলকে ২২৬-২১৫ স্কোরের ব্যবধানে হারিয়ে বাংলাদেশের সুস্মিতা বণিক, সুমা বিশ্বাস আর শ্যামলী রায় মেয়েদের কম্পাউন্ড দলগত ইভেন্টেও স্বর্ণ জিতে নেন।
দিনের শেষে কম্পাউন্ড মিশ্র দলগত ইভেন্টে স্বর্ণ এনে দেন বাংলাদেশের সোহেল রানা আর সুস্মিতা বণিক। ফাইনালে তারা নেপালকে হারিয়েছেন ১৪৮-১৪০ স্কোরের ব্যবধানে
এদিন আর্চারি ছাড়াও মেয়েদের ক্রিকেটে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে স্বর্ণ জিতে নেয় বাংলাদেশ।
এর আগে শনিবার ভারোত্তলনে দুটি সোনার পদক জেতার রেশ কাটতে না কাটতেই বাংলাদেশকে সপ্তম স্বর্ণ পদক পাইয়ে দেন ফাতেমা মুজিব। ফেন্সিংয়ে ব্যক্তিগত সেভার ইভেন্টে তিনি সোনার পদক জিতেছেন।
মাবিয়া আক্তার সীমান্তের পর বাংলাদেশ আরও একটি স্বর্ণ পদক জেতে। বাংলাদেশকে ষষ্ঠ স্বর্ণ পদক পাইয়ে দেন জিয়ারুল ইসলাম। ৯৬ কেজি ওজন শ্রেণিতে তিনি স্বর্ণ জিতেছেন। মাইনুল ইসলাম ১০২ কেজিতে জিতেছেন রৌপ্য পদক।
গতবারের মতো এবারও বাংলাদেশকে সোনার পদক পাইয়ে দিয়েছেন সীমান্ত। ৭৬ কেজি ওজন শ্রেণিতে স্বর্ণ জিতেছেন তিনি। ৮১ কেজিতে রৌপ্য জিতেছেন বাংলাদেশের জোহরা খাতুন নিশা।
বাংলাদেশকে প্রথম পদক এনে দিয়েছিলেন হুমায়রা আক্তার অন্তরা। তবে সেটি ছিল ব্রোঞ্জ। তায়কোয়ান্দোতে এবার বাংলাদেশ প্রথম সোনার পদক জেতে। দিপু চাকমা পাইয়ে দেন প্রথম স্বর্ণ। তায়কোয়ান্দোতে ছেলেদের এককে পুমসায় ২৯ অথবা এর বেশি ওজনে ভারতের প্রতিযোগীকে হারিয়ে বাংলাদেশকে প্রথম সোনা জেতান রাঙামাটির ছেলে দিপু।
এরপর কারাতে কুমিতে সোনা জেতেন আল আমিন। সেটি ছিল বাংলাদেশের দ্বিতীয় সোনার পদক। কারাতে ইভেন্টের ৬০ কেজি ওজন শ্রেণি কুমিতে সোনা পাইয়ে দেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আল আমিন। দেশের তৃতীয় স্বর্ণ জেতেন বাংলাদেশের আরেক খেলোয়াড় মারজানা আক্তার প্রিয়া। এসএ গেমসে দেশের পক্ষে তৃতীয় সোনার পদক আসে মেয়েদের কারাতে ইভেন্টে। মেয়েদের অনূর্ধ্ব-৫৫ কেজি কুমি ইভেন্টে সোনা জেতেন মারজানা।
বাংলাদেশকে ১৩তম আসরে প্রথম পদক পাইয়ে দেওয়া হুমায়রা আক্তার অন্তরা বাংলাদেশ চতুর্থ সোনার পদক পাইয়ে দেন। কারাতে ৬১ কেজি কুমিতে স্বর্ণ জেতেন অন্তরা। নেপালের অনু গুরুংকে ৫-২ পয়েন্টে হারান তিনি। এরপর চারদিন বিরতি দিয়ে আজ আবারও সোনার মুখ দেখেছে বাংলাদেশ। দেশকে পঞ্চম স্বর্ণ পাইয়ে দিয়েছেন মাবিয়া আক্তার সীমান্ত। পরে ষষ্ঠ স্বর্ণ আসে জিয়ারুল ইসলামের হাত ধরে। এবার ফাতেমা জেতান সপ্তম স্বর্ণ পদক।