শনিবার, ০২ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:২৬ পূর্বাহ্ন
অনলাইন ডেক্স:করোনা ভাইরাস ইতোমধ্যে হানা দিয়েছে দেশের ৬৩ জেলায়। ভাইরাসটি মোকাবিলায় গত ২৬ মার্চ থেকে দেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কাউকে ঘরের বাইরে বের হতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। করোনা আক্রান্ত অঞ্চলকে জরুরি ভিত্তিতে লকডাউন করতে বলা হচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে। বাংলাদেশের অর্ধেক জেলা ও বিভিন্ন উপজেলা লকডাউনের কবলে। এরই মধ্যে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নে কর্মহীনদের খাদ্য নিরাপত্তায় সামনে থেকে কাজ করে যাচ্ছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাসহ (পিআইও)ও উপ-সহকারী প্রকৌশলীগন সংশ্লিষ্টরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, করোনার ভয়ভীতি উপেক্ষা করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর হতে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে বরাদ্দকৃত জিআর চাল, নগ অর্থ ও শিশু খাদ্য উপজেলা প্রশাসনের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ বরাবর উপবরাদ্দ প্রান করা হয়। অতঃপর অপারেশন ম্যানুয়াল অনুসারে ওয়ার্ড কমিটি ও ইউনিয়ন কমিটির মাধ্যমে কর্মজীবী কর্মহীনদের তালিকা প্রস্তুত করে পর্যায়ক্রমে প্রতিটি পরিবারে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার কাজ বাস্তবায়ন করছেন পিআইওগণ। এতে বিতরণে সহযোগিতা করে যাচ্ছেন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, মেম্বার, সচিবগণ এবং পৌরসভার ক্ষেত্রে মেয়র, কাউন্সিলর ও সচিবগণ।
কর্মকর্তারা জানান, বিতরণ যাতে সঠিকভাবে হয় এজন্য প্রায়ই তাদের সরেজমিনে উপস্থিাত হয়ে বিতরণ কার্য সম্পন্ন করতে হয়। এ সময় উপকারভোগীরা কেউই স্বাস্থ্যাবিধি মেনে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে খাদ্য সামগ্রী গ্রহন করেন না। ফলে ঝুঁকি নিয়েই তারে কাজ করতে হয়।
জানা যায়, বরাদ্দ প্রাপ্তি থেকে শুরু করে উপ-বরাদ্দ জারি, তালিকা তৈরি, বিতরণ প্রক্রিয়া, তদারকি কর্মকর্তার উপস্থিাতি নিশ্চিত সুষ্ঠভাবে অনুমোদিত তালিকা অনুযায়ী বিতরণে সার্বিক সহযোগিতার কাজটি উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তারা (পিআইও)ও উপ-সহকারী প্রকৌশলীগন করে চলেছেন। এছাড়াও উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের সঙ্গে থেকে করোনা সংক্রান্ত সকল কাজেও পিআইওরা অগ্রণী ভ‚মিকা পালন করে চলেছেন।
ইউনিয়ন পরিষদ সূত্রে জানা যায়, এ সকল কার্যক্রম যাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার সঙ্গে বাস্তবায়ন হয় তার প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেন উপজেলা প্রশাসন ও জেলা প্রশাসন। আর উপজেলা থেকে প্রতিদিনের কার্যক্রমের একটি রির্পোট জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠানো হয়।
যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার নাভারণ ইউনিয়ন পরিষদের সচিব মইনুল ইসলাম শাকিল বলেন, করোনা মোকাবেলায় অসহায় মানুষ যেনো কষ্ট না পায় সেজন্য সম্মুখ থেকে কাজ করছি। লকডাউনের ভেতরেও ৪০ কিমি দূর থেকে এসে করোনা ঝুঁকি নিয়ে অফিস করছি। জনপ্রতিনিধি ও জনসাধারণরে নিয়ে ত্রাণ তালিকা থেকে শুরু করে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন কাজ করতে হচ্ছে। কিন্তু এ পর্যন্ত সরকারের পক্ষ কোনো প্রকার সুরক্ষা সামগ্রী দেওয়া হয়নি। এ সময় করোনা মোকাবিলায় একজন সম্মুখযোদ্ধা হিসেবে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজে তাদের অন্তর্ভুক্তির দাবি জানান তিনি।
মাঠ পর্যায়ে কর্মরত একাধিক পিআইও জানান, তারা সর্বোচ ঝুঁকি নিয়ে বলতে গেলে ২৪ ঘন্টা কাজ করে চলেছেন। প্রতিনিয়ত শংকার মধ্যে কাজ করে চলেছেন। ইতোমধ্যে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার কার্যালয়ের একজন কর্মচারী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। একজন জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তাসহ একাধিক উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত।
তারা বলেন, প্রস্তাবিত অর্গানোগ্রামটি বাস্তবায়ন হলে জনবল সংকট কাটিয়ে এ মন্ত্রণালয়ের প্রতিটি জনবান্ধব কাজ আরও স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার সঙ্গে সম্পূর্ণ করা সহজ হবে। কারণ এই মন্ত্রণালয় যে সমস্ত কাজ করে থাকেন তার সবগুলোই সামাজিক নিরাপত্তাম‚লক, সামাজিক উন্নয়নমূলক এবং দুর্যোগ ব্যাবস্থাপনা কার্যক্রম। জনবলকাঠামো দ্রুত অনুমোদন হলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বাংলাশে আরও একধাপ এগিয়ে যাবে।
বাংলাদেশ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসার সমিতির সাবেক সহসভাপতি তপন কুমার ঘোষ বলেন,
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন-২০১২ পাশ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ত্রাণ ও পুনর্বাসন অধিদপ্তর এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ব্যুরো এক হয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর গঠিত হয়। ওই আইনে এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নে অতি দ্রুত অর্গানোগ্রাম বাস্তবায়নের দাবি জানাই।
এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা পবিত্র চন্দ্র মন্ডল বলেন, দুর্যোঘ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটির সভাপতি ক্যাপ্টেন এবি তাজুল ইসলাম এমপি স্যারের নির্দেশনায় জীবনের সর্বোচ ঝুঁকি নিয়ে মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। বাঞ্ছারামপুরবাসীর কাছে একটাই চাওয়া আপনারা ঘরেই থাকুন, নিরাপদে থাকুন। আপনাদের ঘরে ঘরে আমরাই খাবার পৌঁছে দিবো।
ঢাকার কেরানীগঞ্জ উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম বলেন, জীবন বাজি রেখে দিন-রাত কাজ করে খাদ্য নিরাপত্তা দিয়ে যাচ্ছি। মনে সব সময় একরকম আতঙ্ক নিয়ে সুরক্ষা ছাড়াই কাজ করে চলেছি।
জানতে চাইলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. শাহ কামাল বলেন, ইতোমধ্যে সারা দেশে মাঠপর্যায়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীরে জন্য পিপিই পাঠিয়ে দিয়েছি। তারা যেন সবাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে এবং অর্গানোগ্রাম বাস্তবায়নের কার্যক্রম চলমান রয়েছে দ্রুত বাস্তবায়ন হবে বলে আশা রাখি।
মানবকণ্ঠ/এইচকে