রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ০৪:২৬ অপরাহ্ন
অনলাইন ডেক্স: ইলিশের নিরাপদ প্রজননের লক্ষ্যে (১২ অক্টোবর) মধ্য রাত থেকে ২২ দিনের জন্য সারাদেশে নিষেধাজ্ঞায় শেষ না হতেই অবারও মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) দিবাগত মধ্যরাত থেকে সারাদেশে ইলিশ পোনা-জাটকা আহরণে ৮ মাসের নিষেধাজ্ঞা দিলো সরকার। আগামি ২ নভেম্বর দিবাগত মধ্যরাতে উপকূলের ৭ হাজার ৩৪২ বর্গ কিলোমিটারে সব ধরনের মাছ সহ সারাদেশে ইলিশ আহরণে নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলেও ৩০ জুন পর্যন্ত জাটকা আহরণ নিষিদ্ধ থাকছে। মৎস্য অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচাল মুহাম্মদ নাসির উদ্দীন বলেন, বিগত বছরগুলোতে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের সহায়তায় ভ্রাম্যমান আদালত এবং মৎস্য বিভাগের অভিযানের ব্যাপক সাফল্য এসেছে। এসব অভিযানের ফলে দেশে বিপুল পরিমাণ জাটকা অবৈধ আহরণ থেকে রক্ষা পাওয়ায় ইলিশ সম্পদ আরো বৃদ্ধি পেয়েছে ।
বরিশাল অঞ্চলের ৪১টি উপজেলার সাড়ে ৩ লাখেরও বেশী জেলের মাঝে চাল বিতরণ করা হবে । বরিশাল মৎস্য কর্মকর্তা বিমল বলেন, ইলিশ মাছ স্রেতের বিপরীতে প্রতিদিন ৭১ কিলোমিটার পর্যন্ত ছুটে চলতে সক্ষম। জীবনচক্রে এরা স্বাদু পানি থেকে সমুদ্রের নোনা পানিতে এবং সেখান থেকে পুনরায় স্বাদু পানিতে অভিপ্রয়াণ করে। উপকূলের ৭ হাজার বর্গ কিলোমিটারের মূল প্রজনন ক্ষেত্রে মুক্ত ভাসমান অবস্থায় ডিম ছাড়ার পরে তা থেকে ফুটে বের হয়ে ইলিশের লার্ভা স্বাদু পানি ও নোনা পানির নার্সারী ক্ষেত্রসমূহে বিচরণ করে খাবার খেয়ে নার্সারী ক্ষেত্রসমূহে ৭-১০ সপ্তাহ ভেসে বেড়ায়।
এরা জাটকা হিসেবে কিছুটা বড় হয়ে ১২-১৮ মাস সমুদ্রে অবস্থান করে পরিপক্কতা অর্জন করে। বঙ্গোপসাগরের বিভিন্ন এলাকায় বসবাসের পরে প্রজননক্ষম হয়ে এসব ইলিশ আবার স্বাদু পানির নার্সারী ক্ষেত্রে ফিরে এসে ডিম ছাড়ে। তিনি বলেন, দেশে উৎপাদিত ইলিশের প্রায় ৭০ ভাগ পাওয়া যায় দক্ষিণাঞ্চলের অভ্যন্তরীণ নদ-নদী ও উপকূলীয় এলাকায়। সমুদ্রে যাবার সময় পর্যন্ত যেসব এলাকায় জাটকা খাদ্য গ্রহণ করে বেড়ে ওঠে, মৎস্য নার্সারী ক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত করে অভয়াশ্রম ঘোষণা করা হয়েছে। ফলে ইলিশের বংশ অনেকটাই রক্ষা পাচ্ছে।
বরিশালের হিজলা ও মেহেদিগঞ্জের লতা, নয়া ভাঙ্গনী ও ধর্মগঞ্জ নদীর মিলনস্থল পর্যন্ত, ভোলার ভেদুরিয়া থেকে পটুয়াখালী চর রুস্তম পর্যন্ত তেঁতুুলিয়া নদীর ১শ’ কিলোমিটার, পটুয়াখালীর কলাপাড়ার আন্ধারমানিক নদীর ৪০ কিলোমিটার, মদনপুর থেকে ভোলার চর ইলিশা হয়ে চরপিয়াল পর্যন্ত মেঘনার শাহবাজপুর চ্যানেলের ৯০ কিলোমিটার, চাঁদপুরের ষাটনল থেকে লক্ষ্মীপুরের চর আলেকজান্ডার পর্যন্ত ১শ’ কিলোমিটার, শরিয়তপুরের নড়িয়া থেকে ভেদরগঞ্জ নিম্ন পদ্মার ১২০ কিলোমিটার পর্যন্ত মোট ৬টি অভয়াশ্রম ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, এ সব অভয়াশ্রমে নভেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যায়ক্রমে ২-৩ মাস পর্যন্ত সব ধরনের মৎস্য আহরণ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকবে। ফলে জাটকা নিধন থেকে রক্ষা পেয়ে ইলিশ সহ সব মাছের উৎপাদন বাড়বে। আহরণ নিয়ন্ত্রণ সহ নজরদারী বৃদ্ধির ফলে দেশে জাটকার উৎপাদন ২০১৫ সালে ৩৯ হাজার ২৬৮ কোটি থেকে ২০১৭ সালে ৪২ হাজার ২৭৪ কোটিতে উন্নীত হয়। গত বছরও ২২ দিনের মূল প্রজননকালে দেশে প্রায় ৮ লাখ ৫ হাজার কেজি ডিম ছেড়েছে মা ইলিশ। যার প্রস্ফুটনে দেশে ৪০ হাজার ২৭৬ কোটি জাটকা ইলিশ পরিবারে যুক্ত হয়েছে । জাটকা আহরণে নিষেধাজ্ঞা কার্যকরে দক্ষিণাঞ্চল সহ উপকূলীয় এলাকায় নৌবহিনী, কোস্টগার্ড, পুলিশ ও র্যাব সহ বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করবে ।