শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৩৯ অপরাহ্ন
প্রিয়া সাহা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে স্পষ্ট অবস্থান নিয়েছেন। এটি পরিষ্কার। কুলাঙ্গার প্রিয়া সাহার অপ্রিয় ভূমিকায় বেশ অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে। সচেতন মহলে অস্বস্তি, সাধারণ মানুষ বিক্ষুব্ধ। সরকারের পক্ষ থেকে দেয়া হয়েছে সতর্ক প্রতিক্রিয়া। এ বিষয়ে মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ব্যারিস্টার সুমন। পাশাপাশি প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, এই ষড়যন্ত্রের নেপথ্যে খেলছে কারা? এটি নিশ্চয়ই এক ব্যক্তির কাণ্ড মনে করার কোন কারণ নেই। আর প্রিয়া সাহা কেবল ব্যক্তি নন, তিনি হিন্দু-বৌদ্ধ-খৃষ্টান ঐক্য পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক। সামাজিকভাবেও তিনি প্রতিষ্ঠিত। তার স্বামী দুদক-এর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা।
বাংলাদেশের কুলাঙ্গার নাগরিক প্রিয়া সাহা মার্কিন প্রেসিডেন্টের কাছে অভিযোগ করেছেন, “বাংলাদেশে ৩ কোটি ৭০ লাখ হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান নিখোঁজ রয়েছেন। দয়া করে আমাদের লোকজনকে সহায়তা করেন। আমরা আমাদের দেশে থাকতে চাই। এখন সেখানে ১ কোটি ৮০ লাখ সংখ্যালঘু রয়েছে। আমরা আমাদের বাড়িঘর খুইয়েছি। তারা আমাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দিয়েছে, তারা আমাদের ভূমি দখল করে নিয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো বিচার পাইনি।” এ অভিযোগের পর পিরোজপুরে তার গ্রামের বাড়ির এলাকায় এরকমের কোন ঘটনা ঘটেনি বলে জানিয়েছেন গৃহায়নমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।
মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে প্রিয়া সাহার কথা বলার সময়কার ভিডিওতে দেখা গেছে, এক পর্যায়ে ট্রাম্প নিজেই সহানুভূতিশীল হয়ে প্রিয়া সাহার সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন। কারা এমন নিপীড়ন চালাচ্ছে- ট্রাম্পের এমন প্রশ্নের জবাবে প্রিয়া সাহা বলেন, ‘দেশটির মৌলবাদীরা এসব করছে। তারা সবসময় রাজনৈতিক আশ্রয় পাচ্ছে।’ অথচ বাস্তবতা হচ্ছে, গত দশ বছর ধরে মৌলবাদী শক্তি চরম বৈরী অবস্থার মধ্যে আছে। শুধু তাই নয়, এদের অস্তিত্ত্বই বিপন্ন হয়ে পড়েছে। এরপরও প্রিয়া সাহা ভয়ানক অভিযোগ করে বসলেন।
উল্লেখ্য, কুলাঙ্গার প্রিয়া সাহা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক। এই সংগঠনের প্রতিনিধি হিসেবেই তিনি ট্রাম্প পর্যন্ত গেছেন বলে মনে করার যথেষ্ট কারণ আছে। যদিও এই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত ২০ জুলাই ডিবিসির সঙ্গে বলেছেন, “প্রিয়া সাহা কিভাবে গেছে তা জানি না। আমরা অন্য তিনজনকে পাঠিয়েছিলাম।” প্রায় একই কথা তিনি বলেছেন আগের রাতে ৭১টিভির সঙ্গে।
রানা দাশগুপ্তের এ বক্তব্য কতটা গ্রহণযোগ্য এবং বিশ্বাস করার মতো তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠাটাই স্বাভাবিক। উল্লেখ্য, রানা দাশগুপ্তকে গত ১৯ জুলাই একাত্তর টিভির টকশোতে প্রশ্ন করা হয়, “আপনি কি মনে করেন প্রিয়া সাহার বক্তব্য সত্য?” এ প্রশ্নের রানা দাশ গুপ্ত হা/না উত্তর দেননি। ইনিয়ে-বিনিয়ে অন্য প্রসঙ্গে চলে গেছেন তিনি। এর ফাঁকে পাকিস্তান আমল থেকে একটি পরিসংখ্যান তুলে ধরে প্রকারন্তরে প্রিয়া দাসের বক্তব্য সমর্থন করেছেন রানা দাশগুপ্তকে।
এ প্রসঙ্গে আর একটি প্রশ্ন করা যায় রানা দাশগুপ্তকে। তা হচ্ছে, যে তিনজনকে পাঠানো হয়েছিলো তাদেরকেই বা পাঠিয়েছিলেন কেন? মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে তো ছিলো ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার ১৬টি দেশের প্রতিনিধিদের বৈঠক। আপনি কি মনে করেন, বাংলাদেশে ধর্মীয় নিপীড়ন হয়? যদি এমনটি হয়েও থাকে তা হলে তো তা বাংলাদেশ সরকারকে জানাবেন; প্রধানমন্ত্রীকেও জানাতে বাধা নেই। কিন্তু এ ইস্যুতে মার্কিন প্রেসিডেন্টের দরবারে তিনজন প্রতিনিধি পাঠালেন কেন?
উল্লেখ্য, গত ১৬ জুলাই ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার ২৭ ব্যক্তির সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেখানে ১৬টি দেশের প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করে। বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রিয়া সাহাও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পান। মার্কিন প্রেসিডেন্টকে বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতা প্রিয়া সাহার দেয়া বক্তব্য নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া সমালোচনার ঝড় উঠেছে। বাংলাদেশ বিষয়ে এমন বক্তব্যকে মিথ্যা ও বানোয়াট বলে তার বিচার চাইছেন অনেকে। ইতিমধ্যে ট্রাম্পের কাছে বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রিয়া সাহার নালিশকে চক্রান্ত ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলে আখ্যায়িত করে বক্তব্য দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। প্রিয়া সাহার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ১৯ জুলাই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, “এই ধরনের ঘটনা বাংলাদেশের মানুষ বিশ্বাস করবে না এবং করেও না। আমাদের এটা অসাম্প্রদায়িক চেতনার বাংলাদেশ, আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কঠোর পরিশ্রমের ফলে আমরা অর্জন করেছি, যেটা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ট ট্রাম্পের কাছে সংখ্যালঘুদের নিয়ে বাংলাদেশের নারী প্রিয়া সাহা যে অভিযোগ করেছেন তা নিশ্চয়ই কোন চক্রান্ত ও উদ্দেশ্যমূলক।”
এ ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে করা প্রিয়া সাহার অভিযোগের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। নিজের ফেসবুক পেজে তিনি লিখেছেন, আমি জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থায় একাধিকবার ভরা হাউসে পৃথিবীর সব দেশের এবং বাংলাদেশ ও বাইরের দেশের এনজিওদের মানবাধিকার সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিয়েছি। যেখানে শ্রদ্ধেয় রানা দাশ গুপ্তর মতো মানুষেরাও উপস্থিত ছিলেন।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও মন্ত্রী ওবায়দুর কাদের বলেছেন, দেশের নাগরিক হয়ে দেশের বাইরে এরকম অসত্য উদ্দেশ্যমূলক এবং দেশদ্রোহী বক্তব্য, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেই হবে এবং সেই প্রক্রিয়া চলছে। এ কথা তিনি বলেছেন ২০ জুলাই। ওবায়দুল কাদের বলেন, এই বক্তব্যটি সম্পূর্ণ অসত্য এবং কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এটি একটি নিন্দনীয় অপরাধই শুধু নয়, উস্কানিমূলক বক্তব্য। যা দেশের অভ্যন্তরে লুকায়িত মতলববাজ সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীকেই আরও শক্তিশালী করতে সহায়তা করবে।
আগের দিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, “দেশে ফেরার পর প্রিয়া সাহাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।” কিন্তু প্রিয়া সাহা দেশে ফিরবে কিনা সেও কিন্তু একটি বড় প্রশ্ন। হয়তো তসলিমা নাসরিনের মতো বাংলাদেশ প্রচারণার মুখপাত্র হিসেবেই বিদেশেই থেকে যাবে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের প্রভাবশালী নেতা এবং সাংগঠনিক সম্পাদক প্রিয়া সাহা।
বাংলাদেশের ‘প্রিয়’ নাগরিক প্রিয়া সাহা খোলস খুলে তার আসল চেহারা দেখিয়েছেন। এটি এখন বিশ্বব্যাপী জানা বিষয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে অনেক প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে, খোলসের মধ্যে আছে আরো কত প্রিয়া সাহা?
বাংলাদেশের জন্য হঠাৎ বিষবৃক্ষ হিসেবে অবির্ভূত প্রিয়া সাহা হঠাৎ করে সৃষ্টি হয়নি। একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়ায় তিনি বেড়ে উঠেছেন। এ ধারায় তিনি অসংখ্য সভা-সমাবেশে অংশ নিয়েছেন, ‘জ্ঞাণগর্ভ’ ভাষণ দিয়েছেন। বিভিন্ন ধরনের সভাসমাবেশ থেকে শুরু করে এমনকি তিনি ২০১৮ সালের নির্বাচন নিয়ে সমাবেশেও কথা বলেছেন। আর বক্তব্য মানেই সংখ্যালঘু প্রশ্নে মায়াকান্না। একই কাজ এবার তিনি করলেন আমেরিকার প্রেসিডেন্টের কাছে। এর প্রচন্ড প্রতিক্রিয়া হয়েছে। এর আগে তার বক্তব্যে কোন প্রতিক্রিয়া দেখায়নি কেউ।
বাংলাদেশে কেবল একজন ‘প্রিয়া সাহা’ আছে- এমনটি মনে করার কোন কারণ নেই। এ রকমের ঘরের শত্রু বিভীষণ অনেক আছে- এমনটি ভাবা অমূলক নয়। এদের মধ্যে স্বাধীনতাযুদ্ধের বিরোধিতাকারীদের নানাভাবে চিহ্নিত করা গেছে। ব্যবস্থাও নেয়া গেছে। এরা নির্মূল না হলেও অনেকটাই প্রদমিত অবস্থায় আছে। এরপরও এদের নিয়ে আশঙ্কা রয়ে গেছে এখনো। এই আশঙ্কার সঙ্গে অধিক ভয়ানক হয়ে দেখা দিয়েছে নানান খোলশের মধ্যে থাকা প্রিয়া সাহারা। এরা নিজেরা ভয়ানক। পাশাপাশি প্রদমিত অপশক্তিকে উস্কানোর জন্য এরা হতে পারে অগ্নিতে বাতাস দেবার মতো বিষয়। যা আশঙ্কা স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে পোড়খাওয়া রাজনীতিক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যে।
প্রিয়া সাহার বক্তব্য প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেছেন, “এটি একটি নিন্দনীয় অপরাধই শুধু নয়, উসকানিমূলক বক্তব্য। যা দেশের অভ্যন্তরে লুকায়িত মতলববাজ সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীকেই আরও শক্তিশালী করতে সহায়তা করবে।”
সকলেরই উচিত ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য গভীরভাবে বিবেচনায় নেয়া। তবে আশার কথা হচ্ছে, প্রিয়া সাহাদের মতো ধান্ধাবাজদের উদ্দেশ্য কখনো সফল হবে না বাংলাদেশে। মনে রাখা প্রয়োজন, বাংলাদেশ যুদ্ধ করে স্বাধীন হয়েছে। আর এখানে সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি রয়েছে সর্বোচ্চ মাত্রায়। এই হচ্ছে প্রধান ভরসার বিষয়।
লেখক: আলম রায়হান, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক