বৃহস্পতিবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:৫০ পূর্বাহ্ন
ক্রাইমসিন ডেক্সঃ
বরিশাল শের-ই বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় ও হাসপাতালে দীর্ঘদিন ধরে সন্ধানী, মেডিসিন ক্লাব, এবং যুব রেড ক্রিসেন্ট নামক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো শিক্ষা ও সমাজ সেবামূলক কাজের জন্য প্রতিষ্ঠিত হলেও আ.লীগ ফ্যাসিবাদী সময়ে তা নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের আঁতুড়ঘর ও রঙ্গমহলে রূপান্তরিত করেছিল।
স্থানীয় এমপি ও মেয়রদের মদদপুষ্টদের দিয়েই ওই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো পরিচালিত হত। এমন অভিযোগ এনে ৬ দাবি নিয়ে বরিশাল শের-ই বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় ও হাসপাতালের শিক্ষার্থীরা সংবাদ সম্মেলন করেছেন। বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) বেলা সাড়ে ১২ টায় বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটি (বিআরইউ) কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন শিক্ষার্থীদের পক্ষে মো. তওহীদুল ইসলাম সিয়াম।
তিনি বলেন, এই ৬ দাবি মেনে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো পরিচালনা করা হলে তাদের প্রকৃত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অনুযায়ী কাজ করতে পারবে, যা শিক্ষার্থীদের জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে। দাবি ছয়টি হল- ১. পূর্বের ছাত্রলীগের মদদপুষ্ট কমিটি বিলুপ্ত করণ।
২.সংবিধানের নীতিমালা অনুযায়ী সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ এবং অরাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের সমন্বয়ে উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করা। ৩. ক্লাবগুলো হবে সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক। এখানে কোনো রাজনৈতিক দলের প্রভাব থাকবে না।
৪ . অনতিবিলম্বে ব্লাড বিক্রির নামে অর্থ বাণিজ্য বন্ধ করতে হবে। ৫. ক্লাব ফান্ডের আয়-ব্যয়ের স্বচ্ছ হিসাব নিশ্চিত করতে হবে। ৬. বিগত দিনে যার অরাজনৈতিক স্বেচ্ছাসেবী ক্লাবগুলোকে রাজনীতিকরণ করেছে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
সম্প্রতি এই ক্লাবগুলোর জন্য একটি নতুন উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করা হয়েছে। কিন্তু আমরা কীভাবে নিশ্চিত হবো যে উপদেষ্টা পরিষদের হাত ধরে আবারও স্বেচ্ছাসেবী ক্লাবগুলো রাজনীতির আতুর ঘরে পরিণত হবে না? পূর্বে বিভিন্ন রাজনৈতিক অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়ন করা হতো ক্লাবের সদস্যদের মাধ্যমে। এমনকি বিগত বরিশাল সিটি নির্বাচনে সেরনিয়াবাত খোকন আবদুল্লাহ’র নির্বাচনী প্রচারণায় দেখা গিয়েছে ক্লাবগুলোর প্রেসিডেন্ট জিএস থেকে শুরু করে অন্যান্য সদস্যদের।
ক্যাম্পাসে স্টুডেন্ট র্যাগিং, অরাজকতা, মাদকব্যবসার সাথে জড়িত ছিল ক্লাবের বিভিন্ন পদে অধিষ্ঠিত দায়িত্বশীলরা।
তাছাড়া, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন হওয়া স্বত্বেও ব্লাড সংগ্রহ ও প্রদানের ক্ষেত্রে বিভিন্ন খাতে রোগীদের থেকে অনৈতিকভাবে ফি নেয়া হচ্ছে। সমাজসেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে আয় ব্যয়ের অডিট হওয়ার কথা থাকলেও ইতঃপূর্বে কখনোই এটি করা হয়নি।
ক্লাবগুলোর প্রেসিডেন্ট জিএস রা এই এই সুযোগে ভল্ট চুরির নামে ক্লাবের টাকা আত্মসাৎ করে আসছেন। এমনকি ক্লাবের পদধারীরা দিনে- রাতে ক্লাবের মধ্যে গার্লফ্রেন্ড সহ অশ্লীল কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হতেন। এমনও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
৫ই আগস্ট ক্যাম্পাসে অবস্থানরত আন্দোলনকারী ও শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া ক্লাবগুলোর বর্তমান ছাত্রলীগের মদদপুষ্ট কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হবে এবং রিফর্ম করা হবে প্রতিটি ক্লাব।
তারই প্রেক্ষিতে আমাদের প্রিন্সিপাল স্যার, হাসপাতালের পূর্ববর্তী পরিচালক, বর্তমান পরিচালক এর সাথে কয়েক দফায় আলোচনা করেছেন, তারা এই ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত জানানো তো দূরের কথা, কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করতেই অস্বীকৃতি প্রকাশ করেন। এরই ফলস্বরূপ ক্লাবগুলো এখনো পর্যন্ত ছাত্রলীগের মদদপুষ্ট কমিটি দিয়েই পরিচালিত হয়ে আসছে এবং যখনই ক্লাব সংস্কারের দাবি উত্থাপন করা হয় তখনই তিন ক্লাবের সাবেক ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাদের পদ টিকিয়ে রাখার জন্য সংস্কার প্রত্যাশী শিক্ষার্থীদের বিভিন্নভাবে হেনস্তা করে।
পরবর্তীতে উভয় পক্ষের মাঝে উত্তেজনা সৃষ্টি হলে হাসপাতাল পরিচালক মহোদয় ক্লাব করিডোর বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়। রোগীদের স্বার্থে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো খুলে দেওয়ার পাশাপাশি ওই ছয়টি দাবিকে গুরুত্ব দিয়ে সংগঠনগুলোর নিয়মনীতি ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা প্রয়োজন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বরিশাল শের-ই বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় ও হাসপাতালের শিক্ষার্থী মো. নাজমুস সাকিব, মো. এনামুল হক ও মো. মশিউর রহমান সহ শিক্ষার্থীবৃন্দ।