বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:০০ পূর্বাহ্ন
বরিশাল নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে জেল খালের বর্জ্য অপসারণ কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। সাম্প্রতিক সময়ে নদীতে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি ও টানা বর্ষণে নগরীর ব্যস্ততম সড়ক ও অলিগলিসহ নিন্মাঞ্চলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। যা বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রিক মিডিয়াসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জলাবদ্ধতার খবর ছড়িয়ে পড়ে। এরই প্রেক্ষিতে নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বরিশাল সিটি কর্পোরেশন। তবে শুধুমাত্র খালগুলোর বর্জ্য অপসারণ কিংবা উচ্ছেদ নয়, এটা রুটিন ওয়ার্ক ও নিয়মিত মনিটরিংয়ের কথা জানিয়েছেন সচেতন মহল। এছাড়া খালগুলো সংস্কারে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো প্রকল্প প্রস্তাবনা দ্রুত অনুমোদনেরও আহবান জানান তারা।
দীর্ঘদিন ধরে বরিশাল নগরীর ভেতর দিয়ে প্রবাহিত ২২টি খাল পুন:খনন বা সংস্কার না হওয়া, খাল দখল করে স্থাপনা নির্মাণ, খালের মধ্যে স্যুয়ারেজ লাইনের সংযোগ ও ময়লা আবর্জনা খালের মধ্যে ফেলার কারণে নগরীর মধ্যদিয়ে বয়ে যাওয়া খালগুলোতে ময়লা স্তুপ জমে পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়।
সূত্রমতে, বিএনপি, আওয়ামী লীগ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে খালগুলো উদ্ধারে নানা পদক্ষেপ নিলেও দখল, দূষণ ও ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে বরিশালের ঐতিহ্যবাহী জেলখাল। ১৯৯১-৯৬ বিএনপির শাসনামলে তৎকালীন সংসদ সদস্য মজিবর রহমান সরোয়ার জেলখাল উদ্ধারে অভিযান চালান। ২০০৭-০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে সেনাবাহিনী ফের উদ্ধার অভিযান ও উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে। ২০০৯ সালে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের তৎকালীন মেয়র প্রয়াত শওকত হোসেন হিরণ এর সময় জরিপকার্য পরিচালনা করে ৩১১ জন দখলদার চিহ্নিত করা হয়। এরপর ২০১৭ সালে ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানের অনুদানে জেলখাল পুন:খননের উদ্যোগ নেন তৎকালীন জেলা প্রশাসক ড. গাজী মো. সাইফুজ্জামান। এর আগে ২০১৬ সালে জেলখাল অপদখলমুক্ত ও পরিচ্ছন্নতা অভিযানের উদ্বোধন করেন তথ্য, যোগাযোগ ও প্রযুক্তিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। পরে ২০১৮ সালেও জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বে ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের আওতায় বরিশাল নগরের ঐতিহ্যবাহী জেলখাল পুনঃসংস্কার কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন তৎকালীন বিভাগীয় কমিশনার রাম চন্দ্র দাশ। সর্বশেষ বরিশাল জেলখাল উদ্ধার, পুনঃসংস্কার, পাড় সংস্কার নিয়ে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ ১৪শ’ কোটি টাকার প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে পাঠান। যদিও এখন পর্যন্ত সেই প্রকল্প আজও আলোর মুখ দেখেনি।
এবারের টানা বর্ষণ আর নদীতে জোয়ারের পানি অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেলেও খালগুলো ভরাট হয়ে যাওয়ায় সেই পানি সহজে নামেনি। নগরীর সড়ক, অলিগলি ও লোকালয়ে পানি ঢুকে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এতে ভোগান্তিতে পড়েন নগরবাসী।
এবার বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে সেপ্টেম্বর মাসে ফের জেল খাল পরিস্কার পরিচ্ছন্ন অভিযান শুরু হয়। এতে নগরবাসীর অনেকেই স্বস্তি প্রকাশ করেছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা বরিশাল জেলা আওয়ামীলীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার হেমায়েত উদ্দিন খান বাদশা বলেন, ২০১৬ সালে নগরীর ২২টি খালে একযোগে উচ্ছেদ ও পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালানো হলেও পুনরায় নগরীর লাকুটিয়া খালসহ অন্যান্য খালের দুই পার্শ্বে ফের দখলদাররা স্থাপনা নির্মাণ শুরু করেছেন।
নদী-খাল বাঁচাও আন্দোলনের সদস্য সচিব কাজী এনায়েত হোসেন জানান, সিটি কর্পোরেশনের এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। তবে পরিচ্ছন্ন কাজ রুটিন ওয়ার্ক হিসেবে করতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, খালের মধ্যে ময়লা আবর্জনার স্তুপ হওয়ায় মশা, মাছি বৃদ্ধি পেয়ে নানান রোগবালাইতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনা থাকে। আর স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে সিটি কর্পোরেশনের দায়বদ্ধতা রয়েছে। এছাড়া খালগুলো যাতে ময়লার ভাগাড়ে পরিণত না হতে পারে এজন্য সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে নিয়মিত মনিটরিং করার কথা বলেন তিনি। অপরদিকে বরিশালের ২২টি খাল পুনঃখনন ও সংস্কারের জন্য যে প্রকল্প প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে তাতে যদি আমলাতান্ত্রিক কোন জটিলতা থাকে তবে তাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে পদক্ষেপ নিবেন বলেও জানান তিনি।