সোমবার, ২১ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:৪৪ পূর্বাহ্ন
বরিশালের কীর্তনখোলা নদীতে চরকাউয়া খেয়া পারাপারের মাঝিদের
কাছে জিম্মি হয়ে পরেছে বরিশাল সদর উপজেলার ৫ ইউনিয়নের বাসিন্দারা।
কর্ম বা ব্যবসা এবং ব্যক্তিগত প্রয়োজনে নদীর পূর্ব পারের ৫ টি ইউনিয়নের বাসিন্দাদের শহরে প্রবেশের অন্যতম পারাপারের স্থান চরকাউয়া খেয়াঘাট। আর সেখানেই মাঝি মাল্লাদের সমিতির নেতৃবৃন্দের সিদ্ধান্তে শতাধিক মাঝিরা যাত্রীদের নিকট থেকে জনপ্রতি বারতি ৫ গুন টাকা আদায় করে থাকে। আইনি জটিলতার কারনে দীর্ঘদিন পর্যন্ত এই ঘাটের ইজারা না হওয়ায় মাঝি মাল্লা সমিতিই অঘোষিত সরকার। তাদের নিয়ম কাননেই টাকা বাড়ে বা কমে।
টেন্ডারবিধিতে থাকা নিয়ম কানুন মেনে ইজারা কালেকশন করতে হয় ইজারাদারদের, সেখানে যাত্রী হয়রানী হওয়ার সুযোগ কম। আবার কেউ হয়রানির শিকার হলে যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট নালিশ দেয়ার সুযোগ ছিলো। কিন্তু এখানে দীর্ঘদিন ধরে মকোনো ইজারা হয়না, ফলে মাঝি মাল্লারাই নিজেদের খামখেয়ালী মত যাত্রী প্রতি অর্থ
নির্ধারন করে আদায় করছে, ২ টাকার ভাড়া ১০ টাকা আদায় করলেও তা প্রতিবাদ বা দেখার
মত কেনো কর্তৃপক্ষ নেই। যাত্রীরা প্রতিবাদ করলে মাঝিমাল্লা সিন্ডিগেটের হাতে লাঞ্চিত হওয়ার ঘটনা বহুবার ঘটেছে। কথিত রয়েছে স্থানীয় সবমহলকে ম্যানেজ করে মাঝিমাল্লারা এই যাত্রীদের উপর খড়গ ঢেলে দিয়েছে।
গতকাল ১০ গুন ভাড়া আদায়ের খবর
প্রকাশিত হলে মাঝি মাল্লা সমিতির সদস্যরা অনেকটা সমালোচনা ও চাপের মুখে পরে।
গতকাল পর্যন্ত ৫ টাকা করে ভাড়া আদায় করার কথা শোনা গেছে। যে পরিমান যাত্রী
পরিবহন করে তাতে ২ টাকা করে ভাড়া আদায় করার পূর্ব সিদ্ধান্ত রয়েছে। কিন্তু মাঝি
মাল্লা কমিটির সদস্যরা যাত্রীদের হয়রানি করে টাকা আদায় করছে। করোনা কালীন সময়ে
প্রতি নৌকায় ১০ জন করে যাত্রী পরিবহন করে ৫ টাকা করে ৫০ টাকা আদায় করার সিদ্ধান্ত
ছিলো। কিন্তু মাঝিমাল্লারা সেই স্বাস্থ্যবিধি না মেনে প্রতি নৌকায় ২০/২৫ জনের
বেশি যাত্রী পারাপার করছে। এবং জনপ্রতি ৫ টাকা করে আদায় করছে। মাঝি মাল্লা
সমিতির এক সদস্য জানান, ১০ গুন ভাড়া আদায়ের খবর প্রকাশিত হলে সাদা পোশাকে ১
জন প্রশাসনের সদস্য গিয়েছিলেন, তাকেও তারা বুঝিয়ে ম্যানেজ করেছেন বলে প্রকাশ
করেছেন। খোজ নিয়ে জানা যায়, চরকাউয়া মাঝি মাল্লা সমিতি লিমিটেড বিডি নং ৯১২।
এই সমিতির সভাপতি পদে রয়েছেন মোঃ ওমর আলী, সাধারন সম্পাদক পদে মোঃ সাজ্জাদ, সহ-সভাপতি চান মিয়া, কোষাধ্যক্ষ মোঃ বাদল বেপারী, কার্যকরী সদস্য মোঃ মজিদ, মোঃ হিরন, মোঃ সেলিম, মোঃ হাবিব মোল্লা ও আবুল হোসেন।
এই সমিতিতে ১০৫ টি কোঠা রয়েছে, কোঠার অনুকুলের বাইরে কারো খেয়া পারাপারের সুযোগ নেই।
নিজেদের মনগড়া কোঠার বিপরীতে লক্ষ লক্ষ টাকা সমিতির নেতাদেরকে দিয়ে কোঠা পেতে
হয়েছে বলে জানা গেছে। কোঠা বিক্রির টাকা কোথায় গিয়েছে তারও হদিস নেই।
নামে মাঝি মাল্লা সমিতি হলেও খেয়াঘাট দিয়ে হাজার হাজার লোকের যাতায়াতে
মোটা অংকের টাকা যাত্রী হয়রানি করে আদায় করছেন তারা। নিজেদেরকে অঘোষিত
সরকার মনে করে ২ টাকার ভাড়া ৫ টাকা ১০ টাকা আদায় করে মহা আরাম আয়াশে রয়েছেন
কয়েকজন নেতা। দিনের বেলায় খেয়া পারাপারের টাকা একভাবে আদায় করলেও রাতের বেলায়
খেয়াঘাটে চলে ভিন্ন নিয়ম। মোটর সাইকেল নিয়ে যাত্রী অথবা ঢাকা থেকে ভোলাগামী যাত্রীরা এই ঘাট দিয়ে পারাপার হতে গেলে নিজস্ব কন্ট্রাকে ইচ্ছেমত যাত্রীদের নিকট থেকে টাকা আদায় করা হচ্ছে। এর থেকে পরিত্রান পাচ্ছেন না রাত্রে যাতায়াতকারী পূর্বাঞ্চলের ৫ ইউনিয়নের মানুষও। ইচ্ছেমত টাকা চেয়ে না পেলে কোনো মাঝি ঐ
যাত্রীদেরকে পারাপার করতে চাননা। ঘাটে নোঙ্গর করা ২৫ টা ট্রলার থাকলেও শতেকের উপরে টাকা না হলে যাত্রী নিয়ে ঘাট ছাড়েন না মাঝিরা। এই হয়রানি থেকে যাত্রীদেরকে পরিত্রাণ দেয়ার জন্য কেউ এগিয়ে আসার খবর মেলেনি। এ বিষয়টা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দৃষ্টি আকর্ষন করেছেন চরকাউয়া খেয়াঘাটে মাঝিমাল্লাদের নিকট বারতি ভাড়ায় জিম্মি হওয়া একাধিক মানুষ।