রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:১৪ পূর্বাহ্ন
আমার বাবাকে গ্রামে আমাদের পারিবারিক কবরস্থানে তার মায়ের পাশেই চিরনিদ্রায় রেখে আসলাম। বটবৃক্ষ হয়ে আমার পুরো পরিবারের উপর ছায়া হয়ে ছিলেন সারা জীবন। চিরদিনের জন্য সেই ছায়া আমাদের ছেড়ে চলে গেলো। কিভাবে সবকিছু আবার স্বাভাবিক হবে আমি জানিনা!
আমার দেখা সবচেয়ে বিশাল মনোবল ছিল আমার বাবার।তার রোগী আর হাসপাতাল ছাড়া অন্য সব কিছু তার কাছে মূল্যহীন ছিল। এমনকি নিজের শরীরটাও! অনেকদিন ধরেই প্রচন্ড দূর্বল থাকলেও একটাবারের জন্য ও নিজের কথা ভাবেননি! হাসপাতাল ছেড়ে একটা সেকেন্ড এর জন্য ও বাসায় আসেন নাই।
এই মহামারীর সময় অসুস্থ হবার পরেও ফ্রন্টলাইনে থেকে যেভাবে সব রোগীর চিকিৎসা দিয়ে গেছেন সিংগেল হ্যান্ডেডলি, অন্য কেউ হয়তো চিন্তাও করতে পারতো না! লোকটা অসুস্থ হয়ে পরার আগের দিন ও ভোর ৫ টা পর্যন্ত ওটি করছেন। রোগীর সেবা করতে করতে নিজের শরীরটাই তাকে ধোকা দিয়ে গেলো।
যাই হোক এই দুইদিনে অনেক অনেক মানুষ অনেক সাহায্য করেছেন বিভিন্নভাবে। কাউকেই আমি ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করতে চাইনা। যারা চরম বিপদের সময় পাশে ছিলেন, সবার কাছে আমি আর আমার পরিবার চির কৃতজ্ঞ।
মানুষটা চলে গেলেও তার অসংখ্য গুনগ্রাহী রেখে গেছেন। এতো এতো মানুষ ফোন+ফেবু এ খোজ নিয়েছেন, শান্তনা দিয়ে পাশে থেকেছেন, সবার সাথে হয়তো ওভাবে যোগাযোগ ও রাখতে পারিনি, সবাইকে আমার প্রানের অন্তঃস্থল থেকে ধন্যবাদ। আপনাদের সবার দোয়ায় আমার বাবার যেন জান্নাতুল ফেরদৌস নসিব হয় এতটুকুই আমার চাওয়া।
কিন্তু, আমি আর আমার পরিবার ভেঙে পরতে চাইনা। যে স্বপ্ন নিয়ে, লক্ষ্য নিয়ে আমার বাবা জীবন দিয়ে গেলেন, আমি সেই লক্ষ্যে অটুট থাকতে চাই। আমি গর্বিত যে আমি এক শহীদের সন্তান! সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন। আমার পরিবারের জন্য দোয়া করবেন। আমার বাবা সারাজীবন যেভাবে সাধারন মানুষের পাশে থেকে শেষ পর্যন্ত মানুষের সেবা করে গেছেন, আমিও যেন সেভাবেই মানুষের পাশে দাড়াতে পারি, সেবা করতে পারি, এতোটুকু দোয়া করবেন আমার জন্য।
সবাইকে ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন, আমার বাবার জন্য দোয়া করবেন।
সদ্য প্রয়াত ডা. আনোয়ার হোসেনের পুত্র রাহাত আনোয়ারের টাইমলাইন থেকে