মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০:২১ অপরাহ্ন

সর্বশেষ সংবাদ :
বরিশালে মেয়রের উদ্যাগে পথচারিদের মাঝে বিশুদ্ধ খাবার পানি ও স্যালাইন বিতরণ গলাচিপায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে এক শিশুর মৃত্যু গলাচিপায় স্ত্রীর স্বীকৃতি দাবিতে স্বামী ‘র বাড়িতে অনশন বরিশালে রাতের আঁধারে ড্রেনের লোহার ঢাকনা চুরি সাভারে এসি বিস্ফোরণে আহত ৭ বরিশালে দুর্গাসাগরে পুণ্যস্নানে নেমে কলেজছাত্রের মৃত্যু শ্বশুরবাড়ি কলাপাড়ায় আসার পথে মোটরসাইকেল দূর্ঘটনায় জামাতা নিহত বরিশালে চৌমাথা লেকে পোনা মাছ অবমুক্ত করলেন ইজারাদার বাপ্পি কলাপাড়ায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড, ভ্যাপসা গরমে দিশেহারা নিম্ন আয়ের মানুষ বরিশালের বাবুগঞ্জের দূর্গা সাগরে অষ্টমী পুণ্যস্নান অনুষ্ঠিত বরিশাল বিএনপি দলীয় কার্যলয়ে কেন্দ্রীয় শ্রমিকদল নেতৃবৃন্দের জন্য দোয়া-মোনাজাত ও স্মরন সভা অনুষ্ঠিত বরিশাল সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন : চেয়ারম্যান পদে এসএম জাকির হোসেনের মনোনয়নপত্র দাখিল বরিশালে জমে উঠেছে তিনদিন ব্যাপি উদীচীর বৈশাখী মেলা পটুয়াখালীতে ডিবি পুলিশের অভিযানে ৫১ পিচ ইয়াবাসহ ০২ জন মাদক কারবারী গ্রেফতার ঈদ ও নতুন বছরকে বরনে কুয়াকাটায় পর্যটকদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তায় আইনশৃংখলা রক্ষাকারীরা
মোঘল আমলের স্থাপত্য বরিশালের মিয়া বাড়ি জামে মসজিদ

মোঘল আমলের স্থাপত্য বরিশালের মিয়া বাড়ি জামে মসজিদ

Sharing is caring!

মোঘল শাসনামলের ঐতিহ্যের ধারক বরিশালের মিয়াবাড়ি জামে মসজিদ ।

বরিশালের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অন্যতম ধারক মোগল শাসনামলে নির্মিত মিয়া বাড়ি জামে মসজিদ। সদর উপজেলার রায়পাশা-কড়াপুর ইউনিয়নের কড়াপুর গ্রামে মোগল সম্রাট বাবরের সময়কালে মসজিদটি নির্মাণ করা হয়। স্থানীয় অনেকের মতে তারও আগে এ মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে। নির্মাণশৈলী ও এর উপকরণের কারণেই এমন ধারণা স্থানীয়দের।

জানা যায়, মাহমুদ হায়াৎ মিয়া ও জাহিদ হায়াৎ মিয়া নামের দুই ভাই ইসলাম প্রচারের জন্য পারস্য থেকে এ দেশে আসেন। তারাই বরিশাল শহর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে ৬৬ একর জমির উপর দৃষ্টিনন্দন এ মসজিদটি নির্মাণ করেন। কথিত আছে তাজমহল নির্মাণকারী কারিগরদের দিয়ে মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছে।

প্রতিষ্ঠাতারা প্রায় দুই একর জমির মাটি কেটে চাড়া ইট তৈরি করে মসজিদটি নির্মাণ করলেও নিজেদের বসবাসের জন্য করেননি পাকা কোনো ইমারত। শুধুমাত্র বাড়ির মহিলাদের পর্দার কথা চিন্তা করে একই ইট দিয়ে পুরু দেওয়াল নির্মাণ করেছেন। অনেকে বলেন, এটি ব্রিটিশ আমলের সূচনালগ্নে নির্মিত একটি মসজিদ। এ মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা মাহমুদ হায়াৎ ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার কারণে প্রিন্স অফ ওয়েলস দ্বীপে নির্বাসিত হন এবং তার বুজুর্গ উমেদপুরের জমিদারিও কেড়ে নেওয়া হয়। দীর্ঘ ষোলো বছর পর দেশে ফিরে তিনি দুটি দীঘি এবং দোতলা এ মসজিদটি নির্মাণ করেন। স্থাপত্যরীতিতে এতে পুরান ঢাকায় অবস্থিত শায়েস্তা খান নির্মিত কারতলব খান মসজিদের অনুকরণ দেখা যায়। মসজিদের আশপাশে ছোট বড় আরও ২৩টি পুকুর রয়েছে। ৪০ ফুট চওড়া ও ৭০ ফুট লম্বা মসজিদটি নির্মাণে চুন, সুরকি, মাসকালাই ও চিটাগুড় পচিয়ে নির্মাণসামগ্রী তৈরি করা হয়। কোনো রংয়ের ব্যবহার ছাড়াই লাল রংয়ের এ মসজিদটিতে ছোট বড় তিনটি গম্ভুজ ও ২০টি মিনার রয়েছে। ভেতরে ও বাইরে দৃষ্টিনন্দন কারুকার্য খচিত। এর অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছাদ নির্মাণে কোনো রডের ব্যবহার করা হয়নি। ইট ও সুরকির ছাদটির পুরত্ব প্রায় এক ফুট। আর নিচ তলার দেওয়াল ৪০ ইঞ্চি ও দোতলার দেওয়াল ৩০ ইঞ্চি পুরো। দ্বিতল মসজিদটির নিচতলায় ৯টি বিভিন্ন আকৃতির কক্ষ রয়েছে। যা এক সময় স্কুল ও পরবর্তীতে মাদ্রাসা হিসেবে ব্যবহৃত হতো। নামাজের ব্যবস্থা রাখা হয় শুধুমাত্র দোতলায়। আর সেখানে উঠতে সামনে থেকে সরাসরি চওড়া একটি সিঁড়ি নির্মাণ করা হয়। একই আকৃতির দুটি জানালা ও তিনটি দরজাবিশিষ্ট মসজিদটির ভেতরে তিন কাতারসহ ছাদের অংশে ৫ কাতার মিলিয়ে প্রায় তিনশত মুসলিস্নর নামাজের ব্যবস্থা রয়েছে। আর দোতলায় উঠার সিঁড়ির নিচেই রয়েছে মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা দুই ভাই মাহমুদ হায়াৎ মিয়া ও জাহিদ হায়াৎ মিয়ার সমাধি।

বংশপরম্পরায় মসজিদটি প্রতিষ্ঠাতাদের উত্তরাধিকাররা দেখভাল করলেও ১৯৮১ সালের পর এরশাদ সরকারের শাসনামলে এটি প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অন্তর্ভুক্ত হয়। পরবর্তীতে আদালতে মামলা করে আবারো পরিচালনার ভার নেন মিয়া বংশের উত্তরাধিকাররা।

বর্তমানে মসজিদের পরিচালনাকারীদের মধ্যে অন্যতম সদস্য প্রতিষ্ঠাতাদের ১৩তম বংশধর মিজানুর রহমান মিয়া জানান, প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ মসজিদ পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নেওয়ার পর এটি তার নির্মাণশৈলীর ঐতিহ্য হারাতে বসে। তারা সংস্কারের নামে মসজিদটির কারুকার্যের মধ্যে থাকা বিশেষ পাথরগুলো অপসারণসহ নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করে। তাই মামলার মাধ্যমে আবারো রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পান মিয়া বংশ। পুনরায় দায়িত্ব পেয়ে তার ভাই আমিনুর রহমান ফিরোজ প্রায় ২৯ লাখ টাকা ব্যয়ে মসজিদটির সংস্কার কাজ করেন। সংস্কারে সময় লাগে ৪ বছর। কেননা আগের মতোই বিশেষ উপায়ে চুন, সুরকি, চিটাগুড় ও মাসকালাই ডাল পচিয়ে এর পুনসংস্কার সামগ্রী তৈরি করা হয়।

Print Friendly, PDF & Email

নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন




© All rights reserved © crimeseen24.com-2017
Design By MrHostBD