শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ১০:৫৪ অপরাহ্ন

সর্বশেষ সংবাদ :
গৌরনদীতে চোর সন্ধেহে গনপিটুনিতে আহত যুবকের দুইদিন পর মৃত্যু কুয়াকাটায় আগুনে পোঁড়া বন পরিদর্শন কলাপাড়ায় পরীক্ষা কেন্দ্রে নকলে সহায়তার দায়ে দুই শিক্ষককে অব্যাহতি সড়ক সংস্কারের দাবীতে এলাকাবাসীর মানববন্ধন বিক্ষোভ মিছিল বাড়িতে ছাগল ঢোকাকে কেন্দ্র করে দুই প্রতিবেশীর সংঘর্ষ, আহত-৪ বরিশালে ৬ দফা দাবিতে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ বরিশালের জেলা সাব রেজিস্ট্রি অফিসে উৎস করের নির্ধারিত ফি কম নিয়ে দলিল রেজিষ্ট্রেশন করার প্রমান পেয়েছে দুদক কলাপাড়ায় কৃষকদের অবস্থান ধর্মঘট ও স্মারকলিপি প্রদান কলাপাড়ায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে বিএনপি কার্যালয়সহ ৫টি দোকান ভস্মীভূত কলাপাড়ায় ইউনিয়ন বিএনপির বর্ষবরণ অনুষ্ঠান বাউফলে সড়ক সংস্কারের দাবিতে স্থানীয়দের মানববন্ধন বছরের প্রথম দিনেই বিচ্ছিন্ন দীপ অঞ্চলে সহকারী পুলিশ সুপার বাউফলে গাঁজাসহ ২৫ লাখ টাকা ও স্বর্নালংকার উদ্ধার নববর্ষে দেশীয় খেলাধুলা এবং পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠিত কলাপাড়ায় মামলায় স্বাক্ষী হওয়ায় পা ভেঙ্গে দিলেন বিবাদীরা
মধ্যযুগের কবি, আধ্যাত্মিক সাধক

মধ্যযুগের কবি, আধ্যাত্মিক সাধক

Sharing is caring!

এলাকার বর্তমান প্রজন্মের কাছে তিনি পীর ও সাধক হিসেবে বেশি পরিচিত। মধ্যযুগের সাক্ষী এই সাধক-কবির সাধকসত্তা নিয়ে আছে নানা কিংবদন্তি। কিন্তু তার চার-চারটি কাব্যগ্রন্থের কথা খুব কমই জানে মানুষ। বাড়িতে সংরক্ষিত বইগুলোর বেশির ভাগই নিয়ে গেছেন দর্শনার্থীরা। এখন যেটুকু অবশিষ্ট আছে, তা যতেœ তুলে রেখেছেন তার বংশধররা।

রংপুর জেলার লালদিঘী বাজারের বিপরীতে গ্রামের ভেতর দিয়ে পাকা সড়ক। এই সড়ক ধরে সবুজে ঘেরা শ্যামল বনানীর মধ্য দিয়ে ১২ কিলোমিটার গেলে চেত্রকোল ইউনিয়নের একটি গ্রাম ঝাড়বিশিলা। আর সেখানেই চিরনিদ্রায় শায়িত কবি কাজী হেয়াত মামুদ।

মধ্যযুগে গোড়াপত্তন হওয়া কাজী বাড়িটি আজও দাঁড়িয়ে আছে। ৭২ শতক জায়গার বিশাল বাড়িতে এখন আর কবি নেই। নেই তার সাক্ষ্য বহনকারী তেমন কোনো স্মৃতিচিহ্ন। কবির বংশধর বর্তমান বাসিন্দাদের সঙ্গে আলাপচারিতার পর তারা দেখালেন কবির একমাত্র স্মৃতিচিহ্নটি। একটি খাট। এই খাটেই ঘুমাতেন কবি। ২০০ বছরের বেশি পুরনো খাটটি কবির স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে এখনো রেখে দিয়েছেন বংশধররা। আর আছে কজবির সমাধি। সে কথায় পরে আসছি।

হেয়াত মামুদের বংশধর কাজী আব্দুল মান্নান। দুই স্ত্রী, দুই সন্তান আর পাঁচ নাতনি নিয়ে তার সংসার। কবি প্রয়াত হওয়ার পর এ বংশে আর কোনো কবির উন্মেষ ঘটেনি। বর্তমানে বংশের সবচেয়ে শিক্ষিত সদস্য সাধনা ইয়াসমিন পীরগঞ্জ মহিলা কলেজে ডিগ্রির ছাত্রী।

ঢাকা টাইমসকে সাধনা বলেন, ‘কবির বংশধর হিসেবে আমরা ওভাবে কোনো সম্মান পাই না। কারণ সরকারের পক্ষ থেকেও কবির বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয় না। কবির কিছু কবিতা পাঠ্যবইয়ে সংযুক্ত করা উচিত, এতে সবাই জানতে পারবে মধ্যযুগের কবি হেয়াত মামুদ সম্পর্কে।’

বাড়িতে পাওয়া গেল কবির লেখা চারটি গ্রন্থের কিছু অংশ। সাধনা জানান, বিভিন্ন সময়ে কবি সম্পর্কে জানতে এসে অনেকে অনেক বই নিয়ে গেছেন। সর্বশেষ যা আছে, তা আর কাউকে দিতে রাজি নন তারা।

১৭২৩ সালে ‘জঙ্গনামা’, ১৭৩২ সালে ‘সর্বভেদনামা’, ১৭৫৩ সালে ‘হিতজ্ঞানবাণী’ ও ১৭৫৮ সালে ‘আম্বিয়াবাণী’ নামে চারটি গ্রন্থ কবি রচনা করেন। গ্রন্থগুলো প্রকাশিত হলেও এর প্রচার এখনো নামমাত্র।

কবির বাড়ি আর তার নামে স্থাপিত মাদ্রাসার মাঝে একটি সমাধিক্ষেত্র। সেখানেই শুয়ে আছেন মধ্যযুগে বাংলা সাহিত্যের সাধক কাজী হেয়াত মামুদ। কবির কবরটি এখন মাজার হিসেবে পরিচিত। পাকা দেয়াল করা কবরের সামনে ‘কবি হেয়াত মামুদের মাজার’ এমন একটি নামফলক লাগানো আছে। কবির সম্পর্কে জানতে বিভিন্ন সময় এমন অনেকেই এখানে আসেন বলে জানান কবির বংশধর ও ঝাড়বিশলা গ্রামের বাসিন্দারা।

১৬৯৩ সালে এই গ্রামেই জন্ম নেন সাধক-কবি হেয়াত মামুদ। আনুমানিক ১৭৬০ সালে এখানেই তার মৃত্যু হয়। মধ্যযুগের এই কবি তার কাব্যসাধনার মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যে রেখে গেছেন অসামান্য অবদান। ২০০ বছরের বেশি সময় পার হয়ে গেলেও তার কবিপরিচয় বহন করে আসছে তার সমাধি। আবার বেঁচে আছেন তার সৃষ্টির মাধ্যমেও।

কবির বাবা শাহ কবীর ছিলেন ঘোড়াঘাট সরকারের দেওয়ান এবং তিনি নিজে ছিলেন ওই সরকারের কাজি। জানা যায়, বর্তমান ভারতের দিনাজপুর, বাংলাদেশের রংপুর, রাজশাহী, বগুড়া, ময়মনসিংহ, কুড়িগ্রাম জেলা জুড়ে তার রাজত্ব বিস্তৃৃত ছিল। কাজি হওয়ার পাশাপাশি কবিপ্রতিভার বেগ ভাবোদয় ছিল হেয়াত মাহমুদের মধ্যে।

কবির বাড়ি থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে পীরগঞ্জ কলেজ। স্থানীয় শিক্ষার্থীদের কাছে কবি কাজী হেয়াত মামুদ সম্পর্কে জানতে চাইলে অধিকাংশ শিক্ষার্থী তাকে চিনতে পারেনি।

পীরগঞ্জ মহিলা কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থী শ্যামলি ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘হেয়াত মামুদ কবি তা জানতাম না। স্থানীয়ভাবে সবাই তাকে পীর বা সাধক হিসেবে চেনে। আমরাও ছোটবেলা থেকে তা-ই জেনে আসছি।’

এই শিক্ষার্থীর দাবি, কবি-লেখকদের তারা বেশির ভাগ সময় পাঠ্যবইয়ের মাধ্যমে চিনে থাকেন। কিন্তু কবি হেয়াত মামুদের কোনো লেখা তারা পড়েননি এমনকি দেখেনওনি।

একই কলেজের শিক্ষার্থী রাজিয়া সুলতানা রেজভীন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমাদের এখানে এমন কোনো কবি আছে তা আমার জানা ছিল না। এমনকি তার নামও কখনো শুনিনি। তার কবিতা কখনো পড়িনি।’

শিক্ষার্থীদের কাছে অপরিচিত হলেও রংপুরের বিভিন্ন স্থানে হেয়াত মামুদ পরিচিত ভিন্নভাবে। তাকে  যারা চেনেন, তাদের কাছে কবির পরিচয় সাধক বা পীর হিসেবে। তাদের কাছে কিংবদন্তি আছে, হেয়াত মামুদ ছিলেন আধ্যাত্মিক ক্ষমতাসম্পন্ন পীর।

কথিত আছে, একদিন কবির পুত্রবধূ তার ছেলেকে কবির কাছে রেখে পুকুরঘাটে যান। এ সময় কবি বাড়ির পেছনের মসজিদে নামাজ আদায় করতে যান। পুত্রবধূ ফিরে এসে ছেলের খোঁজ করলে কবি জানান, মাগরিবের সময় তাকে নিয়ে আসবেন। এরপর মাগরিবের নামাজের পর কবি তার নাতনিকে নিয়ে মসজিদ থেকে বেরিয়ে আসেন। বলা হয়, কবি তার বাড়ির পেছনের মসজিদে নামাজ পড়তে ঢুকলেও তিনি নামাজ আদায় করতেন কাবা শরিফে। ওই দিন আসরের নামাজে গিয়ে নাতনিকে কাবা শরিফে ভুলে রেখে আসেন, পরে মাগরিবের সময় নামাজ আদায় শেষে তাকে নিয়ে ফেরেন।

বিষয়টি কথিত হলেও বিশ্বাস করেন এ অঞ্চলে এমন মানুষের সংখ্যা অনেক। পুরো রংপুর অঞ্চলে কবির নামে রয়েছে শুধু একটি স্থাপনা। তার বাড়ির পাশেই কবির নামে একটি মাদ্রাসা। মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল এম এ সালেক ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘হেয়াত মামুদ কবি ছিলেন। তবে আধ্যাত্মিক কবি। তার বিভিন্ন লেখায় তার প্রমাণ পাওয়া যায়।’

গত কুড়ি বছর ধরে এই মাদ্রাসার দায়িত্বে আছেন এম এ সালেক। জানান, করির স্মরণে প্রতি বছর ১৭ফেব্রুয়ারি উরস পালন করা হয়। ২০১২ সালে জেলা প্রশাসক থেকে ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হলেও এখন আর তা দেয়া হয় না বলে তিনি জানান।  

নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন




© All rights reserved © crimeseen24.com-2024
Design By MrHostBD