শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৩৮ পূর্বাহ্ন
বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবসের এ বছরের প্রতিপদ্য হলোঃ-‘মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়ন ও আত্মহত্যা প্রতিরোধ’। কিন্তু বরিশাল বিভাগ জুড়ে মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়নের জন্য রয়েছে মাত্র একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। আর এ অঞ্চলে মানসিক রোগী সংখ্যা যেমনি বেশী তেমনি আত্মহত্যাকারীর সংখ্যাও অনেক বেশী।
এ বছর বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবসের প্রতিপাদ্য ‘আত্মহত্যা প্রতিরোধ’ এর কথা বলা হলেও বিভিন্ন থানা পুলিশের তথ্য অনুযায়ী ২০১৮ সালের ১২ মাসে ৮৯ জন আত্মহত্যা করলেও ২০১৯ সালের মাত্র ৯ মাসেই আত্মহত্যা করেছেন ১১০ জন। ফলে আত্মহত্যা প্রতিরোধের চেয়ে আত্মহত্যা বেড়েই চলছে।
শুধুমাত্র শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজের বরিশাল ফরেনসিক বিভাগে প্রেরিত বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন থানা পুলিশের লাশের মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে প্রাথমিক সুরাতহাল রিপোর্ট উল্লেখ করা হয়েছে আত্মহত্যাকারীর অর্ধেকরও বেশী মানসিক রোগী কিংবা বিভিন্ন কারণে মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পরে বিষ পান অথবা গলায় ফাঁস দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ছিলেন।
ফরেনসিক বিভাগ গেল ২১ মাসে ৫শত অধিক লাশের ময়না তদন্ত করেছে। এর মধ্যে আত্মহত্যা করেছে এমন ১৯৯ জনের মধ্যে বরিশাল জেলায় ছিলো ১২৯টি, পটুয়াখালী জেলার ১৯টি, ঝালকাঠীর ১৭টি, পিরোজপুর ও বরগুনা ১৪টি করে এবং ভোলা জেলার ৬টি লাশ।
পুলিশের সুরাতহাল রিপোর্টে ১৯৯ জন আত্মহত্যাকারীর আত্মহত্যার কারণ অনুসন্ধান করে দেখা গেছে, ৮৩ জন আত্মহত্যা করেন স্বামী বা স্ত্রী কিংবা অন্যকারো সাথে ঝগড়া করে। প্রেমিকা বা প্রেমিকের অন্যত্র বিয়ে হওয়া কিংবা পরিবারের ঠিক করা পাত্র বা পাত্রীর সাথে বিয়ে করতে রাজি না থাকা ও প্রেমকে অস্বীকার করার কারণে আত্মহত্যা করেণ ৩৩ জন। পরিবারে পিতা-মাতা বা ভাই-বোন কিংবা আত্মীয়-স্বজনদের কাছে কোন কিছুর আবদার বা দাবি করে তা পূরণ না হওয়ার কারণে আত্মহত্যা করে ৪২ জন। ১১ জন আত্মহত্যা করে সমাজের মানুষের সামনে আপমানিত হওয়া বা লাঞ্ছিত হওয়া কিংবা লজ্জা পাওয়ার কারণে। এছাড়া অজ্ঞাত কারণে আত্মহত্যা করেন ৩০ জন।
ওই ২১ মাসে ১০ অবুঝ শিশু বিষপান করে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছিল। ১৯৯ জন আত্মহত্যাকারীর মধ্যে ১২১ জন নারী, তাদের বয়স ছিল ১৫ থেকে ৩৫ বছর পর্যন্ত।
এদিকে বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবনে এ বছরের প্রতিপদ্য ‘মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়ন’ এর কথা বলা হলেও বরিশাল অঞ্চলের রয়েছেন মাত্র একজন মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। সহযোগী অধ্যাপক ডাঃ তপন কুমর সাহা বরিশাল বিভাগের একমাত্র চিকিৎসক। ফলে দীর্ঘ এক যুগ ধরে বরিশাল বিভাগে এ রোগের চিকিৎসক সংকটে মানসিক রোগীদের নিয়ে বিপাকে পড়েছেন স্বজনরা। সেখানে কি ভাবে এ অঞ্চলে ‘মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়ন’ ঘটানো হবে তা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে।
বরিশাল বিভাগে দারিদ্রতার, আভাব, অর্থনৌতিক সমস্যা, স্বামী-স্ত্রী’র ঝগড়া বেশী হওয়া, প্রেমিকা বা প্রেমিকের অন্যত্র বিয়ে হওয়া কিংবা পরিবারে ঠিক করা পাত্র বা পাত্রির সাথে বিয়ে করতে রাজি না থাকা, সমাজের মানুষের সামনে আপমানিত হওয়া বা লাঞ্চিত হওয়া কিংবা লজ্জা অভাব বা বেকারত্বের মানসিক চাপ কিংবা কোন কাজে ব্যর্থতার কারনে মানসিক রোগে আক্রান্ত বেশী হচ্ছে বলে মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ ওই চিকিৎসকের (ডাঃ তপন কুমর সাহা) দাবী।
সহযোগী অধ্যাপক ডাঃ তপন কুমার সাহা আরো জানান, মানসিক রোগীদের চিকিৎসার জন্য পর্যাপ্ত চিকিৎসক না থাকায় এ রোগীর সংখ্যা দিনে দিনে বড়েই চলচ্ছে। কেননা একজন মানসিক রোগী দেখে সুস্থ্য স্বাভাবিক মানুষও নিজেকে যে কোন সময় বা যে কোন মুহুত্বে মানসিক রোগী ভাবতে শিখে। পাশাপাশি সেও মানষিক রোগীর ন্যায়ে আচারণ করতে শুরু করে দেয়। বরিশালে মানসিক রোগীর বৃদ্ধির জন্য সামাজিক, বংশগত ও নৈতিক অবক্ষয়ের অন্যতম কারন হিসেবে দাবী করেছেন বিশেষজ্ঞ এ চিকিৎসক।
সুত্র: হ্যালোবরিশাল