মঙ্গলবার, ১২ অগাস্ট ২০২৫, ০৪:২১ অপরাহ্ন
এস এল টি তুহিন: প্রেম করে বিয়ে, ১৫ বছরের সংসার দুটি ফুটফুটে শিশু সন্তান কিন্তু তারপরও সুখ জুটেনি আসমান বেগমের কপালে। ১৫ বছরের সংসারে স্বাশুড়ির অত্যাচার,স্বামীর যৌতুক চাহিদায় তস্কট থাকতে হত। কিন্তু যার হাত ধরে নতুন সংসারের সপ্ন দেখেছিল আসমা সেই স্বামী হাচান এখন পরকিয়ায় মক্ত। স্বাশুরি তার পুত্রবধুকে ঘর থেকে নামিয়ে দিতে অত্যাচার এর মাত্রা কয়েক গুন এ বাড়িয়ে দিল। তাতেও কাজ না হওয়ায় এবার পুত্রবধু আসমাকে আসামী করে আদালতে মামলা করা হয়।
অসহায় আসমার সংসার এবং মামলা থেকে রক্ষা পাওয়া জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরছে। বরিশাল নগরীর বাঘিয়া ইছাকাঠি কলোনির সাবনে তার বাসায় বসে প্রতিবেদকে জানায় তার মনের কষ্টের কথা গুলো এ সময় তিনি বলেন, তার বাবার নাম আশরাফ আলী হাওলাদার, ৩ বোন ও ৩ বোন ভাইয়ের সংসারে আসমা ছিল এক প্রান্ত এক কিশোরী। ফিরে দেখা ২০০৭ সালে একই এলাকার বাসিন্দা মৃত ফজলে হাওলাদারের এর ছেলে মোঃ হাসানের সাথে প্রেম শুধু হয়। ভালবাসা শুরু কিছু দিনের মধোই একই বছর তাদের বিবাহ হয়।
তবে এই বিবাহ হাসানের মা কখনোই মেনে নেয়নি শুরু হয় বিভিন্ন ভাবে মানসিক অত্যাচার। তারপরও সংসারে টিকে থাকতে হলে মুখ বুজে সব সহ্য করে আসমা। যখন দেখে শ্বশুরীর অত্যাচার ক্রমেই বাড়ে চলছে তখনেই এক পর্যায়ে তারা ভিন্ন ঘর ভাড়া করে থাকতে শুরু করে। বিবাহ জীবনের কিছু দিন পড়ে সংসারে আসে দুটি পুত্র সন্তান আশিফ ও আশিক।
এ দিকে ভবঘুরে হাচানের আয়-রোজগারের আসমার বাবাকে যৌতুকের জন্য চাপ দিতে থাকে। একপর্যায়ে আসমার বাবা কিছু টাকা দিলেও তা দিয়ে একটি মুদির দোকান দেয় হাসান। এ ভাবেই চলছিল তাদের সংসার। কিন্তু হঠাৎ করেই আসমার শাশুড়ির সাথে তার ছেলে হাসানও আসমার সাথে দুর্ব্যবহার এমন কী মারধরও শুরু করে। এমন অত্যাচার প্রতিদিন চলার পরেও কিছু দিন পড়ে এক পর্যায়ে আসমা টের পায় তার স্বামী অন্য এক মেয়ের সাথে প্রেমের সম্পর্কো গড়ে তুলছে। ওই মেয়েকে বিবাহ করার জন্য আসমাকে এখন ঘর থেকে তাড়াতে চায়।
আসমা বলেন, দুই সন্তানের মুখের দিকে চেয়ে
সব অত্যাচার সহ্য করে আসছি। কিন্তু বেপরোয়া শাশুড়ির পরামর্শে হাচান আমাকে তালাক দেওয়ার উদ্যেগ নেয়। আমার বাবার বাড়িতে একটি তালাক নোটিশ পাঠায়। সর্বশেষ আমাকে ঘর থেকে তাড়াতে আমার বিরুদ্ধে একটি মিথ্যা মামলা দায়ের করে। আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করে আমার স্বামী হাচান তাকেই প্রধান সাক্ষী হিসাবে রাখা হয়।
আসমা আরো বলেন, আমি আর কিছু চাইনা আমি শুধু আমার দুটি সন্তানকে নিয়ে
স্বামীর অধিকার চাই। আমার স্বামীকে নিয়ে সুখে শান্তিতে বসবাস করতে চাই । আমি এখন একটি ছোট দোকান চালাই দিন শেষ অল্প বিক্রয় হয় তাতে যে টাকা হয় তা দিয়ে। দুইটি সন্তানকে নিয়ে খুব কষ্টে দিন কাটে ওদের মাদ্রাসায় লেখা পড়া সহ খাওয়া দাওয়া বিভিন্ন খরচের বহন করার সমার্থ্য আমার নেই । আমার স্বামী এখন কোথায় আছে আমি জানি না, আমাদের খোঁজ খবর নেয় না। আমার স্বামীকে আমি ফিরে পেতে চাই।
মামলায় অভিযোগ উল্লেখ করা হয়, আসামীরা তাকে খুন জখমের হুমকী দিয়ে আসছে।
স্থানীয় বাসিন্দা নাম প্রকাশ না কারার সার্থে বলে,২ বিবাহ করতে হাচান প্রায়ই আসমার উপর অত্যাচার করত। আসমার উপর মামলার বিষয় গুলো সম্পৃর্ন মিথ্যা সাজানো আমরা মনে করি।
আসমার শাশুড়ির হাচান মা বলেন,আমার স্বামী নেই,আমি ঘরে একা বসবাস করি, আমার ছেলে বিবাহ করেছে বিবাহ এর কিছু দিন পড়ে আমার ছেলের বউ এর সাথে ওর প্রায়ই বাজা বাজি চলছিল আবার মিলমিশ হয়ে যায়,এটা তাদের স্বামী ও স্ত্রীর বিষয় এই বিষয়ে আমি কিছু জানি না।
হাচান এর বিষয়ে কথা জানতে চাইলে হাচানের মা বলেন, হাচান কোথায় আছে জানি না। তবে অনেকে দিন পড়ে কল দিয়ে খোঁজ খবর নেয় আমারা কেমন আছি। আমি হাচানকে এটা বলছি
ওর বউয়ের সাথে মিলেমিশে বসবাস করার জন্য তবে আমার কথা আমার ছেলে শুনে না।
স্থানীয় নগরীর ২৯ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলার মোঃ ফরিদ আহম্মেদ সরদার বলেন, আমি এই ঘটনা শুনেছি আসমা ও হাচান এর মধো প্রায়ই বাজা বাজি হয়ে থাকে,আমারা বেশ কয়েক বার স্থানীয় ভাবে বসে দুইজনের মধো মিলমিস করিয়ে দিয়েছি,তবে শুনেছি হাচান না কী এখন পালিয়ে রয়েছে আসমার খোঁজ খবর নেয় না, দুই সন্তান নিয়ে বড় অভাবেই বসবাস করতে আছে আসমা।
সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) বরিশাল’র সভাপতি প্রফেসর শাহ্ সাজেদা মনে করেন
স্ত্রী নির্যাতন। শারীরিক বা মানসিকভাবে প্রতিনিয়তই একজন স্ত্রী তার স্বামী দ্বারা বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হয়ে আসছেন। স্ত্রী নির্যাতন প্রতিরোধে নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। স্ত্রীর প্রতি সহিংসতার অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে, পারিবারিক নৈতিক শিক্ষার অভাব।
তিনি বলেন, স্ত্রী নির্যাতন শারীরিক বা মানসিকভাবে প্রতিনিয়তই একজন স্ত্রী তার স্বামী দ্বারা বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হয়ে আসছেন। কিন্তু অনেক সময় এসব নির্যাতনের অনেক ঘটনাই থেকে যায় অন্তরালে। অধিকাংশই ধামাচাপা পড়ে যায় মামলা-মোকদ্দমা না করে লোকলজ্জার ভয়ে গোপন রাখা হয় অনেক ঘটনা। যে কোনো মানুষের কাছেই পরিবার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং আশা-ভরসার স্থল, নিরাপদ আশ্রয়। দিন শেষে সবাই পরিবারের কাছেই ফেরে। কেননা, এটাই শান্তির ঠিকানা। আর এই পারিবারিক পরিসরেই যদি নির্যাতনের শিকার হতে হয়, তার চেয়ে বেদনাদায়ক আর কী হতে পারে? কিন্তু এমনটাই ঘটছে। আর তা সবচেয়ে বেশি ঘটছে ঘরের ভেতর স্ত্রীর সঙ্গেই।
তিনি আরো বলেন, দেশের উন্নয়ন হয়েছে, নারীর উন্নয়ন হয়েছে কিন্তু কোনো কোনো অঞ্চলে নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি এখনও পরিবর্তন হয়নি। কোন অঞ্চলে এবং কেন নারীরা এখনও নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন, সেখানকার শাসনব্যবস্থা, অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, সামাজিক পরিস্থিতি- সবকিছু নিয়ে গবেষণা হওয়া প্রয়োজন। বর্তমান সরকার নারীবান্ধব। তারপরও কেউ কেউ নিপীড়ন করে কেন পার পেয়ে যাচ্ছে সেটিও গভীরভাবে দেখা দরকার।
এ বিষয়ে বরিশাল মেট্রোপলিটন এয়ারপোর্টে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ( ওসি) কমলেস হালদার বলেন, আমার কাছে এখনো কোন পক্ষ লিখিত ভাবে অভিযোগ দায়ের করেনি। যদি কোন ব্যক্তি লিখিতভাবে অভিযোগ দায়ের করে তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।