শুক্রবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৩১ পূর্বাহ্ন
ক্রাইমসিন২৪ ডেস্ক: আওয়ামী লীগ সরকারের দুই মেয়াদ মিলিয়ে ছয় বছর তথ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেছেন, তার কোনো কাজ অসমাপ্ত থেকে গেলে সেজন্য তিনি ক্ষমাপ্রার্থী।
নতুন মন্ত্রিসভা না হওয়া পর্যন্ত তথ্যমন্ত্রীর দায়িত্বে আছেন জানিয়ে ইনু বলেন, ‘যেটুকু সমস্যার সমাধান করতে পারিনি সেই ঘাটতির জন্য আপনারা ক্ষমা করবেন। আমিও মানুষ, ফেরেশতা নই, শয়তানও নই।’
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোট টানা তৃতীয় নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর মঙ্গলবার বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরামের এক সংলাপে তার এমন মন্তব্য আসে।
কুষ্টিয়া-২ আসন থেকে নির্বাচিত ইনুসহ একাদশ সংসদের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা আগামী বৃহস্পতিবার সাংসদ হিসেবে শপথ নেবেন। তারপর শুরু হবে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নতুন সরকার গঠনের তোড়জোড়।
১০ জানুয়ারির মধ্যেই নতুন মন্ত্রিসভার শপথ হয়ে যাবে বলে ইতোমধ্যে আশা প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের প্রথম মেয়াদের শেষ দিকে ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে জাসদ নেতা ইনুকে তথ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে আনেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ টানা দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এলে তথ্যের দায়িত্বে ইনুর ওপরই ভরসা রাখেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।
ইনু বলেন, ‘মহাজোট মানুষের জোট। মানুষের সুখ-দুঃখে আমরা কাজ করার চেষ্টা করি। তাই মহাজোটের প্রার্থীরা বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছেন।’
গত রবিববার একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৫৯ আসনে জয় পেয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। আর জোটগতভাবে তাদের আসন সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৮৮টি।
এর বিপরীতে বিএনপিকে নিয়ে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ভরাডুবি হয়েছে। তাদের ধানের শীষের প্রার্থীরা মাত্র সাতটি আসনে জয়ী হতে পেরেছে।
জাসদ সভাপতি ইনুর মতে, মাঠ পর্যায়ে বিএনপির নেতৃত্বহীনতাই নির্বাচনে এই ভরাডুবির মূল কারণ।অন্যদিকে গত দশ বছরে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডগুলো বিবেচনা করেই জনগণ আবার আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটকে ভোট দিয়েছে। পর পর দুই মেয়াদে দেশ পরিচালনায় মহাজোট সরকার যে নজির স্থাপন করেছে, দেশের মানুষের জীবনমান-অবকাঠামোর উন্নয়ন করেছে, সর্বোপরি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ গড়ে বিশ্বের দরবারে বাঙালি জাতিকে যে মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেছে সে মহাকর্মযজ্ঞই শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মহাজোট সরকারকে এ অভাবণীয় বিজয় এনে দেয়।
ইনু বলেন, ‘মাঠ পর্যায়ে বিএনপির নেতৃত্বহীনতা, বিএনপি প্রার্থীদের আয়েশী মনোভাব এবং মনোনয়ন নিয়ে বাণিজ্য তাদের ভরাডুবির কারণ হলেও আরও অনেক কারণ রয়েছে। গণতন্ত্র থেকে সরে গিয়ে জ্বালাও-পোড়াও, নাশকতা, হত্যা, খুন, ধ্বংসের অপরাজনীতি অনুসরণ করায় তাদের এই ভরাডুবি।’
গত ১০ বছর বিএনপি ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ রাজনীতি করেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘বিরোধী দলের ভূমিকাও বিএনপি পালন করতে পারেনি। জনগণকে কোনো স্বপ্নও দেখাতে পারেনি। সংসদের ভেতরে-বাইরে তারা ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। তারা ভোটের সময় দায়িত্বহীন আচরণ করেছে। তারা নীবর ভোট বিপ্লবের কথা বার বার বলেছে কিন্তু তাদের কার্যক্রম ছিল প্রেস বিল্পব, সারক্ষণ ঢাকায় বসে সাংবাদিকদের সামনে এবং টেলিভিশনের পর্দায় উপস্থিত ছিল।’
ইনুর দাবি, নির্বাচনে মাঠ পর্যায়ে বিএনপি-জামায়াতের উপস্থিতি ছিল না বললেই চলে। তাদের অনেক প্রার্থী এলাকাতেই যাননি, ঢাকায় ‘আয়েশী’ জীবনযাপন করেছে।
ইনু বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত মাঠ পর্যায়ে কর্মী-সমর্থকদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেনি, তাদের সম্পর্ক আলগা হয়ে গিয়েছে। বিএনপি-জামায়াতের কর্মীরা পক্ষ ত্যাগ করতে শুরু করেছে। নির্বাচনে মন না দিয়ে ষড়যন্ত্র-চক্রান্তে মন দিয়েছিল বিএনপি, সঠিক প্রার্থীও দেয়নি, প্রার্থীরা মাঠেও যায়নি।’
এবার ২ কোটি ২৫ লাখ নতুন ভোটার মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ছিল মন্তব্য করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এত ভোটারের উপস্থিতি আগে কোনোদিন দেখিনি। এই নির্বাচন সবচেয়ে কম সহিংসতাপূর্ণ ছিল। পর্যবেক্ষকরাও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হয়েছে বলে পর্যবেক্ষণ দিয়েছে।’
ইনু বলেন, বিএনপি-জামায়াত হারলেই নির্বাচন প্রত্যাখান করে পুনঃনির্বাচনের দাবি জানায়, এটা তাদের ‘বদ অভ্যাস’। ২০টি আসন পাওয়া জাতীয় পার্টি দলগতভাবে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকায় তারাই ফের বিরোধী দলের আসনে বসবে বলে মনে করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনা যদি আমন্ত্রণ জানান, আর তারা গ্রহণ করে, তবে তারা মন্ত্রিসভায় যাবে। আর গ্রহণ না করলে জোটের অন্য শরিকদের নিয়ে সরকার গঠন হবে।’
নতুন সরকারের সামনে প্রধান চ্যালেঞ্জ কী হবে- এমন প্রশ্নে ইনু বলেন, ‘সরকারের প্রধান চ্যালেঞ্জগুলোর একটা হচ্ছে সরকার যে উন্নয়ন করেছে সেই উন্নয়নটা রক্ষা করে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।’