মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:২৯ অপরাহ্ন
অপূর্ব অপু: সময়টা, অসময়ে পরিণত করেছে আমাদের। সবার মাঝে অজানা এক উৎকন্ঠা, কখন কি হয় ? যারা বেঁচে আছেন তাদের কেউ-ই এমন দৃশ্য কখনই দেখেননি। কল্পনায় প্রস্তুতও ছিলেন না, কেউই। সবাই আজ যেন অসহায়। বেঁচে থাকার আকুলতা থমকে দিয়েছে আমাদের সব কিছু।
চারপাশটা অদ্ভুদ রকমের থমথমে। ভোররাতে বরিশাল লঞ্চঘাটে ঢাকা থেকে আসা লঞ্চের সাইরেন বাজে না। চলে না রিক্সার চাকা। হকারের সাইকেল নেই, বলে না পত্রিকা লাগবে? হয় না “সকাল সন্ধ্যা” দোকানের নাস্তা। দুপুর কিংবা রাত, খাবার বন্ধ “রয়েলে” র। নেই বিবির পুকুরের চারপাশে বিকেলের সেই চায়ের আড্ডা।
“মুক্তিযোদ্ধা পার্কে” বা কীর্তনখোলার তীরে, “ত্রীশ গোডাউনে” হয় না হইহুল্লোড়। গমগম করে না অশ্বিনী কুমার হল। প্রেসক্লাব, রিপোর্টার্স ইউনিটি, গুপ্ত কর্ণারে বসে হয় না বোম ফাটানো যতকথা। সব কথা থেমে গেছে অদৃশ্যের কাছে। শব্দ নেই, কেবল মনে মনে ভাবছি কতটা অসহায় আমরা। প্রকৃতির বিচার চলছে। প্রকৃতি বুঝিয়ে দিচ্ছে পূর্ব পুরুষ থেকে আমরা যা করেছি, তার শাস্তি কতটা হতে পারে। নি:শব্দে শাসন করে যাচ্ছে। আর হচ্ছি শোষনের শিকার। প্রকৃতিকে হত্যা করেছি বলেই হয়তো ধীরে ধীরে ক্ষয়ে যাচ্ছি। ক্ষয়ে যাচ্ছে সব কিছু। তবুও প্রাণ ফেরাতে চাই। প্রাণে প্রাণ মেলাতে চাই। চাই আবার সবাই জেগে উঠবো। হাসবো, খেলবো, আড্ডা দিবো, বেড়াতে যাবো। ঈদের চাঁদরাতে চকবাজার কয়েক দফায় চষে বেড়াবো আর স্বদেশীতে একটু পর পর গিয়ে ফ্রিতে কোক, স্প্রেইট খাবো।
সকাল ৮টায় হেমায়েত উদ্দিন ঈদ গাহ নামাজের জামাত লাইভ করবো। ঐ তিনদিন ঘুরে ঘুরে মাংস পোলাও খাবো বড় ভাই, বন্ধুদের বাসায়। প্রবারণা পূর্নিমায় হেডফোন লাগিয়ে গান শুনতে শুনতে কীর্তন খোলায় নৌকায় ঘুরবো। বড়দিনে অক্সফোর্ড মিশন, সদর রোডের সেন্ট পিটার্স চার্চে যাবো স্বাজানো দেখতে। রাতে খাবো কবি হেনরি দার বাসায়।
আর দূর্গা পূজা আসার একমাস আগে থেকেই প্রস্তুতি নিবো শারদ উৎসব আয়োজনের, সম্প্রীতি সমাবেশ করার। ৬ষ্ঠী থেকে দশমী জমিয়ে আনন্দ করবো। পুজোর মধ্যরাতে বাইকে বসিযে মাকে নিয়ে মা দেখাতে ঘুরবো। শহরের আলোর ঝলকানিতে জ্বলে উঠবো নতুন উদ্যমে। ঝগড়া করবো বোনের সাথে। কথার যুদ্ধ হবে সমন্বয় পরিষদের মিটিংএ।
ভেবে ভেবে কেবল পাঞ্জাবী পালটাবো বিএম স্কুলে উদীচীর নাকি সিটি কলেজে চারুকলার বর্ষ বরণে বা বৈশাখী মেলার কোনটায় কি পরে যাবো। মায়ের ভাষা দিবস বা বিজয় দিবসে কিংবা স্বাধীনতা দিবসে শহীদ মিনারে মিলনমেলা হবে বয়সের বালাই না মেনে। সব হবে, সব। করোনার এই ঝড় কেটে যাবে। “একদিন ঝড় থেমে যাবে, পৃথিবী আবার শান্ত হবে” সেই সময়ের অপেক্ষায়..
লেখক: সাংবাদিক ও সংস্কৃতিকর্মী