মঙ্গলবার, ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৬:৫০ পূর্বাহ্ন
ক্রাইমসিন২৪: বরিশাল প্রেসক্লাব (বর্তমানে শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত বরিশাল প্রেসক্লাব) ও বরিশাল সাংস্কৃতিক সংগঠন সমন্বয় পরিষদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং বরিশাল জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সভাপতি মুনির হোসেনের ১২তম মৃত্যুবার্ষিকী। বহুগুনে গুনান্বিত এই মানুষটি ২০০৬ সালে মাত্র ৪৩ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে তাঁর পরিবার ও সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহন করা হয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে(২৫ নভেম্বর) সকাল ১০টায় বরিশাল মুসলিম গোরস্থানে মরহুমের কবর জিয়ারত এবং বিকাল ৪টায় শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত বরিশাল প্রেসক্লাব মিলনায়তনে স্মরন সভা ও দোয়া মোনাজাত। এছাড়া আগামীকাল সোমবার (২৬ নভেম্বর) হিজলা প্রেসক্লাবের উদ্যোগে বিকেল ৪টায় হিজলা বি.এল বালিকা বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে আলোচনা সভা ও দোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। জীবদ্দশায় তিনি একাধারে যেমন রাজপথে থেকে প্রগতিশীল রাজনীতির কথা বলেছেন, তেমনি কাগজের পাতায় নানা প্রতিবেদন লিখে হয়ে উঠেছিলেন একজন সাহসি সাংবাদিক। আবার অসাম্প্রদায়িক চেতনায় সমৃদ্ধ মুনির হোসেন বরিশাল সাংস্কৃতিক অঙ্গনেও দাপুটে পদচারনা করে নিজের প্রতিভার জানান দিয়েছিলেন। অ্যাডভোকেট নেহাল হোসেন ও খালেদা বেগমের পুত্র মুনির হোসেনের জন্ম ১৯৬৩ সালের আগস্ট মাসে। ছাত্রাবস্থায় নিজেকে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের প্রগতিশীল রাজনৈতিক কর্মকান্ডের সাথে যুক্ত করা মুনির হোসেন বরিশাল নগরীর ব্রজমোহন বিদ্যালয় (বিএম.স্কুল) থেকে এসএসসি এবং ব্রজমোহন কলেজ থেকে এইচ.এস.সি ও ব্যাচেলর ডিগ্রি অর্জন করেন। তারপর যেখানেই তিনি নিজেকে যুক্ত করেছেন সেখানেই পেয়েছেন সুনাম ও খ্যাতি। তাঁর নেতৃত্বের গুনাবলী তাঁকে অল্প সময়ে নেতৃত্বের আসনে বসাতে সাহায্য করেছিল। মুনির হোসেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আর্দশের একজন সৈনিক হিসেবে রাজপথে লড়াই সংগ্রামে সবসময় ছিলেন সামনের কাতারে। কোন অপশক্তির কাছে মাথানত না করে মুনির হোসেন আমৃত্যু মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের একজন মানুষ হিসেবে নিজেকে পরিচালিক করে গেছেন। বরিশালে আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহন করে এ সংগঠনের কর্মী সমর্থক বাড়াতে কাজ করেছেন আমৃত্যু পর্যন্ত। নগরীর অশ্বিনী কুমার হল অথবা বিবির পুকুরের দলীয় কার্যালয়ের সামনে দাঁড়িয়ে ভরাট কন্ঠের অধিকারী মুনির হোসেন যখন বক্তব্য রাখতেন তখন শ্রোতারা মন্ত্রমুগ্ধের মতো আকৃষ্ট হয়ে তাঁর বক্তব্য শুনতেন। বরিশালের অন্যতম নাট্য সংগঠন শব্দাবলী গ্রুপ থিয়েটারের একজন একানিষ্ঠ কর্মী হিসেবে যুক্ত থাকা মুনির হোসেন আবৃত্তি আর সঞ্চালক হিসেবে স্বল্প সময়েই সকলের নজর কেড়ে ছিলেন। ১৯৯৩ সালে মাত্র ৩০ বছর বয়সে মুনির হোসেন বরিশালের ২৭টি জোটের সমন্বয়ে গঠিত বরিশাল সাংস্কৃতিক সংগঠন সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন। মূলত নব্বইয়ের দশকে মুনির হোসেন অসাম্প্রদায়িক চেতনার একজন মানুষ হিসেবে রাজপথে সরব ছিলেন সকল অন্যায় ও অপশাসনের বিরুদ্ধে। ১৯৯২ সালে মুনির হোসেনের সম্পাদনায় ‘ইতিবৃত্ত’ নামে একটি সাহসী ম্যাগাজিন বের হয়েছিল। একটা সময় এ পত্রিকাটি বরিশালবাসীর আশা আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটাতে সক্ষম হয়ে সকলের নজর কেড়েছিলেন। ত্যাগ, তিতিক্ষা আর নিষ্ঠার সাথে কাজ করতে গিয়ে একজন সাংস্কৃতিক সংগঠক অথবা একজন রাজনৈতিক নেতা হিসেবে স্বল্প সময়ে প্রতিষ্ঠা পাওয়া মুনির হোসেন সাংবাদিক নেতা হিসেবেও নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। তিনি ছিলেন বরিশালের বহুল প্রচারিত স্থানীয় দৈনিক আজকের বার্তার বার্তা সম্পাদক। এক সময়ে বরিশালের বাইরে থেকে যখন একেএম মুস্তাফিজুর রহমানের সম্পাদনায় দৈনিক প্রবাসী প্রকাশিত হতো তখন মুনির হোসেন সেই পত্রিকার বরিশাল সংবাদদাতা ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশনের বরিশাল সংবাদদাতা ও জাতীয় দৈনিক জনকন্ঠের বরিশাল প্রতিনিধি হিসেবেও কাজ করেছেন। নেতৃত্বের গুনে তিনি একাধারে ১৯৯৫, ১৯৯৬, ১৯৯৮, ১৯৯৯ এবং ২০০১ সালে বরিশাল প্রেসক্লাবের (বর্তমানে শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত বরিশাল প্রেসক্লাব) সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। স্পষ্ঠবাদী মুনির হোসেন ছিলেন একজন স্বপ্নবাজ মানুষ। তিনি নিজে যেমনি স্বপ্ন দেখতেন তেমনি তার কাছে থাকা মানুষ গুলোকেও স্বপ্ন দেখাতেন। ১৯৯৬ সালে যখন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে তখন মুনির হোসেন ছিলেন আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের বরিশাল জেলা সভাপতি। ক্ষমতাসীন দলের একজন নেতৃত্ব পর্যায়ের নেতা হয়েও মুনির হোসেন স্রোতের বিপরীতে গা ভাসিয়ে দেননি। বরং তিনি তার পেশাকে সন্মান জানিয়ে ওই সময়ে একজন পুরোদস্ত সাংবাদিক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। হয়তো অনেক স্বপ্ন নিয়ে ১৯৯২ সালে মুনির হোসেন সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন ‘ইতিবৃত্ত’ বের করেছিলেন। ওই পত্রিকাটির ১ম বর্ষের ২য় সংখ্যা পড়তে গিয়ে দেখেছি সম্পাদকীয়’র ঠিক নিচে তিনি একটি কৈফিয়তও লিখেছিলেন। সেখানে তিনি লিখেছিলেন-‘গাদি গাদি সমস্যার কারনে এতোদিন ‘সাপ্তাহিক ইতিবৃত্ত’ নিয়মিত প্রকাশ করা সম্ভব হয়নি। তাই ক্ষমা চাচ্ছি। তবে এখন থেকে স্বল্প পরিসরে নিয়মিত প্রকাশ করার ইচ্ছে রাখি।’ কৈফিয়তের শেষাংশে তিনি লিখেছেন ‘হঠাৎ করে আবার যদি বন্ধ হয়ে যায় ইতিবৃত্তের প্রকাশনা, তখন দুঃখ পাবার কিছুই নেই। হয়তো আর ক্ষমা চাওয়া হবেনা। তাই আগাম ক্ষমা চাচ্ছি।’ মুনির হোসেন ২০০৬ সালের ২৫ নভেম্বর হঠাৎ করে সকলকে কাঁদিয়ে মাত্র ৪৩ বছর বয়সে পরপারে পাড়ি জমান। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মুনির হোসেনের এভাবে আকস্মিক চলে যাওয়ায় অনেকেই ব্যথিত হয়েছেন। একযুগ আগে মুনির হোসেন চলে গেলেও তাঁর স্মৃতি ধরে রাখতে এখন পর্যন্ত যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন তাঁরই স্নেহ-আদরে বেড়ে ওঠা ছোট ভাই এস.এম জাকির হোসেন। তিনিও নিজেকে বড় ভাইয়ের মতো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর আর্দশের একজন সৈনিক মনে করে রাজনীতির সাথে যুক্ত রয়েছেন। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বরিশাল মহানগর শাখার যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। আপাদমস্তক একজন সাংবাদিক না হলেও জাকির হোসেনও তাঁর বড় ভাই মুনির হোসেনের পদাঙ্ক অনুসরন করে সংবাদপত্রের সাথে নিজেকে যুক্ত করেছেন। বর্তমানে তিনি বরিশালের বহুল প্রচারিত দৈনিক মতবাদ পত্রিকার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও দৈনিক দখিনের মুখ পত্রিকার সম্পাদক। এছাড়া ২০১৬ সালের ২৫ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত বরিশাল প্রেসক্লাবের নির্বাচনে সদস্যদের প্রত্যক্ষ ভোটে জাকির হোসেন সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। বর্তমান সময় পর্যন্ত তিনি সেই দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া মুনির হোসেনের স্মৃতি বিজড়িত সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন ‘ইতিবৃত্ত’ প্রকাশেরও উদ্যোগ নিয়েছেন ছোট ভাই জাকির হোসেন। দৈনিক মতবাদের একটি সহযোগি প্রকাশনা হিসেবে প্রতি সপ্তাহেই কবি হেনরী স্বপন সম্পাদিত ইতিবৃত্ত পাঠকের কাছে পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। ##