রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৩৫ অপরাহ্ন
গণহত্যা ও নির্যাতনের মুখে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়া লাখ লাখ রোহিঙ্গা নাগরিককে ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমার তালবাহানা করছে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে এশিয়ার অন্যতম বড় শক্তি চীন বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারবে বলে মনে করে দেশটিতে সফররত ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দল।
প্রতিনিধি দলের প্রধান আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুল মতিন খসরু এ ব্যাপারে চীনকে হস্তক্ষেপ করার অনুরোধ জানিয়েছেন। বলেছেন, ‘চীনের কাছে এটি আমাদের বিনীত অনুরোধ।’ খবর বাসসের।
বৃহস্পতিবার নানজিংয়ের হোটেল শাংরি-লাতে তিনি চীনের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিসি) কেন্দ্রীয় কমিটির ব্যুরো অফ ইন্টারন্যাশনাল বিভাগের মহাপরিচালক সান হাইয়ান-এর সঙ্গে সাক্ষাৎকালে খসরু এই অনুরোধ জানান।
২০ সদস্যের প্রতিনিধি দলের প্রধান মতিন খসরু আইডিসিপিসির মহাপরিচালককে বলেন, ‘যদি বেইজিং চাপ দেয়, তবেই মিয়ানমার সরকার এই সমস্যা সমাধানের উপায় খুঁজে বের করবে।’
‘এটি (রোহিঙ্গা সমস্যা) দ্বিপক্ষীয় ইস্যু নয়, একটি আন্তর্জাতিক সমস্যা, এটি একটি মানবিক সমস্যাও।’
‘জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা এখন কক্সবাজারে স্থানীয় জনগণের চেয়ে অনেক বেশি। যেখানে চার লাখ স্থানীয় জনসংখ্যার বিপরীতে ১১ লাখ রোহিঙ্গা বসবাস করছে।’
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান আবদুল মতিন খসরু অভিযোগ করেন যে, রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমার মোটেও আন্তরিক নয়।
বাংলাদেশের অনুরোধের জবাবে আইডিপিসির মহাপরিচালক বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে চীন ঢাকাকে সমর্থন অব্যাহত রাখবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা আমাদের কথা ও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করব। আমরা আশা করি, বাংলাদেশ এবং মিয়ানমার উভয়ই সঠিক দ্বিপক্ষীয় পরামর্শের মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান করতে পারবে।
সান বলেন, তারা আত্মবিশ্বাসী যে, রোহিঙ্গা সমস্যা শিগগিরই সমাধানের দিকে এগিয়ে যাবে। তিনি বলেন, যত দ্রুত এই সমস্যা সমাধান হবে, ততটাই বাংলাদেশের জন্য মঙ্গল।
চীন সরকার এর আগে গত সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিপুল বিজয়কে যে অভিনন্দন জানিয়েছিলো, সেটি উল্লেখ করে সান বলেন, বিশ্ব অর্থনীতিতে বাংলাদেশের সাফল্য দেখে তারা আনন্দিত। বিশেষ করে বাংলাদেশ বিশ্বের শীর্ষ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য।
বাংলাদেশ ‘এক-চীন নীতি’ সমর্থন করে উল্লেখ করে সাবেক আইনমন্ত্রী আবদুল মতিন খসরু বাংলাদেশের অবকাঠামো, আইসিটি, শিক্ষা, কৃষি, কারিগরি শিক্ষা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় আরও বেশি চীনা সহায়তার আহ্বান জানান।
তিনি চীনা ব্যবসায়ীদের প্রতি বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে আরও বেশি চীনা বিনিয়োগের অনুরোধ জানান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে গত দশ বছরে আর্থ-সামাজিক খাতে বিভিন্ন উন্নয়ন ও সাফল্যের কথা তুলে ধরে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, শেখ হাসিনা সরকার সন্ত্রাসবাদ ও চরমপন্থাকে কঠোর হস্তে দমন করেছেন।
সিপিসি ও আওয়ামী লীগের সম্পর্ক যে গভীর, তা উল্লেখ করে সান বলেন, সিপিসি আওয়ামী লীগকে তার সেরা বন্ধু হিসেবেই বিবেচনা করে।
তিনি আরও বলেন, আমরা বাংলাদেশের দ্রুত উন্নয়ন দেখে অত্যন্ত অভিভূত। বাংলাদেশের ৮ দশমিক ১৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি, সত্যিই একটি অসাধারণ অর্জন।
বাংলাদেশের উন্নয়নে চীনের ভূমিকার প্রশংসা করে আবদুল মতিন খসরু চীনকে বাংলাদেশের অন্যতম সেরা বন্ধু এবং দ্বিপক্ষীয় উন্নয়নের অংশীদার হিসেবে উল্লেখ করেন।
পরে, একই হোটেলে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দল সিপিসি জিয়াংসু প্রাদেশিক কমিটির উপসচিব রেন ঝেনহের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় আবদুল মতিন খসরু চীনকে বাংলাদেশে আরও বেশি বিনিয়োগ নিয়ে আসার অনুরোধ করেন।
আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, চীন বাংলাদেশে আরও বেশি শিল্প স্থাপন করতে পারে এবং বিশেষ করে এসইজেড-এ তাদের বিনিয়োগ বাড়িয়ে তুলতে পারে। এতে চীন বাংলাদেশি যুবকদের জন্য আরও কর্মসংস্থান তৈরি করে দিতে পারে।
সকালে, বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল সিপিসির জিয়াংসু কমিটির পার্টি স্কুল পরিদর্শন করেন এবং সেখানে একটি পেজেন্টেশান অনুষ্ঠানে উপস্থিত হন এবং মতবিনিময় করেন। পেজেন্টেশান নিয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন প্রফেসর ড. হু জংগ্রেন।
আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দলেন ছিলেন- তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক মো. আফজাল হোসেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক মো. আবদুস সবুর, যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক হারুনুর রশিদ, উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য দীপংকর তালুকদার এমপি, মোহাম্মদ আমিরুল আলম মিলন, মো. আজমত উল্লাহ খান, এবিএম রিয়াজুল কবির কাওসার, মো. রফিকুর রহমান, অপরাজিতা হক এমপি, বাসন্তী চাকমা ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপ কমিটির সদস্য তরুণ কান্তি দাস।