শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:২৭ অপরাহ্ন
অনলাইন ডেক্স:নগরের কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মহসীন। এক হাতে নিজের মোবাইল ফোনের লাউড স্পিকার অন করে বিভিন্নজনের সঙ্গে কথা বলছিলেন তিনি। অন্য হাতে খাচ্ছিলেন দুপুরের খাবার।
এর মধ্যে হঠাৎ এক নারীর ফোন। লাউড স্পিকারে শোনা যাচ্ছে ওই তার আকুল আবেদন-‘মহসিন ভাইয়া আপনার ফেসবুক থেকে নাম্বারটি নেওয়া। আমার আব্বুর জন্য জরুরি ভিত্তিতে প্লাজমা দরকার। প্লিজ একটু ব্যবস্থা করতে পারবেন?’
ওসি মহসীন ওই নারীর বাবার ঠিকানা লিখে নিয়ে সঙ্গে সঙ্গে করোনা ভাইরাস থেকে সেরে ওঠা এক পুলিশ সদস্যকে ফোন দিলেন। মহসীনের আহ্বানে ওই পুলিশ সদস্যও রাজি হলেন সঙ্গে সঙ্গেই।
দেশে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ শুরুর পর থেকে ওসি মহসীনের বিভিন্ন কার্যক্রমের মধ্যে করোনা রোগীর জন্য প্লাজমা সংগ্রহ করে দেওয়ার উদ্যোগ এটি। যেটি এখনও চলমান আছে, প্রশংসাও কুড়িয়েছে উদ্যোগটি। তবে তার সর্বশেষ উদ্যোগটিও বেশ আলোচনায় এসেছে। যেটি ‘আমার ফার্মেসি।’
চট্টগ্রামের ফার্মেসিগুলো যখন ওষুধের নির্ধারিত দামের চেয়ে মাত্রাতিরিক্ত বেশি টাকা নিচ্ছিলো। জরুরি কিছু ওষুধও যখন রোগীরা পাচ্ছিলেন না, তখন তিনি ‘আমার ফার্মেসি’ নিয়ে হাজির।গত ১৫ জুন এটির উদ্বোধন করেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) এসএম মেহেদী হাসান।
বাইক স্টান্ট গ্রুপ ‘বিএম রাইডার্স’র ২০ জন তরুণ আমার ফার্মেসিতে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করছেন। ০১৮৭০৭০০৭০০-এই হট লাইন নাম্বারে কল দিয়ে ঠিকানা দেওয়ার পর যৌক্তিক সময়ের মধ্যে রোগীর কাছে প্রয়োজনীয় ওষুধ পৌঁছে দিচ্ছেন তারা। শুধু নগরে নয়, বিভিন্ন উপজেলায়ও আমার ফার্মেসিতে অনেক স্বেচ্ছাসেবক কাজ করছেন। তারা প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়ে রোগীর কাছে জরুরি ওষুধ পৌঁছে দিচ্ছেন।
ওসি মহসীন জানান, ওষুধ নিয়ে কিছু ব্যবসায়ী কারসাজি শুরু করলে নগরবাসীকে ওষুধের দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত করতে আমার ফার্মেসি নামে এ আয়োজন। প্রথমে বিভিন্ন ফার্মেসি থেকে ভতুর্কি দিয়ে ওষুধ কেনা হয়। তারপর নির্ধারিত মূল্যের ওপর ১৫ শতাংশ ছাড় দিয়ে রোগীর কাছে এসব ওষুধ পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।
কোনো রোগী যখন ওষুধের জন্য কল করে তখন স্বেচ্ছাসেবকরা রোগীর কাছ থেকে প্রেসক্রিপশনের ছবি নেন। তারপর প্রেসক্রিশনে যা লেখা আছে সেই অনুযায়ী ওষুধ রোগীর কাছে সরবরাহ করা হয়। আমার ফার্মেসি চালু হওয়ার পর থেকে প্রতিদিন শতাধিক কল আসছে হট লাইন নাম্বারে।
তিনি বলেন, দুটি উদ্দেশে আমার ফার্মেসি চালু করা। ওষুধবাজারে ইতিবাচক প্রভাব ফেলা ও ওষুধের দুর্ভোগ লাঘব করা। প্রাথমিকভাবে আমরা সফল কারণ প্রতিদিনই শত শত রোগীর কল পাচ্ছি। নগরের হাজারী গলির ২০টি দোকান এখন আমাদের ন্যায্যমূল্যে ওষুধ দিচ্ছে।
তিনি বলেন, আমার ফার্মেসি সবার ফার্মেসি। প্রত্যেকেই এটাকে নিজের মতো মনে করবেন। দামও নিজের মতো দিতে পারবেন। তাই আমরা ‘আমার ফার্মেসি ‘ নাম রেখেছি যাতে সবাই নিজের মতো মনে করে।
কোতোয়ালী থানার উদ্যোগটি বেশ প্রশংসার দাবি করে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, কোতোয়ালী থানার ওসি মহসীনের এমন উদ্যোগ বেশ প্রশংসার। আমরা চেষ্টা করছি এমন উদ্যোগ প্রতিটি থানায় করার।
‘এমন পজিটিভ উদ্যোগের ফলে পুলিশের মানুষের কাছে যাওয়ার সুযোগ হচ্ছে। মানুষ যে ভোগান্তির মধ্যে আছে এখন, এমন উদ্যোগে কিছুটা হলেও মানুষের মধ্যে স্বস্তি জুটবে।’ বলেন সদ্য করোনাজয়ী এ পুলিশ কমিশনার।