বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:৩৬ পূর্বাহ্ন
অনলাইন ডেস্ক : করোনাভাইরাস সংক্রমণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে সার্বিক দারিদ্র্যের হার বেড়ে হয়েছে ৪২ শতাংশ। অথচ ২০১৮ সালে এটি ছিল ২১.৬ শতাংশ। এ ছাড়া শহরাঞ্চলে সার্বিক দারিদ্র্যের হার ২০১৮ সালে ছিল ১৬.৩ শতাংশ, যা করোনাকালে ২০২০ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৫.৪ শতাংশ। সাউথ এশিয়ান ইকোনমিক ফোরাম (সানেম) এক জরিপে এমন তথ্য উঠে এসেছে। এক ওয়েবিনারে জরিপের এ তথ্য তুলে ধরেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এবং সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান।
এ সময় অন্যদের মধ্যে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এম এম আকাশ, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন ও বিশ্বব্যাংকের সাবেক লিড কলামিস্ট অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন। ‘দারিদ্র্য ও জীবিকার ওপর কভিড-১৯ মহামারির প্রভাব : সানেমের দেশব্যাপী জরিপের ফলাফল’ শিরোনামে জরিপটি প্রকাশ করা হয়। ফোনকলের মাধ্যমে সারা দেশে পাঁচ হাজার ৫৭৭টি খানার ওপর ২০২০ সালের ২ নভেম্বর থেকে ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে জরিপটি পরিচালিত হয়। জরিপে বলা হয়, করোনা মহামারির প্রভাবে চরম দারিদ্র্যের হার বেড়েছে কয়েক শতাংশ। সানেমের জরিপ অনুসারে ২০১৮ সালে এটি ছিল ৯.৪ শতাংশ। আর ২০২০ সালে মহামারির প্রভাবে তা বেড়ে হয়েছে ২৮.৫ শতাংশ। ২০১৮ সালে গ্রামাঞ্চলে চরম দারিদ্র্যের হার ছিল ১১.২ শতাংশ। মহামারির সময়ে ২০২০ সালে তা বেড়ে হয়েছে ৩৩.২ শতাংশ। ২০১৮ সালে শহরাঞ্চলে চরম দারিদ্র্যের হার ছিল ৬.১ শতাংশ, যা ২০২০ সালে বেড়ে হয়েছে ১৯ শতাংশ। অন্যদিকে জাতীয় পর্যায়ে গড় মাথাপিছু স্বাস্থ্য ব্যয় বেড়েছে মধ্যম দরিদ্রদের ৯৭ শতাংশ এবং অতিদরিদ্রদের ক্ষেত্রে ১০৪ শতাংশ।
জরিপে বলা হয়, করোনার প্রভাবে ১৭.৩ শতাংশ পরিবার আগের মতো অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেতে পারছে। ৫৫.৯ শতাংশ পরিবারের কাজ থাকা সত্ত্বেও আয় কমেছে। ৮.৬ শতাংশ পরিবার কাজ হারানোর কথা বলেছে। ৭ শতাংশ পরিবারের কাজের সময় কমেছে। আর ৩৩.২ শতাংশ পরিবার বলেছে, তারা পুনরায় কাজে ফিরেছে। এ ছাড়া ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে অক্টোবরের মধ্যে সব ধরনের কর্মসংস্থান কমেছে। এটি স্বনিযুক্তদের জন্য ৩২, বেতনভিত্তিক কর্মীদের জন্য ২৩, দিনমজুরের জন্য ২৯ এবং অন্যদের জন্য ৩৫ শতাংশ। করোনা সংকট মোকাবেলায় জরিপে অংশগ্রহণকারীরা নানা কৌশল অবলম্বন করেছেন।
তাঁদের মধ্যে ৪৮.৭২ শতাংশ পরিবার ঋণ নিয়েছে। ৩২.৪ শতাংশ পরিবার সঞ্চয়ের ওপর নির্ভরশীল, ২৭.৩৩ শতাংশ পরিবার খাদ্য ব্যয় কমিয়েছে। ২৭.০২ শতাংশ পরিবার খাদ্যতালিকায় পরিবর্তন আনতে বাধ্য হয়েছে। এ ছাড়া ১৬.৬৭ শতাংশ পরিবার বন্ধু বা আত্মীয়ের কাছ থেকে অনুদান নিয়েছে। ওয়েবিনারে ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ‘করোনাকালে আমাদের অর্থনীতির অনেক ক্ষতি হয়েছে। তবে আমরা ধীরে ধীরে সেই ক্ষতি কাটিয়ে উঠছি। এর মূলে রয়েছে রেমিট্যান্সের প্রভাব। হুন্ডিতে টাকা আসা বন্ধ হওয়াও একটি কারণ। প্রবাসীরা তাদের জমানো অর্থ দেশে পাঠাচ্ছে। তবে রেমিট্যান্সের এই প্রভাব বেশিদিন না-ও থাকতে পারে। এ জন্য আমাদের অর্থনীতি বাঁচাতে বিকল্প ব্যবস্থা নিতে হবে।
জরিপের ফল উপস্থাপনের সময় ড. সেলিম রায়হান বলেন, ‘জরিপের মূল উদ্দেশ্য কভিড-পরবর্তী সময়ে দারিদ্র্য, বৈষম্য ও কর্মসংস্থানের স্বরূপ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া। সরকারের নীতিনির্ধারক মহল জরিপের তথ্যের ওপর ভিত্তি করে কভিড মোকাবেলায় পরবর্তী কার্যক্রম নির্ধারণ করবে—এমনটাই আমরা প্রত্যাশা করব।