শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৪৮ অপরাহ্ন
ক্রাইমসিন২৪ ডেস্ক: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়ে যাওয়ার পর নতুন মন্ত্রিসভা গঠন করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। নির্বাচন কমিশন (ইসি) থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের গেজেট প্রকাশিত হওয়ার পরই সংসদ সদস্যরা শপথ নেবেন। এর পরই নতুন মন্ত্রিসভা গঠন করা হবে। গত রবিবার এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট বিশাল জয় পাওয়ায় তারাই সরকার গঠন করবে। তবে মহাজোটের শরিক হলেও জাতীয় পার্টি বিরোধী দল হিসেবে থাকছে। সংসদ সচিবালয়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও সংশ্লিষ্ট দলগুলোর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সংবিধানের ৫৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, মন্ত্রিসভায় একজন প্রধানমন্ত্রী থাকবেন এবং প্রধানমন্ত্রী যেভাবে নির্ধারণ করবেন, সেভাবে অন্যান্য মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী থাকবেন। প্রধানমন্ত্রী ও অন্যান্য মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীকে রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দিয়ে থাকেন। আর যে সংসদ সদস্য, সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের আস্থাভাজন বলে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রতীয়মান হবেন, রাষ্ট্রপতি তাঁকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দেবেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, আওয়ামী লীগ সভাপতি ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই নতুন সরকারের প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন—এটা নিশ্চিত। কারণ নির্বাচনের ফল অনুযায়ী বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে আওয়ামী লীগ। সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে ২৯৮টির ফল বেসরকারিভাবে ঘোষণা করেছে ইসি। ঘোষিত ফল অনুযায়ী আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট ২৮৮টি আসনে (আওয়ামী লীগ ২৫৯, জাতীয় পার্টি ২০, ওয়ার্কার্স পার্টি তিন, জাসদ দুই, বিকল্পধারা দুই, তরীকত ফেডারেশন এক ও জেপি এক) জয়ী হয়েছে। বিএনপিসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট পেয়েছে মাত্র সাতটি (বিএনপি পাঁচ, গণফোরাম এক ও ঐক্যপ্রক্রিয়া এক) আসন। তিনটি আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয় পেয়েছেন। আর স্থগিত একটি আসনে বিএনপির প্রার্থী এগিয়ে আছেন। এ ছাড়া প্রার্থীর মৃত্যুর কারণে একটি আসনে নির্বাচন আগেই স্থগিত করা হয়।
মন্ত্রিসভা গঠনের প্রক্রিয়া তুলে ধরে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের যুগ্ম সচিব (বিধি ও সেবা) শফিউল আজিম বলেন, ‘নিয়মানুযায়ী এমপিদের গেজেট হওয়ার পর সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা রাষ্ট্রপতির কাছে মন্ত্রিসভা গঠনের অনুমতি চাইবেন। রাষ্ট্রপতি অনুমতি দিলে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা মন্ত্রিসভা গঠনের জন্য সদস্য নির্বাচিত করবেন।’ তিনি জানান, রাষ্ট্রপতি বঙ্গভবনে প্রথমে প্রধানমন্ত্রীর শপথ পড়াবেন। এরপর মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের শপথ পড়াবেন। শপথের পর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে দপ্তর বণ্টন করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ প্রস্তুত রয়েছে বলেও জানান তিনি।
সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, নতুন মন্ত্রিসভায় কারা স্থান পাবেন সেটা একান্তই প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ার। তিনি যাঁদের চাইবেন তাঁদেরই জায়গা হবে নতুন মন্ত্রিসভায়। প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নির্বাচিত ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে মন্ত্রিসভার সদস্য হওয়ার জন্য শপথ নিতে আমন্ত্রণ জানাবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। একই সঙ্গে নতুন সদস্যদের জন্য গাড়িও প্রস্তুত রাখবে সরকারি যানবাহন অধিদপ্তর (পরিবহন পুল)। নতুন করে শপথ নেওয়ার কারণে আগের মন্ত্রিসভা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হয়ে যাবে।
এর আগে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি বিএনপির বর্জনের মধ্যেই দশম জাতীয় সংসদের নির্বাচন হয়েছিল। ১২ জানুয়ারি গঠিত হয়েছিল নতুন মন্ত্রিসভা। তখন শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী করে ৪৮ সদস্যের মন্ত্রিসভা গঠন করা হয়েছিল। পরে কয়েক দফা মন্ত্রিসভায় রদবদল আনা হলেও শেষ পর্যন্ত মন্ত্রিসভার আকার দাঁড়ায় ৫২ সদস্যে। একাদশ সংসদ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ায় টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ।
সংসদ সচিবালয় সূত্রে জানা যায়, ইসি গেজেট প্রকাশ করার পর নবনির্বাচিত সদস্যদের শপথ পড়াবেন স্পিকার। এরপর সংসদ অধিবেশন আহ্বান করা হবে। ওই অধিবেশনেই সংসদ নেতা ও বিরোধীদলীয় নেতা নির্বাচিত করা হবে।
অপর একটি সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় পার্টি (জাপা) বিরোধী দলের আসনে বসতে যাচ্ছে। অবশ্য বর্তমান সংসদে বিরোধী দলের পাশাপাশি মন্ত্রিসভায়ও আছেন জাপার তিনজন সদস্য। দলের চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ আছেন মন্ত্রী পদমর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হিসেবে।
বিএনপি-জামায়াতের বর্জনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত আগের নির্বাচনে জাতীয় পার্টি ৩৪টি আসনে জয়ী হলেও এবার পেয়েছে ২২টি। বর্তমানে বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে আছেন জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ।
এদিকে বিএনপিসহ দলটির নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচিত সাতজন সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেবেন না বলে জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা ওই নির্বাচনের পুরো ফলই প্রত্যাখ্যান করেছি। ফলে শপথের প্রশ্নই আসে না।’
রাঙ্গা বললেন, বিরোধী দলে যাব কি না, সিদ্ধান্ত মহাজোটে : একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর জাতীয় পার্টির অবস্থান কী হবে সে বিষয়ে মহাজোটে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা। গতকাল সোমবার ঢাকার বনানীতে দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মসিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, ‘আমরা মহাজোটের সঙ্গে আছি, মহাজোটের সঙ্গে থাকব। আমরা প্রধান বিরোধী দলে যাব কি না, এ বিষয়ে দু-এক দিন পরে সিদ্ধান্ত হবে। এর আগে আমরা মহাজোটের সঙ্গে আলোচনা করব।’
এরশাদের শারীরিক অবস্থা জানতে চাইলে রাঙ্গা বলেন, এখন অনেকটাই স্বাভাবিক। জানুয়ারিতে এরশাদ আবার সিঙ্গাপুরে যেতে পারেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি কোনো টেনটেটিভ ডেট দেব না। উনি অসুস্থতা অনুভব করলে যেতে পারেন। আর না করলে যাবেন না।’
নির্বাচন প্রসঙ্গে এরশাদের মূল্যায়ন জানতে চাইলে জাপার মহাসচিব বলেন, ‘নির্বাচনে যেটা হয়ে গেছে, সেটা হয়েই গেছে। না মেনে নিয়ে বিদ্রোহ করার মতো জিনিস তো নয়। তিনি (এরশাদ) নির্বাচনের ফলাফল মেনে নিয়েছেন।