বুধবার, ০৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১২:৩৯ পূর্বাহ্ন
অনলাইন ডেক্স:সারাদেশে জঙ্গি হামলা ও নাশকতার আশঙ্কা করছে পুলিশ। আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) ভাবধারায় অনুপ্রাণিত নব্য জেএমবি কিংবা অন্য কোনো জঙ্গি সংগঠন হামলা বা নাশকতা চালাতে পারে।
হামলার শঙ্কায় দেশের বিমানবন্দর, বিদেশি দূতাবাস, শিয়া ও আহমদিয়া উপাসনালয়, মাজার কেন্দ্রিক মসজিদ, চার্চ, প্যাগোডা, মন্দিরসহ যানবাহন ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় কঠোর নজরদারিসহ সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় থাকতে পুলিশের সব ইউনিটকে নির্দশনা দেওয়া হয়েছে।
সম্প্রতি পুলিশ সদর দফতরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইচি অপারেশনস-১) সাইদ তারিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বিষয়টি পুলিশের সব ইউনিটকে জানানো হয়েছে। চিঠিতে বিশেষ করে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল (সিটিটিসি) ইউনিট, অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিটসহ জঙ্গি সংশ্লিষ্ট ইউনিটগুলোকে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিতে বলা হয়।
রাজধানীসহ সারাদেশে ছোট-বড় যেকোন নাশকতা চালাতে জঙ্গিরা প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে তথ্য রয়েছে। জঙ্গি সংগঠগুলোর হামলা, নাশকতার টার্গেটে রয়েছে পুলিশের যেকোন স্থাপনা বা দায়িত্বরত সদস্যরা। সেই লক্ষ্যে রাজধানী ঢাকার সব ইউনিটে দায়িত্বরত সকল পুলিশ সদস্যক সতর্ক অবস্থানে থেকে প্রস্তুত থাকতে নির্দেশনা দিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।
জঙ্গি হামলা বা নাশকতার আশঙ্কা রয়েছে উল্লেখ করে ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম বলেন, আর্ন্তজাতিক জঙ্গি সংগঠন আইএস থেকে সারা পৃথিবীতে তাদের সমর্থকদের একটি বার্তা দিয়েছে। ওই বার্তায় তারা বলেছে—জিলহজ্জ মাসের প্রথম ১০ দিন পুণ্য লাভের ভালো সময়। এই সময় তারা যদি কোনো কাফেরকে হত্যা করতে পারে, এটা তাদের জন্য অনেক পুণ্যের কাজ হবে। এই মর্মে তারা বার্তা দিয়েছে। বাংলাতেও এই মেসেজটি আমরা পেয়েছি। এরপর থেকেই আমরা সতর্ক হয়েছি। সেই সঙ্গে পুলিশের সব ইউনিটকে সতর্ক করা হয়েছে।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, আমরা তথ্য পেয়েছি, জঙ্গিদের এক-দুই জন ইতোমধ্যে হিজরত (হামলার আগে স্থান পরিবর্তন) করছে। এ জন্য আমরা মনে করছি, হামলা বা নাশকতার একটা আশঙ্কা রয়েছে। জঙ্গি সংগঠনগুলোর সদস্যরা ছোটখাটো কোনো হামলার চেষ্টা করছে। এ কারণেই আমরা সর্বোচ্চ সতর্কতা অবস্থানে রয়েছি।
পুলিশের সব ইউনিটকে পাঠানো ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, জাতীয়-বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট ও গোয়েন্দা তথ্য পর্যালোচনায় জানা গেছে, তথাকথিত আইএস আসন্ন ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে কথিত ‘বেঙ্গল উলায়াত’ ঘোষণার উদ্যোগ নিয়েছে। আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক ঘটনা প্রবাহ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সাধারণত বড় ধরনের সন্ত্রাসী হামলার মাধ্যমেই ‘বেঙ্গল উলায়াত’ ঘোষণা করা হয়। এই অবস্থায় আইএসের দেশীয় অনুসারি নব্য জেএমবির সদস্যরা হামলা পরিচালনাসহ যেকোনো জঙ্গি হামলা বা বোমা হামলার মাধ্যমে হত্যাকাণ্ডসহ নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড করতে পারে। তাই পুলিশের সব ইউনিটকে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করে করে যথাযথ নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা আবশ্যক।
গোয়েন্দা তথ্যের বরাত দিয়ে ওই চিঠিতে হামলার সম্ভাব্য সময় সকাল ৬-৭টা অথবা সন্ধ্যা ৭-১০টায় হতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে হামলার কোনো দিন-তারিখ উল্লেখ করা হয়নি। হামলাকারীর পরিচয়ের বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে হামলাকারীর বয়স ১৫-৩০ বছরের মধ্যে হতে পাওে, তার চেহারা ক্লিন শেভড অথবা দাড়ি থাকতে পারে, গোফহীন হতে পারে। তার পরনে শার্ট/টিশার্ট, প্যান্ট, ক্যাপ, মাস্ক, কেডস এবং পেছনে ব্যাকপ্যাক থাকতে পারে। হামলার সময় হামলাকারী অস্ত্র ব্যবহারের বিষয়টিও উল্লেখ করা হয়েছে।
গোয়েন্দা তথ্যের বরাতে পুলিশ (পুলিশের কোনো টিম, স্থাপনা বা যানবাহন) বিমানবন্দর, ৩ দেশের দূতাবাস ভবন বা দূতাবাস সংশ্লিষ্ট বিশেষ ব্যক্তি অথবা শিয়া-আহমদিয়া উপাসনালয়, মাজার কেন্দ্রিক মসজিদ, চার্চ, প্যাগোডা, মন্দিরগুলোকে টার্গেট করা হতে পারে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
সুপারিশ হিসেবে ওই চিঠিতে বলা হয়, উগ্রপন্থী বা তাদের সংগঠনের ওপর নজরদারি বৃদ্ধি, পুলিশের সবাইকে ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বজায় রাখা, পুলিশের গাড়ি-স্থাপনা খালি বা পরিত্যক্তভাবে ফেলে না রাখা, পুলিশের ভবনগুলোতে প্রবেশের সময় নিরাপত্তা ও পরিচয় নিশ্চিত করা, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর নজরদারি বৃদ্ধি করা, চেকপোস্টে তল্লাশি বাড়ানো, সন্দেহ হলে ব্যাগ-দেহ তল্লাশি করা, সন্দেহজনক এলাকায় ব্লক রেইড করতে সংশ্লিষ্ট ইউনিটগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে পুলিশ সদর দফতর।