শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:০৭ পূর্বাহ্ন
ক্রাইমসিন২৪ ডেস্ক:সার্কিট হাউজ, যেখানে বসে যুদ্ধের পুরোটা পুরো সময় পাকিস্তানিরা গণহত্যা ও নির্যাতন চালিয়েছিলো; মেজর রফিক সেখানেই তার বিজয়ী বাহিনীর হেডকোয়ার্টার স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেন।
পাকিস্তানি সৈন্যদের পোর্ট এলাকায় নেভাল বেইজে এবং চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্টে আত্মসমর্পণের জন্য একত্রিত হতে বলা হয়। পাকিস্তানি বন্দিদের দায়িত্ব ভারতীয় সেনাবাহিনীর ওপর ন্যস্ত ছিল।
চট্টগ্রামে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ১৬১জন অফিসার, ৩০৫জন জেসিও এবং নৌ ও বিমানবাহিনীর সমপর্যায়ের লোকসহ তিন বাহিনীর ৮ হাজার ৬১৮ জন সৈন্য আত্মসমর্পণ করে। দিনটি ছিল ১৭ ডিসেম্বর।
মুক্তিযোদ্ধা ও সাংবাদিক নাসিরুদ্দিন চৌধুরী সম্পাদিত ‘মুক্তিযুদ্ধে চট্টগ্রাম’ গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে এসব তথ্য।
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে বিকেল সাড়ে চারটায় যখন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কমান্ডিং অফিসার জেনারেল নিয়াজি আত্মসমর্পণের চুক্তিতে সই করছিলেন, তখনও চট্টগ্রামে মুক্তিবাহিনীর সাথে চলছিল যুদ্ধ।
তৎকালীন মেজর রফিক (রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম) তাঁর লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে বইয়ে লিখেছেন, ১৩-১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত সীতাকুণ্ডের কুমিরায় চলে এই যুদ্ধ। এরপর পাকিস্তানি সেনারা বাসে-ট্রাকে ক্যান্টনমেন্ট ও নৌঘাঁটির দিকে পালাতে শুরু করে। ১৭ ডিসেম্বর তিনি গাড়ি নিয়ে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে আসেন।
‘তার সঙ্গে নিয়ে আসা বাংলাদেশের পতাকা তুলে দেন এক কিশোরের হাতে। ১৭ ডিসেম্বর সকাল সোয়া ৯টার দিকে সেই কিশোর সার্কিট হাউসের ফ্ল্যাগ স্ট্যান্ড থেকে পাকিস্তানের পতাকা নামিয়ে উড়িয়ে দেয় বাংলাদেশের পতাকা।’
চট্টগ্রাম শহর তখন জয় বাংলা স্লোগানে মুখর। সার্কিট হাউসের সামনে হাজার হাজার মানুষের সমাগম।
মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সূত্রে জানা গেছে, ১৭ ডিসেম্বর বিকেলে বিএলএফ কমান্ডার ইঞ্জিনিয়ারের আফছারের নেতৃত্বে মইনউদ্দিন খান বাদল ও ডা.মাহফুজুর রহমান সহ বেশ কয়েকজন গেরিলা যোদ্ধা চট্টগ্রাম শহরে ঢুকে প্রথমেই কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র দখলে নেন। তারা সেখানে যাওয়ার আগ মুহুর্তে পাকিস্তানী সেনারা পালিয়ে যায়।
চট্টগ্রামে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বড় আকারে কোন আনুষ্ঠানিক আত্মসমর্পণ হয়নি। তবে ফ্রিডম ফাইটার্স কমান্ডের শহর গ্রুপের গেরিলা কমান্ডার আব্দুর রহমান (বর্তমানে প্রয়াত) পাকিস্তানিদের হাতে দেয়ার জন্য দুটি সাদা পতাকা নিয়ে চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেণ্টে গিয়েছিলেন। ১৭ ডিসেম্বর ক্যাণ্টনমেণ্টে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণ করে।
মুক্তিযোদ্ধা সংসদ চট্টগ্রাম জেলা ইউনিট কমান্ডার মো.সাহাবউদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, সেদিন দুপুরে লক্ষ জনতার স্রোত মিশে গিয়েছিল তৎকালীন চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে। ৯ মাসের যুদ্ধ শেষে বিজয়ের আনন্দে আত্মহারা চট্টগ্রামবাসী কোন নেতৃত্ব ছাড়া নিজেরাই সার্কিট হাউসে উড়িয়েছিলেন লাল-সবুজের পতাকা।