শুক্রবার, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৩৬ পূর্বাহ্ন
শামীম আহমেদঃ
১৯৭১ সালে পাক বাহিনীর সাথে তাদের দোসর এ দেশীয় রাজাকারদের হামলাকেও হার
মানিয়ে ব্যাপক তান্ডব চালানো হয়েছে। প্রায় ঘন্টাব্যাপী ২/৩শ’ সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা
নারকীয় তান্ডব চালিয়েছে। ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে গ্রামের ১৫টি বাড়ি।
কুপিয়ে ও পিটিয়ে কমপক্ষে ১৫ জনকে আহত করা হয়েছে।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন, বরিশালের গৌরনদী পৌর এলাকার দিয়াশুর মহল্লার
বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ তোফাজ্জেল হোসেন।
ঘটনার দুইদিন পর মঙ্গলবার সকালে
নারকীয় তান্ডবের প্রত্যক্ষদর্শী ওই বীর মুক্তিযোদ্ধা বলেন, ৯ জুন দিবাগত রাত সাড়ে নয়টার
দিকে হঠাত করে বাড়ির মধ্যে গুলির শব্দ পেয়ে ঘর থেকে বের হই।
মুহুর্তের মধ্যে দেখি, শত
শত সন্ত্রাসীরা সশস্ত্র অবস্থায় পৌর কাউন্সিলর ইখতিয়ার হাওলাদারের বাড়ি ভাঙচুর করছে।
কিছুক্ষণের মধ্যে সন্ত্রাসীরা আমার বাড়িতেও হামলা চালায়। প্রাণ বাঁচাতে তখন আমি
দৌঁড়ে পাশের বাগানে আশ্রয় নেই। প্রায় দুই ঘন্টা বাগানের মধ্যেই ছিলাম।
ক্ষোভ প্রকাশ করে মুক্তিযোদ্ধা বলেন, এ জন্যই কি জীবন বাঁজি রেখে দেশটাকে স্বাধীন
করেছিলাম। বাড়ির নারী ও শিশুদের আর্তনাতে মনে হচ্ছিলো পশ্চিমা মিলিটারীরা সেই
যুদ্ধের সময় যে তান্ডব চালিয়েছিলো, তেমন তান্ডব শুরু হয়েছে। ঘটনার দুইদিন পেরিয়ে
গেলেও হামলাকারী চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা এখনও গ্রেপ্তার না হওয়ায় আতঙ্ক কাটেনি
সেদিনের ভূক্তভোগীদের। দিয়াশুর গ্রামের সেই নারকীয় তান্ডব দেখার জন্য আশপাশের
গ্রামের অসংখ্য মানুষ এখনও আসছে কাউন্সিলরের বাড়িতে।
হামলায় আহত ১৫ জনের মধ্যে
অধিকাংশরাই হচ্ছে নারী ও শিশু।
ফিরোজা বেগম নামের এক ভূক্তভোগী নারী বলেন, তাদের গ্রামের কাউন্সিলর ইখতিয়ার
হাওলাদারের কথামতো সবাই একজোট হয়ে গত ৯ জুন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মনির
হোসেন মিয়ার (কাপ-পিরিচ) মার্কায় ভোট দিয়েছি। এটাই ছিলো আমাদের অপরাধ।
যেকারণে পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থী হারিছুর রহমান ও তার সমর্থকরা আমার ঘরটিও
ভাঙচুর করেছেন। পাশাপাশি আমাকে পিটিয়ে আহত করে ঘরে থাকা নগদ টাকা
স্বর্ণালংকারসহ প্রায় এক লাখ টাকার মালামাল লুট করে নিয়েছে।
লুৎফুন নেছা নামের এক গৃহিনী বলেন, প্রায় ২০ বছর ধরে আমার স্বামী শষ্যাশয়ী।
হামলাকারীরা আমাদের ঘরে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে নারী ও শিশুসহ আমার অসুস্থ্য
স্বামীকেও মারধর করেছে। তাদের (হামলাকারী) হাত থেকে রেহাই পায়নি প্রতিবন্ধী এক
তরুনীও। আমাদের সকলের অপরাধ আমরা কাপ-পিরিচ মার্কায় ভোট দিয়েছি।
একই গ্রামের মনির হাওলাদারের স্ত্রী কামরুন নাহার অভিযোগ করে বলেন, আমার ছেলে
সিয়ামকে রাতের খাবার খাওয়াছিলাম।
এসময় প্রতিবেশী কাউন্সিলরের বাড়িতে
কান্নাকাটি, আর্তনাদ ও চিৎকারের শব্দ শুনতে পাই।
কিছু সময়ের মধ্যে আমার বাড়িতেও
হামলা চালানো হয়।
সন্ত্রাসীরা ঘরে ঢুকে লুটপাট করে আমাকে ও ছেলে সিয়ামকে
পিটিয়ে আহত করেছে।
গৌরনদী পৌরসভার প্যানেল মেয়র ও পৌর যুবলীগের সহসভাপতি মোঃ ইখতিয়ার হোসেন
হাওলাদার বলেন, আমার বাড়ি আর পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থী হারিছুর রহমানের বাড়ি
একই গ্রামে।
উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মনির
হোসেনকে বিজয়ী ঘোষণার পর হারিছ পরাজিত হওয়ার জন্য আমাকে দায়ী করেন।
যেকারণে ৯ জুন রাতে হারিছ নিজে নেতৃত্ব দিয়ে তার সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে আমার
বাড়িতে ভাঙচুর শুরু করে।
এছাড়া গ্রামের ১৫টি বাড়ি ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট করা
হয়।
এ সময় একটি দোকান ও মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়।
সেই সাথে কুপিয়ে ও পিটিয়ে কমপক্ষে ১৫ জনকে আহত করা হয়েছে।
এবিষয়ে গৌরনদী মডেল থানার ওসি মোঃ
আনোয়ার হোসেন বলেন, এ ঘটনার এখনও কেউ থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেননি।
অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
শামীম আহমেদ