শুক্রবার, ১১ Jul ২০২৫, ১০:০৯ অপরাহ্ন
অনলাইন ডেক্স: বৃহস্পতিবার তারা নগরীর বঙ্গবন্ধু উদ্যানে অবস্থান নিয়েছেন; মাঠে ত্রিপল ও পলিথিন দিয়ে ছাউনী টানিয়ে রাত পার করছেন। শনিবার এখানে বরিশাল বিভাগীয় সমাবেশ। এর আগে চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, খুলনা ও রংপুর বিভাগীয় সমাবেশ হয়েছে। ওইসব সমাবেশের অভিজ্ঞতা থেকে দলটির কর্মী-সমর্থকরা আগেভাগে সমাবেশ স্থলে হাজির হন। ইতোমধ্যে ঝালকাঠি, ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনা ও বরিশালে পরিবহন ধর্মঘট ডাকায় ওইসব জেলা থেকে সামবেশে যোগ দিতে ইচ্ছুক নেতা-কর্মীরা বিপাকে পড়েছেন। বরগুনার আমতলী সদর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি আজিজ সরদার বলেন, কাল (শুক্রবার) থেকে সব যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যাবে।
তাই আজ (বৃহস্পতিবার) এসেছেন। আমতলী উপজেলা থেকে ‘সহস্রাধিক নেতা-কর্মী’ নিয়ে এসেছেন জানিয়ে আজিজ বলেন, সমাবেশ শেষ করে তারা নিজ এলাকায় ফিরে যাবেন। খাওয়া-দাওয়া মাঠে করবেন। পটুয়াখালীর গলাচিপা থেকে আসা জিলাম হাওলাদার বলেন, “কী করমু। সব কিছু তো বন্ধ হইয়া যাইবে। তাই আইজ আইয়া পড়ছি। মঞ্চের পিছনে জেলা প্রশাসক লেকের তীরে ওয়াকওয়ের উপর পলিথিন দিয়ে ছাউনী টানিয়ে নিচে বিছিয়ে থাকার ব্যবস্থা করেছেন।
গলাচিপা পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জিলাম বলেন, বিকল্প কোনো ব্যবস্থা না থাকায় তারা ২৫ জন দুই দিন আগে এসেছেন। সমাবেশ শেষ করে ফিরবেন। বৃহস্পতিবার সকালে ভোলা থেকে দোতলা লঞ্চ ও ট্রলার ভর্তি করে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী কীর্তনখোলা নদীর নগরীর মুক্তিযোদ্ধা পার্কে অবস্থান নিয়েছেন। চরফ্যাশনের দক্ষিণ চরমানিকা ইউনিয়ন যুবদলের সহ-সভাপতি আনসার উদ্দিন বলেন, “গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে সম্পৃক্ত হতে এসেছি। সমুদ্রগামী মাছের ট্রলার ভাড়া করে এসেছি। ১৮০ জন নেতাকর্মী সকলে দুই হাজার টাকা করে চাঁদা দিয়েছি। তা দিয়ে দুইদিনের খাবার এবং নৌযানের ভাড়া দেওয়া হবে।
পটুয়াখালীর কুয়াকাটা থেকে একটি বাস ভাড়া করে এসেছেন কিছু নেতাকর্মী। ওই বাসে ২শ নেতাকর্মী এসেছেন জানিয়ে মোফাচ্ছেল লিটু নামের একজন বলেন, “আমার কোনো দলীয় পদ নেই। মনের ভালোলাগা থেকে এসেছি।” ভোলা থেকে আসা মোশারেফ হোসেন আরিফ বলেন, “সবকিছু বন্ধ করে দেওয়ার কারণে আমরা দুই দিন আগে এসেছি। বরিশালে আত্মীয় স্বজনের বাসায় উঠেছি।” বরিশাল মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব জাহিদুল কবির বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বর্তমানে মাঠে নেতা-কর্মীদের মাঝে ঈদের আনন্দ বিরাজ করছে। সরকার বাধা দেওয়ায় সাধারণ মানুষের মাঝে আগ্রহ বেশি বেড়ে গেছে। তাই দুই দিন আগে থেকে মাঠে মানুষ জড়ো হচ্ছে।
এতে মঞ্চ নির্মাণের কাজ ধীরে এগুচ্ছে জানিয়ে জাহিদ বলেন, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মঞ্চ তৈরি সম্ভব হবে। বর্তমানে মঞ্চ তৈরির কাজ চলছে। বৃহস্পতিবার সরজমিনে দেখা গেছে, মঞ্চ এলাকার দুই পাশে নির্মিত ছাউনীর নিচে আশপাশে নেতা-কর্মীরা অবস্থান নিয়ে নানা শ্লোগান দিচ্ছেন। এছাড়াও ছোট ছোট গ্রুপে বিভক্ত হয়ে শলা-পরামর্শ ও মিছিল চলছে। বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে আসা নেতা-কর্মীরা রাতযাপনের জন্য মঞ্চের আশপাশে সুবিধাজনক স্থানে ছাউনী টানাতে দেখা গেছে।
গত ২৬ অক্টোবর ৫ দফা দাবিতে বরিশাল থেকে দূরপাল্লার ও অভ্যন্তরীণ রুটে যাত্রীবাহী বাসের চলাচল বন্ধের ঘোষণা দেয় বাস মালিক গ্রুপ। ৩১ অক্টোবর রাতে ৪ ও ৫ নভেম্বর বরিশাল জেলায় থ্রি-হুইলার চলাচল বন্ধের ডাক দেওয়া হয়। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বরিশাল-ভোলা নৌ রুটের ১৪টি লঞ্চের চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। একই সঙ্গে বন্ধ রয়েছে ভোলা থেকে স্পিডবোটের চলাচলও। বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি একেএম জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, “কারা কী ধর্মঘট ডেকেছে তা আমাদের জানা নেই। কারণ এর সঙ্গে আওয়ামী লীগের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। কিন্তু গণসমাবেশের নামে বরিশালের স্থিতিশীল পরিবেশকে অস্থিতিশীল করা হলে, তা রাজনৈতিকভাবেই মোকাবেলা করা হবে। এ জন্য আমরা প্রস্তুত।” বরিশাল মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. সাইফুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে পুলিশী নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার রয়েছে।
বিএনপির নেতৃবৃন্দের সাথে কথা হয়েছে। মাঠের নিরাপত্তা ব্যবস্থা তারা নিজেরাই করবে। যানবাহন বন্ধে গণসংহতি আন্দোলনের নিন্দা বিএনপির সমাবেশের আগে বিভাগের বিভিন্ন জেলায় যানবাহন বন্ধের ঘোষণায় গণসংহতি আন্দোলন নিন্দা জানিয়েছে। বৃহস্পতিবার গণসংহতি আন্দোলনের বরিশাল জেলা আহ্বায়ক দেওয়ান আবদুর রশিদ নীলু ও সদস্য সচিব আরিফুর রহমান মিরাজ এক যুক্ত বিবৃতিতে বলেন, টানা দুইদিন বাস, লঞ্চ ও থ্রি-হুইলার বন্ধের ঘোষণা দুরভিসন্ধিমূলক।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, এতে বরিশাল জেলা সারা দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। চিকিৎসা সেবাসহ জরুরি প্রয়োজনে মানুষ যাতায়াতে চরম ভোগান্তির শিকার হবে। তারা বলেন, অতীতে একই সাথে টানা দুই দিন সব বাহনের ধর্মঘাট কখনও দেখা যায়নি। কিন্তু আগামী ৪/৫ নভেম্বর ধর্মঘটসহ বরিশালের সকল হোটেল মোটেলের অবাসন ব্যবস্থাও সীমিত করা হয়েছে বলে গণমাধ্যমে জানা যাচ্ছে। “এহেন সিদ্ধান্ত জনভোগান্তি চরম পর্যায়ে নিয়ে যাবে বলে আমরা মনে করি। একই সাথে টানা দুই দিনে সকল যানবাহনের ধর্মঘটের নিন্দা জানাই।” নেতৃবৃন্দ উদ্দেশ্য প্রণোদিত এই ধর্মঘট অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবি জানান।