বুধবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০৯ পূর্বাহ্ন

সর্বশেষ সংবাদ :
বরিশাল মহানগর যুবদলের প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত কলাপাড়ায় সরকারি এম বি কলেজ মাঠ উন্মুক্ত করার দাবীতে মানববন্ধন কুয়াকাটায় বেড়িবাঁধ নির্মাণে সংরক্ষিত বনের বালু উত্তোলন, হুমকিতে সবুজ বেষ্টনী বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ, উপকূলে গুমট পরিবেশ চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নের রাস্তা সহ বিভিন্ন প্রকল্প পরিদর্শন করেন এলজিইডির টিম বাউফল নারীর বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতা নিয়ে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত বাউফলে ৮দিনের অভিযানে ১৯ জেলে আটক, প্রায় সাড়ে ৩ লক্ষ মিটার জাল জব্দ বাংলাদেশ মাধ্যমিক স্কুল শিক্ষক পরিষদ বরিশাল মহানগরীর প্রতিনিধি সমাবেশ কলাপাড়ায় নদী থেকে অবৈধভাবে মাটি কাটায় এক লাখ টাকা জরিমানা কুয়াকাটা পৌর বিএনপির অফিস ভাংচুর মামালায়, পৌর আওয়ামী লীগ সভাপতি সহ ৪ জন জেল হাজতে ডাকাত বাহিনীর প্রধান ২০মামলার আসামী জুয়েল মৃধা গ্রেপ্তার  কলাপাড়ায় এইচএসসিতে মহিপুর  মুক্তিযোদ্ধা মেমোরিয়াল ডিগ্রী কলেজ এগিয়ে ৫ দিন পাঞ্জা লড়ে মৃ-ত্যুর কাছে হার মানলেন সাবেক ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলাম উপকূলের শিশুদের সাঁতার প্রশিক্ষণ শেষে প্রতিযোগিতা মহিপুরে অর্থের অভাবে অন্ধ হতে বসেছে শিশু তাওহিদ, সাহায্যের আবেদন
পিরোজপুরের জীবনযুদ্ধে জয়ী পাঁচ নারীর গল্প

পিরোজপুরের জীবনযুদ্ধে জয়ী পাঁচ নারীর গল্প

Sharing is caring!

পিরোজপুর ইন্দুরকানী উপজেলায় শিক্ষা, চাকরি, অর্থ, সফল জননী, সমাজ উন্নয়ন ও নির্যাতনের বিভীষিকা কাটিয়ে উঠে নতুন জীবন শুরু করা ক্যাটাগরিতে সাফল্য অর্জনকারী জয়িতা নির্বাচিত হয়েছেন পাঁচ নারী।

স্বপ্নের ডানা মেলে নীল আকাশে ওড়ার সাধ আশৈশব লালিত। দারিদ্র্যপীড়িত সামাজিক সমস্যায় জর্জরিত দেশের দক্ষিণ অঞ্চলের অবহেলিত উপজেলা ইন্দুরকানীর বিভিন্ন গ্রামে তাদের জন্ম। আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধপক্ষ ও বেগম রোকেয়া দিবস ২০২১ উদযাপন উপলক্ষে জয়িতা অন্বেষণে বাংলাদেশ কার্যক্রমের আওতায় জয়িতা সম্মাননা শিক্ষা ও চাকরির ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য উপজেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ জয়িতা নির্বাচিত হলেন শারমিন হোসেন।

শিক্ষকতা পেশার পাশাপাশি তিনি সামাজিক ও আর্থসামাজিক উন্নয়নে তথা শিক্ষাবিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন। উপজেলার বিভিন্ন প্রান্তে নারীশিক্ষা সম্প্রসারণে তিনি রয়েছেন সদা সচেতন। অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জনকারী নারী নাজমুন নাহার মুকুল। তিনিও উপজেলার চন্ডিপুর গ্রামের ইব্রাহীম জোমাদ্দারের কন্যা। বিয়ের পরে এইচএসসি পাশ করে ডিগ্রিতে ভর্তি হয়েও শাশুড়ির অসহযোগিতার কারণে পড়াশুনায় আর এগোতে না পারলেও স্বপ্ন দেখতেন কী করে সমাজে নিজের একটা পরিচয় তৈরি করা যায়।

সেই লক্ষ্যে পরিবারের অমতে ঢাকায় এসএমই ফাউন্ডেশন থেকে ফ্যাশন ডিজাইনের উপর প্রশিক্ষণ নিয়ে গড়ে তোলেন ঐশী বুটিক হাউজ। সেখানে এলাকার সুবিধাবঞ্চিত মেয়েদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন। নাজমুন নাহার মুকুল যুব উন্নয়নে প্রশিক্ষণ নেন ব্লক বাটিকের উপর। নিজ পণ্য বিক্রয় করে অর্থনৈতিকভাবে সাফল্যও অর্জন করেছেন তিনি। ইন্দুরকানী গ্রামের মতিয়ার রহমানের মেয়ে মনিরা বেগম। মাত্র ১২ বছর বয়সে তার বিয়ে হয়।

বিয়ের এক বছর পরে শুরু হয় পারিবারিক নির্যাতন। শাশুড়ি ছিল তার স্বামীর সৎমা। মনিরার স্বামীকে বিভিন্নভাবে কুপরামর্শ দিয়ে মনিরার উপরে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন শুরু করে দেয়। এরই মধ্যে মনিরার কোলজুড়ে এল তিনটি কন্যাসন্তান। পরে স্বামীর চাহিদা অনুযায়ী আরও দুটি সন্তান জন্ম দিতে হয়েছে মনিরার। এত বড় সংসার চালাতে হিমশিম খেতে লাগলেন তারা। মনিরা তার স্বামীকে বুঝিয়ে শুরু করলেন কাগজের ঠোঙা তৈরির কাজ। আয় থেকে তার সন্তানদের মানুষ করে তুলেছেন। বড় মেয়েকে এইচএসসি, মেজ মেয়েকে এসএসসি, সেজ কন্যাকে অনার্স করিয়ে মাস্টার্স করিয়েছেন এবং ছেলেকে মেট্রিক পাশের পরে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। তাঁর ছোট মেয়ে বর্তমানে দশম শ্রেণিতে পড়ে।

আরেক সফল নারীর নাম উম্মে ছালমা আক্তার। ইন্দুরকানী উপজেলার কালাইয়া গ্রামের আবু ছালেহ মো. আ. রশিদের মেয়ে। অভাবের সংসারে বেড়ে উঠেন অনেক কষ্ট করে। বাবা ছিলেন মাদরাসার শিক্ষক। আয় তেমন ছিল না, তাই তাড়াতাড়ি বিয়ে দিয়ে দেন। স্বামীর বাড়িতেও তেমন ভালভাবে কাটাতে পারেননি ছালমা।

শাশুড়ি ও ননদের নির্যাতন সহ্য করেন। এর মধ্যেই প্রথম সন্তান গর্ভে আসে। শাশুড়ির নির্যাতন তখন আরও বেড়ে যায়। এমনকি গায়ে হাত পর্যন্ত ওঠে। পরে তার স্বামী তাকে সাথে নিয়ে বাড়ি ছাড়েন। তাদের দুইটি সন্তান হয়। স্বামী শাহিন মাতুব্বর ডাকাতদের হাতে নিহত হলে তিনি গ্রামে এসে উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার অফিসে ফ্যাশন ডিজাইনের উপর প্রশিক্ষণ নেন।

এরপর টেইলারিংয়ের দোকানে কাজ করেও সন্তানদের লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছেন। উপজেলার পাড়েরহাট ইউনিয়নের লাবনী আক্তার সমাজ উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকায় জয়িতা নির্বাচিত হয়েছেন। লাবনী আক্তার তালাকপ্রাপ্ত এক হতভাগ্য নারী। লাবনীর বাবা যৌতুকের টাকার জন্য তার মাকে তালাক দেন। সেই থেকে বাবার আদর-স্নেহ থেকে বঞ্চিত।

মায়ের অন্যত্র বিয়ে হয়। লাবনী চলে যান তার খালার কাছে। তার খালাকেও যৌতুকের জন্য স্বামীর ঘর ছাড়তে হয়েছিল। এরপর অনেক কষ্ট করে লেখাপড়া চালিয়েছেন। টিউশনি করেছেন। খেয়ে না খেয়ে বর্তমানে লাবনী অনার্স করছেন।

লেখাপড়ার পাশাপাশি তিনি বাল্যবিয়ে, যৌতুক, নারী নির্যাতন ও সমাজের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে কাজ করছেন। তাঁর স্বপ্ন, এ দেশে একদিন যৌতুকের জন্য আর কারও ঘর ভাঙবে না। নারী নির্যাতন যেন দূর হয় সমাজ ও রাষ্ট্র থেকে।

নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন




© All rights reserved © crimeseen24.com-2024
Design By MrHostBD