শনিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ০২:৩৯ অপরাহ্ন

সর্বশেষ সংবাদ :
বেতন স্কেল বাস্তবায়নের দাবিতে বরিশালে সার্ভেয়ারদের কর্মবিরতি টাকা ছাড়া দেখা যায় না সন্তানের মুখ মহিলা লীগ নেত্রীর বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন মেহেন্দিগঞ্জে নয়নের হাত বিচ্ছিন্ন করা মামলার আসামী শুভকে জেল হাজতে প্রেরন রাসুলুল্লাহ সা.কে কুটুক্তিকারীদের বিচারের দাবীতে বরিশালে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ কলাপাড়ায় টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবীতে জোয়ারের পানিতে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ কলাপাড়ায় স্বেচ্ছায় ১ লাখ তালের চারা রোপন করছেন এক কৃষক অনিয়ম ও অভিযোগের পাহাড় প্রধান শিক্ষক জুনায়েত খানের বিরুদ্ধে কলাপাড়ায় তিন ব্যবসায়ীকে ভ্রাম্যমান আদালতের অর্থদন্ড কলাপাড়ায় ৫১তম গ্রীষ্মকালীন জাতীয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতা’র প্রস্তুতিমূলক সভা অনুষ্ঠিত কুয়াকাটা সৈকত থেকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় এক যুবক উদ্ধার আ. লীগের ৩০০ নেতাকর্মীর নামে পৃথক ২ মামলা কলাপাড়ায় শিক্ষকের অকাল মৃত্যুতে শোকসভা অনুষ্ঠিত সবাইকে কাঁদিয়ে বিদায় নিলেন কর্মবীর ইউএনও মহিউদ্দিন আল হেলাল বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন প্রক্টর ড. রাহাত
দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই চলবে

দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই চলবে

Sharing is caring!

দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর অবস্থানের কথা পুনর্ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে এবং অর্জনগুলো সমুন্নত রাখতে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই চলবে। একই সঙ্গে নির্বাচনে জনগণের কাছে দেওয়া ওয়াদা পূরণে কাজ করার জন্য  কর্মকর্তাদের তাগাদা দিয়েছেন তিনি।

গত সোমবার টানা তৃতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার পর গতকাল রবিবার প্রথম নিজ কার্যালয়ে গিয়ে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যদিও কোনো দেশের পক্ষেই শতভাগ দুর্নীতি নির্মূল করা সম্ভব নয়, তবে আমাদের সরকারের একটা দায়িত্ব হলো এই দুর্নীতি প্রতিরোধ করা, যাতে এটি দেশের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করতে না পারে এবং আমাদের সব সাফল্য ম্লান করে না দেয়।’

শেখ হাসিনা জোর দিয়ে বলেন, ‘সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ, দুর্নীতি ও মাদক নির্মূলের ক্ষেত্রে আমাদের যুদ্ধ অব্যাহত থাকবে। তার জন্য আমাদের এই অফিসটা, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের দায়িত্ব কিন্তু অনেক বেশি।’ তিনি বলেন, ‘টেন্ডার ছিনতাইয়ের ঘটনা দেশে বারংবার ঘটেছে। কিন্তু আমরা দেশকে এই অবস্থা থেকে মুক্ত করতে পেরেছি। প্রযুক্তির বদৌলতে এই সাফল্য এসেছে এবং এটা ডিজিটাল বাংলাদেশের একটা ভালো ফল।’


সরকারি কর্মকর্তাদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যে ওয়াদা আমরা জাতির কাছে দিয়ে এসেছি, সেটা বাস্তবায়ন করতেই হবে। এটা করতে হলে কাজ করতে হবে। সে জন্য নির্বাচনী ইশতেহারকে আমরা গুরুত্ব দেই। ক্ষমতাটা শুধু চেয়ারে বসে ভোগ করা নয়, এটা জনগণের কাছে দায়িত্ববোধ।’

প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করতেও নিজের কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমি অনুরোধ করব, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে আমরা যে প্রকল্পগুলো গ্রহণ করেছি, সেগুলো বাস্তবায়ন করা বা অন্যান্য ক্ষেত্রে দেশে শান্তি, নিরাপত্তা রক্ষা করা।’ তিনি নিজেও আবার বিভিন্ন মন্ত্রণালয় পরিদর্শন শুরু করবেন বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।

সকালে ঢাকা সেনানিবাসে শিখা অনির্বাণে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে স্বাধীনতাযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী সশস্ত্র বাহিনীর শহীদ সদস্যদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান শেখ হাসিনা। সশস্ত্র বাহিনী বিভাগে নিজের কার্যালয়ে প্রথম কর্মদিবসের প্রথম ভাগ কাটান প্রধানমন্ত্রী। পরে সেখান থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আসেন তিনি। কার্যালয়ের ক্যাবিনেট কক্ষে প্রধানমন্ত্রীকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তারা।

শেখ হাসিনা তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘২১ বছর যারা ক্ষমতায় ছিল, আমরা ১০ বছরে যা উন্নতি করতে পারলাম, তারা কেন তা করতে পারেনি। এ প্রশ্নের উত্তর যখনই খুঁজতে যাই তখনই মনে হয়, আসলে যারা স্বাধীনতাই চায় নাই তারা তো আর দেশের উন্নতি করবে না। করতে চায় না। তাদের কাছে ক্ষমতা ছিল একটা লোভের মতো।’ তিনি বলেন, ‘একটা জাতিকে সামনের দিকে নিয়ে যেতে হলে তার একটা ভিশন থাকতে হবে, দিকনির্দেশনা থাকতে হবে, লক্ষ্য ও পরিকল্পনা থাকতে হবে। সেটা না থাকলে কোনো দেশ এগোতে পারবে না।’

বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার ওপর গুরুত্ব দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তাল মিলিয়ে চলতে হলে কোন দেশ উন্নত হলো, উন্নত দেশের দিকে মুখ করে তাকিয়ে থাকলে হবে না। আমাদের নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে। আমরা চেষ্টা করব, নিজের পায়ে দাঁড়াব, আমরা আত্মমর্যাদা নিয়ে চলব। অন্য দেশ যদি পারে, আমরা পারব না কেন? আমাদের কিসের অভাব? কোনো অভাব নেই।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের শুধু উদ্যোগের অভাব, উদ্যমের অভাব, কাজ করার অভাব। তো সেই জায়গায়টায় আমরা যখনই এসেছি, দিনরাত পরিশ্রম করেছি। সবাই তো বলছে, আপনারা এত খাটেন কেন? খাটাটা তো আমার নিজের জন্য নয়, খাটি দেশের জন্য, মানুষের জন্য।’ তিনি বলেন, ‘বিশ্ব এগিয়ে যাচ্ছে। নতুন নতুন প্রযুক্তি আসছে, প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে। অন্যান্য দেশ অনেক এগিয়ে যাচ্ছে। আমরাও সেইভাবে সমানতালে এগোতে কেন পারব না? সেদিকে লক্ষ রেখেই কিন্তু আমরা প্রত্যেকটা পদক্ষেপ নিয়েছি, পরিকল্পনা নিয়েছি।’

আশু করণীয় বিষয়গুলো ঠিক করার পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘সুপরিকল্পিতভাবে কাজ করতে পারলেই যে একটা অর্জন করা যায়, সেটা আমরা প্রমাণ করেছি।’ দেশকে উন্নয়নের একটা পর্যায়ে নেওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আজকে কিন্তু সেই জায়গায় আমরা এসে গেছি। এত অল্প সময়ের মধ্যে এই যে আমরা উন্নতিটা করে একটা উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে স্বীকৃতিটা পেয়েছি। উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি ধরে রেখে এগিয়ে যেতে হবে। আমরা আমাদের কাজের মধ্য দিয়ে অন্তত এটুকু বলতে পারি যে আমরা জনগণের আস্থা, বিশ্বাস অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি।’

অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের গণতন্ত্রের বয়স ‘খুবই নতুন’ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘পৃথিবীর বহু দেশে ২০০ থেকে ৩০০ বছর ধরে গণতন্ত্র চর্চা করে আসছে। তাদের ওখানেও কি গোলমাল হয় না? গোলমাল আছে, দ্বন্দ্ব আছে—সবই আছে। আমাদের বিশাল জনগোষ্ঠী। তার পরও আমরা সেই মানুষগুলোকে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। তাদের ভাগ্য পরিবর্তনে কাজ করছি।’ এক হয়ে কাজ করা বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য খুবই জরুরি মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘এ দেশের উন্নতি হলে নিজের পরিবার, প্রতিবেশী সকলেরই উন্নতি। তাহলে আমাদের এই দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকবে কেন? অহমিকাবোধ থাকবে কেন? সবাই মিলে কাজ করলে একটা দেশ যদি উঠে আসে, সেটাই করতে হবে।’ আর কখনো যেন স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি রাষ্ট্রক্ষমতায় আসতে না পারে সেই প্রত্যাশা রেখে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারাই আসুক স্বাধীনতার সপক্ষের। স্বাধীনতার চিন্তা-চেতনায় বিশ্বাস করবে। স্বাধীনতার চিন্তা-চেতনায় বিশ্বাস করেই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।’

প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন। শুরুতেই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজিবিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ একটি উপস্থাপনায় নির্বাচনী ইশতেহার ও এসডিজি বাস্তবায়নে কর্মসূচি তুলে ধরেন।

সশস্ত্র বাহিনী বিভাগে অফিস করলেন প্রধানমন্ত্রী : আইএসপিআর জানায়, চতুর্থবারের মতো সরকারপ্রধান হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শপথগ্রহণের পর গতকাল সকালে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগে তাঁর নিজ কার্যালয়ে প্রথম অফিস করেন। এ সময় সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ, নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল নিজামউদ্দিন আহমেদ, বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল মাসিহুজ্জামান সেরনিয়াবাত ও সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও) লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. মাহফুজুর রহমান প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।

প্রধানমন্ত্রী সশস্ত্র বাহিনী বিভাগে পৌঁছলে তাঁকে অভ্যর্থনা জানান সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার ও মহাপরিচালকরা। প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক এ সময় উপস্থিত ছিলেন। পরে প্রধানমন্ত্রী সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের মাল্টিপারপাস হলে দপ্তরের সর্বস্তরের কর্মকর্তা ও অন্যান্য পদবির সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময়ের পর চা-চক্রে অংশ নেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর সফরসঙ্গীসহ তিন বাহিনীর প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন।

একই দিন সকালে মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী সশস্ত্র বাহিনীর শহীদ সদস্যদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী ঢাকা সেনানিবাসের শিখা অনির্বাণে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। শিখা অনির্বাণে এসে পৌঁছলে তাঁকে স্বাগত জানান তিন বাহিনীর প্রধানরা ও সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার। এ সময় সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল তাঁকে গার্ড অব অনার প্রদান করে। পুষ্পস্তবক অর্পণের পর প্রধানমন্ত্রী শিখা অনির্বাণে রাখা পরিদর্শন বইয়ে স্বাক্ষর করেন। এ সময় সশস্ত্র বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।

নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন




© All rights reserved © crimeseen24.com-2024
Design By MrHostBD