রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ০৭:৪২ পূর্বাহ্ন
তন্ময় তপু: বরিশালে ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ব্যবসা প্রতারণার শীর্ষ পর্যায়ে চলে গেছে। ভুয়া রিপোর্ট দিয়ে রোগীদের জিম্মি করে অর্থ আদায়ের বিষয়টি অহরহ। রাজধানীর জিকেজি ও রিজেন্ট কেলেংকারির পর নড়ে চরে বসেছে বরিশাল স্বাস্থ্য বিভাগ। ইতিমধ্যে অভিযান শুরু করেছে র্যাব ও পুলিশ। তবে এর মধ্যেও অসাধু উপায়ে অর্থ উপার্জনের সুযোগ ছাড়ছে না অসাধু ডায়াগনস্টিক মালিকরা। সম্প্রতি এক ব্যক্তি একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রক্তের গ্রুপের পরীক্ষা করতে গিয়েও হয়েছেন প্রতারণার শিকার।
জানা গেছে, পটুয়াখালী বাউফল এলাকার বাসিন্দা ৮৫ বছর বয়সী হরিপদ সাহাকে নিয়ে তারা বরিশালে ডাঃ শিহাব উদ্দিন শিহাবকে দেখান স্বজনরা। এরপর ডাক্তারের পরামর্শ মোতাবেক রক্তের গ্রুপ নির্নয়ের পরীক্ষা দেয়া হয়। ২৪ জুলাই নগরীর বাটারগলির কনিকা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গ্রুপ নির্নয় করান এবং সন্ধ্যা ৬টা ৩৯ মিনিটে দেয়া রিপোর্টে রক্তের গ্রুপ ‘বি পজিটিভ’ আসে। তবে স্বজনদের বিষয়টি নিয়ে একটু খটকা লাগলে আবারো রক্তের গ্রুপ নির্নয় করার জন্য বললে ২৫ জুলাই বেলা ১১টা ৪৯ মিনিটে দেয়া রিপোর্টে হরিপদ সাহার রক্তের গ্রুপ আসে ‘এ পজিটিভ’। রিপোর্ট দুটিতেই স্বাক্ষর রয়েছে প্রফেসর ডাঃ মোঃ জাহাঙ্গীর আলমের। এছাড়া দুটি রিপোর্টই তৈরী করেছেন মিঠুন এবং মেশিন ব্যবহার করেছেন এ মজুমদার নামের ব্যক্তি।
হরিপদ সাহার স্বজনরা জানান, প্রথম রিপোর্টে যদি আমাদের সন্দেহ না থাকতো তাহলে তো আমরা সেটা নিয়ে চিকিৎসকের কাছে যেতাম। রোগী সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান যদি এমন প্রতারণা করে তাহলে মানুষ যাবে কোথায়।
তবে প্রতারণার বিষয়টি অস্বীকার করে কনিকা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শোভন কুমার দাস বলেন, এটা অনাকাঙ্খিত ভুল। দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও আশ্বাস দেন এই ব্যক্তি।
ফয়সাল আহম্মেদ নামে এক ব্যক্তি জানান, বরিশাল নগরীর অলি গলিতে গড়ে উঠেছে ডায়াগনস্টিক সেন্টার। আর সেসব ডায়াগনস্টিক সেন্টারে একবার রোগী নিতে পারলে কমপক্ষে ৫ থেকে ৬হাজার টাকার টেস্ট দিয়ে থাকেন ডায়াগনস্টিকে থাকা চেম্বারের ডাক্তাররা। গরীব ও অসহায় মানুষদের টাকা প্রতারণা করে নিয়ে যাচ্ছে এসব প্রতারকরা। পুলিশ ও কিছু অসাধু লোকদের ম্যানেজ করেই এসব প্রতিষ্ঠান চলছে। লাইসেন্স না থাকলেও বেশিরভাগ ডায়াগনস্টিক সেন্টারই চলে দালাল নির্ভর। আবার এমন ডায়াগনস্টিকও রয়েছে যাদের চিকিৎসক নেই, টেকনিশিয়ান নেই। নিজেই মালিক, নিজেই চিকিৎসক আবার নিজেই টেকনিশিয়ানের কাজ করছে। এমন ডায়াগনস্টিক সেন্টারের অভাব নেই বরিশাল নগরীতে।
এদিকে স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ৫৮ বর্গ কিলোমিটারের নগরীতে ১১৬টি রয়েছে ডায়াগনস্টিক সেন্টার, যার মধ্যে লাইসেন্স রয়েছে ২৮টির এবং প্রাইভেট হাসপাতালের সংখ্যা ৩৯টি, লাইসেন্স রয়েছে ১১টি। বরিশাল বিভাগের মধ্যে সব থেকে বেশি ডায়াগনস্টিক সেন্টার পটুয়াখালী জেলায়। ১৬৭টি ডায়াগনস্টিকের মধ্যে লাইসেন্স রয়েছে মাত্র ৩০টির। এই জেলায় হাসপাতাল সংখ্যা ৫৩টি, লাইসেন্স রয়েছে ১২টির। বরিশাল জেলায় ডায়াগনস্টিক সেন্টার ১৪৬টি, লাইসেন্স রয়েছে ৬২টির এবং হাসপাতাল ৫৩টি, লাইসেন্স রয়েছে ২৭টির। ভোলায় ডায়াগনস্টিক ৮৭টি, লাইসেন্স রয়েছে ৪৬টির ও হাসপাতাল ৩১টির মধ্যে লাইসেন্স রয়েছে ১২টির, বরগুনায় ৬০ ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মধ্যে লাইসেন্স রয়েছে ১৮টির ও ২৪ হাসপাতালের মধ্যে বৈধতা রয়েছে ৮টির, পিরোজপুরে ৯৪ ডায়াগনস্টিকের মধ্যে লাইসেন্স রয়েছে ১৭টি এবং ৪৬ হাসপাতালের মধ্যে ১৫টির বৈধতা রয়েছে। এছাড়া ঝালকাঠিতে ৩১ প্রাইভেট ডায়াগনস্টিকের মধ্যে ৮টি বৈধ এবং ১৪টি হাসপাতালের মধ্যে ৩টি বৈধ রয়েছে।
বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য সহকারি পরিচালক শ্যামল কৃষ্ণ মন্ডল বলেন, এই পর্যন্ত সিটি কর্পোরেশনের মধ্যে ৫২টি ডায়াগনস্টিক ও হাসপাতাল চেক করেছি। বাকিগুলো শীঘ্রই করা হবে। এছাড়া যাদের বৈধতা নেই তাদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি বলেন, অনেকে মনে করেন আবেদন করলেই মনে হয় বৈধতা হয়ে গেলো। আসলে বিষয়টা তা নয়। যে প্রতিষ্ঠানগুলো লাইসেন্স এখনো পায়নি সেগুলো অবৈধ হিসেবেই ধরা হচ্ছে।
সূত্র: যুগান্তর