সোমবার, ২১ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:৪৬ পূর্বাহ্ন
শফিক মুন্সি: বরিশাল জেলায় গত বছরের তুলনায় প্রায় আট হাজার মেট্রিক টন ইলিশ বেশি আহরিত হয়েছে। এই রেকর্ড সংখ্যক ইলিশ আহরণের পেছনে জাটকা নিধন প্রতিরোধ ও মা ইলিশ রক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। অন্যদিকে দেশের অন্যতম মৎস্য সম্পদ চিংড়ি উৎপাদনে সাফল্য দেখিয়েছে এখানকার দুটি উপজেলা। সাধারণত এই অঞ্চলের মৎস্য চাষীদের কাছে চিংড়ি চাষ জনপ্রিয় নয়। তবে এখানকার সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে স্বাদু পানির চিংড়ি চাষে বরিশালে রয়েছে অপার সম্ভাবনা।
বরিশাল জেলা বিধৌত ১২টি নদীর আয়তন এক লক্ষ তিন হাজার দুইশত উনপঞ্চাশ হেক্টর। এসব নদী থেকে গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৪২ হাজার ৩৮৮ মেট্রিক টন ইলিশ আহরোণ হয়েছিলো। চলতি বছরে এই পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে পঞ্চাশ হাজার মেট্রিকটন। আর এই সাফল্যের পেছনে মা ইলিশ রক্ষা ও জাটকা নিধন প্রতিরোধে বিভিন্ন কার্যক্রমকে প্রধান কারণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
বিশেষ করে গত অর্থবছরে বরিশাল জেলায় মা ইলিশ রক্ষায় সরকার নির্ধারিত সময়ে অবৈধভাবে মাছ শিকারের অপরাধে ৮৭৩ টি মামলায় ৫৭১ জনকে কারাদণ্ড দিয়েছিলো প্রশাসন।এছাড়া এসব অপরাধে ২৪ লক্ষ ১৬ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়। যা ছিলো গত বছরে দেশের সকল জেলার মধ্যে সর্বোচ্চ পরিমাণ জরিমানার রেকর্ড।
একই সঙ্গে জাটকা নিধন প্রতিরোধে ৪২৪ টি মামলায় ৩২৫ জনকে কারাদণ্ড দেয়া হয় গতবছর। একই সঙ্গে জাটকা রক্ষায় ৫ লক্ষ ৯০ হাজার ৮০০ টাকা জরিমানা করা হয়। এসব কারণে বরিশাল জেলায় এ বছর রেকর্ড সংখ্যক ইলিশ উৎপাদন সম্ভব হয়েছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
অন্যদিকে, জেলার দশটি উপজেলায় সরকারি ২৭৮ টি ও বেসরকারি ৬৭ হাজার ৯৬৩ টি বদ্ধ জলাশয় রয়েছে।এগুলোর মোট আয়তন আট হাজার আটশো একান্ন দশমিক সাতাশি হেক্টর। এগুলোর মধ্যে আগৈলঝাড়া ও উজিরপুর উপজেলার বিভিন্ন জলাশয়ে স্বাদু পানির গলদা চিংড়ি পালনে সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন জেলার মৎস্য বিভাগ। জেলার নিবন্ধিত ৪৪ হাজার ৪২৩ জন মৎস্য চাষী সহ অন্যান্যদের মাঝে চিংড়ি চাষ জনপ্রিয় করার ব্যাপারে সহযোগী মনোভাব প্রকাশ করেছে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের উর্ধতনরা।
এসব ব্যাপারে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা কৃষিবিদ আবু সাইদ জানান, এই মৌসুমে জাটকা নিধন প্রতিরোধ ও মা ইলিশ রক্ষায় কঠোর নজরদারি রেখেছে জেলা প্রশাসন ও জেলা মৎস দপ্তর। যে কারণে ইলিশের ব্যাপক উৎপাদন সম্ভব হয়েছে।অন্যদিকে জেলার দুটি উপজেলায় (আগৈলঝাড়া ও উজিরপুর) বিগত কয়েক বছর যাবৎ চিংড়ি উৎপাদন বাড়ছে। জেলার নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত মৎস্য চাষীদের যদি চিংড়ি চাষের ব্যাপারে উৎসাহী করা যায় তবে ব্যাপক সম্ভাবনা ও সাফল্য ভবিষ্যতের জন্য অপেক্ষা করছে বলে মনে করেন এই কর্মকর্তা। আর এজন্য জলাশয় সংস্কারের মাধ্যমে মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধি ও ইউনিয়ন পর্যায়ে মৎস্য প্রযুক্তি সেবা সম্প্রসারণের প্রতি জোর দেন তিনি।
এ ব্যাপারে বরিশােলের জেলা প্রশাসক এস এম অজিয়র রহমান জানান, মা ইলিশ রক্ষা ও ঝাটকা নিধন বন্ধে যথেষ্ট সোচ্চার ছিলেন তারা। এ কারণে ইলিশের বৃহৎ আহরোণ সম্ভব হয়েছে। বর্তমানে সরকার ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধিতে যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে বরিশালে সংশ্লিষ্টরা যদি সেগুলো বাস্তবায়নে তৎপর হয় তবে আরো বেশি ইলিশ এ জেলায় উৎপাদন সম্ভব।
এছাড়া তিনি বলেন,‘দেশে যেসকল অর্থকারী মৎস্য সম্পদ আছে তার মধ্যে চিংড়ি অন্যতম।বরিশালে জলাশয় এবং পানির কোন অভাব নেই।স্বাদু পানিতে যে ধরণের চিংড়ি পালন করা যায় সেটা এখানে বৃহদাকারে উৎপাদন সম্ভব। এ ব্যাপারে এখানকার মৎস্য চাষীদের নজর দেয়া উচিত। চিংড়ি চাষে সংশ্লিষ্ট মৎস্য বিভাগ ও জেলা প্রশাসন সব রকম সহায়তা করবে বলেও জানান এই কর্মকর্তা’