সোমবার, ২১ এপ্রিল ২০২৫, ১২:৩৭ পূর্বাহ্ন

সর্বশেষ সংবাদ :
নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎসব ২০২৫: টেকসই ভবিষ্যতের প্রত্যয়ে আয়োজন পটুয়াখালীতে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মানববন্ধন ও স্মারক লিপি প্রদান বাউফলে মায়ের সাথে খেলতে গিয়ে ছিটকে পড়ে শিশুর মৃত্যু কুয়াকাটায় চলছে ৩দিন ব্যাপী রাখাইনদের ঐতিহ্যবাহী সাংগ্রাই জলকেলি উৎসব সিদ্দিক সভাপতি, মিজান সম্পাদক। মহিপুর থানা যুবদলের দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত গৃহবধূ হত্যা মামলার আসামীদের গ্রেফতারের দাবিতে কুয়াকাটায় মানববন্ধন গৌরনদীতে চোর সন্ধেহে গনপিটুনিতে আহত যুবকের দুইদিন পর মৃত্যু কুয়াকাটায় আগুনে পোঁড়া বন পরিদর্শন কলাপাড়ায় পরীক্ষা কেন্দ্রে নকলে সহায়তার দায়ে দুই শিক্ষককে অব্যাহতি সড়ক সংস্কারের দাবীতে এলাকাবাসীর মানববন্ধন বিক্ষোভ মিছিল বাড়িতে ছাগল ঢোকাকে কেন্দ্র করে দুই প্রতিবেশীর সংঘর্ষ, আহত-৪ বরিশালে ৬ দফা দাবিতে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ বরিশালের জেলা সাব রেজিস্ট্রি অফিসে উৎস করের নির্ধারিত ফি কম নিয়ে দলিল রেজিষ্ট্রেশন করার প্রমান পেয়েছে দুদক কলাপাড়ায় কৃষকদের অবস্থান ধর্মঘট ও স্মারকলিপি প্রদান কলাপাড়ায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে বিএনপি কার্যালয়সহ ৫টি দোকান ভস্মীভূত
অবৈধ ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিকে ছেয়ে গেছে বরিশাল : রোগী দেখেন মৃত ডাক্তার !

অবৈধ ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিকে ছেয়ে গেছে বরিশাল : রোগী দেখেন মৃত ডাক্তার !

Sharing is caring!

তন্ময় তপু: বরিশালে প্রতারণার মাধ্যমে চলছে অধিকাংশ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। অনেকের নেই চিকিৎসক, আবার নেই টেকনিশিয়ানও। সাইনবোর্ড টানিয়ে নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করেই প্রতারণার মাধ্যমে ব্যবসা পরিচালনা করছে এসব ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিকরা। এমনকি মৃত ডাক্তারের স্বাক্ষরেও দেয়া হচ্ছে প্যাথলজি রিপোর্ট। এসব বিষয় দীর্ঘদিন ধরে চলে আসলেও বর্তমানে টনক নড়েছে স্বাস্থ্য বিভাগের। অভিযান চালাচ্ছে জেলা প্রশাসন। ইতিমধ্যে নগরীর দুইটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে সীলগালা ও চিকিৎসক সহ ৭ জনকে দেয়া হয়েছে কারাদন্ড। পাশাপাশি এসব প্রতিষ্ঠানের হালনাগাদ কাজও শুরু করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ।

বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, বরিশাল জেলা সহ পুরো নগরীতে দালাল নিয়ন্ত্রিক ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পরিমানই বেশি। যাদের বেশিরভাগেরই বৈধ কাগজপত্র নেই। স্বাস্থ্য বিভাগের কিছু কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর কিছু সদস্যকে ম্যানেজ করে এই ব্যবসা পরিচালনা করে বহু ডায়াগনস্টিক ও ক্লিনিক মালিক। নগরীর সদর রোড, গীর্জা মহল্লা মোড়, আগরপুর রোড, কাকলির মোড়, বাটারগলি, বিবির পুকুর পার, অশ্বিনী কুমার হল চত্বর, শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে এবং বরিশাল জেনারেল হাসপাতালের সামনে ডায়াগনস্টিক ও ক্লিনিকের দালাল চক্র সব সময়ই অবস্থান করে থাকে। নির্দিষ্ট পার্সেন্টেজে তারা নির্ধারিত এসব অবৈধ প্রতিষ্ঠানে রোগীদের ভুল বুঝিয়ে নিয়ে যায় এবং সেখানে গিয়েই প্রতারণার শিকার হয় হাজার হাজার রোগী। এছাড়া শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও জেনারেল হাসপাতালের কয়েকজন চিকিৎসক ও কর্মচারী এসব ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে মাস শেষে পার্সেন্টিজ পেয়ে থাকায় এসব প্রতিষ্ঠান মালিকদের আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়না। ব্লাডের স্যাম্পল এসব ডায়াগনস্টিকে নেয়া হলেও টেস্ট হয় না। রিপোর্ট দেয়া হয় ভুয়া চিকিৎসকের জাল স্বাক্ষর দিয়ে।

সূত্রে জানা যায়, সিটি কর্পোরেশন ব্যতীত শুধু বরিশাল জেলায় ১২৭টি বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ল্যাব ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে। এর মধ্যে লাইসেন্স রয়েছে মাত্র ৮৬টির। বাকিগুলোর মধ্যে ১৪টি বন্ধ হয়ে গেছে, ১৭টি আবেদনবিহীন অবস্থাতেই রয়েছে। আর আবেদনবিহীনগুলোর মধ্যে মোট ১৩টি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে গৌরনদী ও আগৈলঝাড়া উপজেলায়।

জেলা সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে, কাগজপত্র হালনাগাদ বা সর্বশেষ অর্থবছর পর্যন্ত নবায়নকৃত অবস্থায় রয়েছে মাত্র ২৮টি বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ল্যাব ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। আর বাকি সেন্টারগুলোকে কাগজপত্র হালনাগাদ করতে লিখিত চিঠি দিয়েছে জেলা সিভিল সার্জন অফিস। এর মধ্যে দুই বা তার অধিক অর্থবছর ধরে লাইসেন্স নবায়ন না করা প্রতিষ্ঠানও রয়েছে।
অপরদিকে বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বরিশাল সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ৩৯টি বেসরকারি ক্লিনিক-হাসপাতাল রয়েছে, এরমধ্যে ১১টির লাইসেন্স আছে। সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ১১৬টি বেসরকারি ল্যাব-ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে, যার ২৮টির লাইসেন্স রয়েছে।

আবেদনের হিসাব অনুযায়ী গোটা বরিশাল বিভাগের ৬ জেলায় প্রায় সাড়ে ৯শ’ হাসপাতাল, ক্লিনিক, ল্যাব ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৩শ’ প্রতিষ্ঠানের বৈধ কাগজপত্র রয়েছে।

স্বাস্থ্য দফতরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অভিযোগ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক ব্যবসার সাথে স্থানীয় প্রভাবশালী ও ক্ষমতাসীনরা জড়িত থাকায় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানকে কঠোরভাবে কিছু বলা সম্ভব হয় না। যদিও বিপরীত সূত্র বলছে, কাগজপত্রবিহীন কিংবা হালনাগাদ বিহীনভাবে ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের কারো না কারো হাত ধরেই দিনের পর দিন তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এতে আর্থিক লেনদেনের বিষয়টিকে মুখ্য হিসেবেই দেখা হয়।

পুলিশের একটি সূত্র জানায়, ব্যাঙের ছাতার মতো বেসরকারি পর্যায়ে হাসপাতাল, ক্লিনিক, ল্যাব ও ডায়গনস্টিক সেন্টার গজিয়ে ওঠায় স্বাস্থ্য খাতে দালাল চক্রের তৎপরতা বেড়েছে। প্রায়ই দেখা যায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে রোগীদের ভুল ভাল বুঝিয়ে ভাগিয়ে নেয়ার কাজে নিয়োজিত দালালদের আটকের খবর। অনেক সময় ডায়াগনস্টিক সেন্টার পরিবর্তনে পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্টও তারতম্য ঘটছে। বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যুর অভিযোগও পাওয়া যাচ্ছে।

ইতিমধ্যে বরিশাল জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা র‌্যাব ও পুলিশ সদস্যদের নিয়ে এসব ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অভিযান শুরু করেছে। বুধবার নগরীর জর্ডন রোড এলাকায় অভিযান চালিয়ে সেন্ট্রাল ডায়াগনস্টিক সেন্টারের দুই মালিক ও ভুয়া ডিগ্রিধারী এক চিকিৎসককে ছয় মাসের কারাদন্ড দেয় ভ্রাম্যমান আদালত। অভিযান চালানো নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জিয়াউর রহমান জানান, মৃত ডাক্তারের স্বাক্ষর ব্যবহার করে এই ডায়াগনস্টিক থেকে প্যাথলজি রিপোর্ট দেয়া হতো এবং এক চিকিৎসককেও আটক করা হয় যে তার নামের পর ভুয়া ডিগ্রি ব্যবহার করে আসছিলো। পাশাপাশি করোনায় মৃত্যু হওয়া এক চিকিৎসকের নাম একাধিক সাইনবোর্ডে ব্যবহার করে আসছিলো ডায়াগনস্টিক সেন্টারটির মালিকরা। তাদের কারাদন্ড দেয়ার পর ওই ডায়াগনস্টিক সেন্টার সীলগালা করে দেওয়া হয়েছে। অপরদিকে শনিবারও দুপুরে নগরীর আগরপুর রোড এলাকায় দি মুন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অভিযান চালিয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ। এখানেও রিপোর্টে চিকিৎসকের জাল স্বাক্ষর ব্যবহার করা হতো তাই ডায়াগনস্টিক সেন্টারটি সীলগালা এবং ওই ডায়াগনস্টিকের দুই মালিক এবং দুই টেকনিশিয়ানকে ভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড দেয়া হয়েছে।

বরিশাল জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জিয়াউর রহমান জানান, অবৈধ ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে এবং এই অভিযান অব্যাহত থাকবে।

বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ডাঃ শ্যামল কৃষ্ণ মন্ডল বলেন, বেসরকারি পর্যায়ে হাসপাতাল, ক্লিনিক, ল্যাব ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বৈধতার জন্য বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন প্রয়োজন। আর স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে তাদের লাইসেন্স পেতে হলে অনলাইনে আবেদন করতে হয়। সেই আবেদনের প্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয়ভাবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সবকিছু যাচাই-বাছাই করে লাইসেন্স দেয়। সে ক্ষেত্রে স্থানীয়ভাবে কারো কিছু করার থাকে না। আর যারা আবেদন করেনি কিংবা কাগজপত্র নবায়ন বা হালনাগাদ করেনি তাদের তালিকা করার কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডাঃ বাসুদেব কুমার দাস বলেন, সিটি কর্পোরেশন ও বিভাগের ৬ জেলায় সিভিল সার্জনদের প্রধান করে কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির কাছ থেকে হালনাগাদ তথ্য পেলে অনুমোদনবিহীন ও অবৈধ প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে নিয়মানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন এই কর্মকর্তা।

সূত্র: যুগান্তর

নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন




© All rights reserved © crimeseen24.com-2024
Design By MrHostBD