শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৪০ অপরাহ্ন
আমি যখন সাংবাদিক ছিলাম তখন প্রায়ই একটা কথা শুনতে হতো- ‘ভাইয়া, আপনাদের পত্রিকাতো নিরপেক্ষ না! আপনারা সব সময় একপক্ষ টানেন।’ আমি প্রায়ই তাদের উল্টো একটা প্রশ্ন করতাম- ‘আপনি কি নিরপেক্ষ? নিরপেক্ষ দৃষ্টি নিয়ে সংবাদ পড়েন?’ উত্তর আমাদের সবার জানা। সেই ‘জানা উত্তরে’ পরে আসছি। তবে এতটুকু বলি- যে দেশে পাঠকরাই নিরপেক্ষ নয়, সেদেশে বোধকরি পত্রিকাগুলোর কাছ থেকে নিরপেক্ষ সংবাদ খোঁজা বোকামি বললেও অত্যুক্তি হবে না!
আমার কেন জানি মনে হয় আমাদের দেশে ধর্মের চেয়ে রাজনৈতিক বিশ্বাসের শেকড় অনেক গভীরে। আমি এমন অনেককে চিনি যারা কোনো ধর্মেই বিশ্বাস করেন না, আবার ডানপন্থী কোনো দলের আদর্শ ধারণ করেন! অথচ এই ডানপন্থী দলগুলোর মূল পুঁজি কিন্তু ধর্মীয় আবেগ। আবার এমনও দেখেছি, নামাজ-রোজা ছাড়া বোঝেন না এমন মানুষও নির্দ্বিধায় ধর্মাশ্রয়ী নয় এমন কোনো দলকে ধারণ করেন!
আবেগের কথা যখন লিখলাম, তখন আরো এক ধরনের আবেগের কথা না বললেই নয়। মাশরাফি বিন মর্তুজা। কিছুদিন আগে যার প্রতি আবেগে আমরা কেঁদেছি, আমরা হেসেছি, উতুঙ্গ ভালোবাসায় স্লোগান ধরেছি, সেই মানুষটার প্রতি কেউ কেউ এই কয়দিনেই কেমন বিরূপ মনোভাব পোষণ করছেন। আমাদের আবেগ কী এতটাই ঠুনকো। শুধু রাজনৈতিক বিশ্বাসের কারণে একজন সত্যিকারের হিরোকে অসম্মান প্রদর্শন করতে এতটুকু আমাদের বাধে না!
আওয়ামী লীগের সাবেক অর্থমন্ত্রী কিবরিয়া সাহেবের ছেলে রেজা কিবরিয়া এবার প্রার্থী হয়েছেন বিরোধী শিবির থেকে! একজন ছেলে তার বাবার মৃত্যুর বিচার চাইবেন এটাই স্বাভাবিক। নিজ দলের ক্ষমতার প্রায় বেশিরভাগ সময় সেই বিচার চাইতে চাইতে একজন নীলিমা মরে যান, তাও স্বামী হত্যার বিচার পান না, তাকে পাগল বলে কেউ কেউ আখ্যা দেন, এমপি বানাতে চান অথচ বিচারের চাকা নাড়াতে তারা পারেন না। তাই ছেলের মনে ক্রোধ না জন্মালেই বরং আমি অবাক হতাম। বাবার নামে করা kibria.org ওয়েবসাইটে সেই হত্যার প্রতিটিক্ষণ তিনি উন্মুক্ত করে রেখেছেন বহু বছর ধরে। বাবার হত্যার ঘণ্টা, মিনিট, সেকেন্ডের হিসেব গুণে যাওয়া একজন ছেলে যদি রাষ্ট্রদ্রোহীও হয়ে যেত, তাতেও তাকে আমি সমর্থন করে যেতাম।
কেউ কেউ হয়তো এখন প্রশ্ন তুলবেন, তাহলে কী আপনি যুদ্ধাপরাধের দায়ে ফাঁসিতে ঝোলানো কারো ছেলেকেও সমর্থন করেন? সাফকথা, আলবত না। আমি চাই যুদ্ধাপরাধীদের সন্তান, স্ত্রী কিংবা বাবা, সবাইকে নির্বাচনে আজীবন অযোগ্য ঘোষণা করা হোক।
যাক, শুরুতে যে কথা বলবো বলে বলেছিলাম, সেই ‘জানা উত্তরের’ প্রসঙ্গে আসি। আমাদের রাজনৈতিক অন্ধ বিশ্বাস এতটাই প্রকট যে আমরা যেকোনো সংবাদকে রাজনৈতিক দৃষ্টি নিয়ে পড়ি। সমালোচনা করি রাজনৈতিক দৃষ্টি থেকে। যখনই নিজের দৃষ্টিভঙ্গীর সঙ্গে কিছু মিলে যায় তখন তা নিরপেক্ষ, আর ভিন্ন হলে ‘দলকানা’।
কথায় কথায় আমরা রাজনীতিবিদদের গালাগাল করি। অথচ ভালো একজন মানুষ সেই গলিতে ঢুকতে চাইলে প্রথমেই তার রাস্তা যতোটা সম্ভব আগলে ধরি। এভাবে চললে রাজনীতি কখনো ‘বদমুক্ত’ হবে কী?
মাশরাফিরা অবসরে গিয়ে হয়তো ব্যবসা শুরু করবে, রেজা কিবরিয়ারা বিদেশে নিজের মেধাকে কাজে লাগাবে আর ভাঙ্গারী ব্যবসায়ী, চোর-বাটপাররা রাজনীতির মাঠ দখল করে আমাদের নাকে খঁৎ দেওয়াতে উদ্বুদ্ধ করবেন!
তবে তাই হোক..
এহছান লেনিন (ফেসবুক পোস্ট থেকে)
ফিনল্যান্ড প্রবাসী সাংবাদিক