শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০২:০৬ পূর্বাহ্ন
অনলাইন ডেস্ক: আত্মীয়-বন্ধু বা পরিচিত জন এমন কয়েক ঘর ঘুরলে একাধিক মাশরাফি নামের বাচ্চা পাওয়া যাবে। আজ মা-বাবারা মাশরাফি নামেই খুঁজে পান ছেলের বড় হয়ে ওঠার স্বপ্ন। কিন্তু এই স্বপ্নটার শুরু হয়েছিল কবে তা জানতে যেতে হবে একটু পেছনে।
নড়াইল জেলার চিত্রা পাড়ের গ্রামের এক ছেলে। নাম তার কৌশিক। সারাদিন বন্ধুদের সঙ্গে ঘোরাফেরা, আড্ডা, গাছে ওঠা, সাতার কাটা আর খেলা। এই খেলার নেই কোনো বাধা। ফুটবল, ক্রিকেট, ব্যাডমিন্টন সব চলে। ক্রিকেটার হওয়ার নেই কোনো পরিকল্পনা। ব্যাট চালান নিজের ইচ্ছা মতো। বল করে তাক লাগিয়ে দেন সবাইকে। সেখান থেকেই পেয়ে যান ক্রিকেটের পথ।
জাতীয় দলে মাশরাফির সুযোগ পাওয়াটা বেশ নাটকীয়। প্রথম শ্রেণির কোনো ম্যাচ না খেলেই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্টে অভিষেক হয় তার। সেই দিনটিই আজ মানে, ৮ নভেম্বর। ২০০১ সালের এই দিনেই জাতীয় দলের ২ নম্বর জার্সির কলার উঁচিয়ে দৌড়ের শুরু তার। এর আগে অবশ্য খেলেন বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলে হয়ে। খেলেছিলেন দেশের বয়সভিত্তিক আরও কয়েকটি দলে।
সে সময়ের শক্তিশালী জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে মাঠে নেমেই নিজেকে চিনিয়ে দেন ক্রিকেট বিশ্বে। সেই ম্যাচ বৃষ্টির কল্যাণে ড্র হয়ে গেলেও বল করার সুযোগ পান ১৮ বছরের মাশরাফি বিন মর্তুজা। আর সেই সুযোগেই তুলে নেন ৪ উইকেট।
১৮ বছরের সেই যুবকের স্বপ্ন ছিল বিশ্বের দ্রুততম বোলার হওয়ার। শুধু স্বপ্ন দেখেই চুপ করে থাকেননি। ১৪০ কিলোমিটারের বেশি বেগে বল করে নিজের স্বপ্নের পথে চলার পথটাও করে ফেলেছিলেন। কিন্তু সবার ভাগ্য তো আর সব সময় সঙ্গ দেয় না।
অভিষেকের বছরই পড়লেন হাঁটুর ইনজুরিতে। একাধিক অস্ত্রোপচার ধীরে ধীরে কমিয়ে দেয় তার গতি। স্বপ্নের পরিধি কমলেও শেষ হয়নি স্বপ্ন। দুই হাঁটুতে সাতটি অস্ত্রোপচার করিয়ে দৌড়ে যাচ্ছেন বাংলাদেশের জন্য। কাটিয়ে দিয়েছেন ১৭ বছর।
এই সময়ের মধ্যে শুধু বল হাতেই নয়, নেতৃত্ব দিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে নিয়ে গেলেন অন্যরকম উচ্চতায়। হলেন টেস্টের অধিনায়কও। কিন্তু ভাগ্য তার সেই সুযোগও কেড়ে নিল। ২০০৯ আবারও ইনজুরি। আর সেই ইনজুরির পর আর ফেরাই হলো না ক্রিকেটের সবচেয়ে গৌরবময় ফরম্যাটে। মাত্র ৩৬ ম্যাচ খেলতে পেরেছেন সাদা পোশাকে। নেন ৭৮ উইকেট। অবসর না নিলেও ফেরার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
তবে সমান তালে দৌড়েছেন সীমিত ওভারের ক্রিকেটে। কিন্তু হঠাৎ করেই গেলো বছরের এপ্রিলে ছাড়লেন আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটও। চালিয়ে যাচ্ছেন শুধুমাত্র ওয়ানডে ক্রিকেট। ২০১৪ সালে বাংলাদেশ দলের সীমিত ওভারের অধিনায়কত্ব পাওয়ার পর যেন পাল্টে দিয়েছেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের রুপ।
গেলো চার বছরে তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ দলের জয়ের হার সবচেয়ে বেশি। একজন বোলার বা একজন অধিনায়কের বাইরেও মাশরাফি তার পারফরম্যান্স দিয়ে নিজেকে প্রমাণে কমতি রাখেননি। ওয়ানডেতে উইকেটরক্ষকের বাইরে বাংলাদেশ ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি ক্যাচের মালিক তিনি (৫৬)। একই ফরম্যাটে এক হাজার বল খেলা বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের মধ্যে তৃতীয় সর্বোচ্চ স্ট্রাইক রেটও (৬৭.২০) তার।
মাশরাফিকে আসলে শুধু তার ক্যারিয়ারের পরিসংখ্যান বিচার করা ভুলই হবে। একজন ক্রিকেটার মাশরাফির চেয়েও একজন ব্যক্তি মাশরাফি মানুষের মনে বেশি জায়গা দখল করে আছে। আর সেই ভালোবাসা থেকেই মা-বাবারা স্বপ্ন দেখেন তার ছেলেও একদিন মাশরাফির মতো কিছু করে দেখাবেন।
স্বপ্ন তো থাকেই, মাশরাফির নিজেরও কি নেই? আছে তো বটেই। দেশ নিয়ে, দল নিয়ে, সন্তানদের নিয়ে তো থাকেই। নিজেকে নিয়েও আছে স্বপ্ন, কিন্তু তা যে খুব উচ্চাভিলাষী তাও নয়। শুধু স্বপ্ন দেখেন সেই আগের মতো কিছু ম্যাচ খেলার। শুধুমাত্র ট্রাউজার, জার্সি পরে বল হাতে দৌড়ানোর, কোনো নি-ক্যাপ, কোনো টেপ, কোনো ব্যথা থাকবে না। সেই ২০০১ এর মতো আরও একবার মাঠে নামার স্বপ্ন নিয়েই প্রতিদিন বিছানা থেকে পায়ের ব্যথা নিয়ে নামেন।
২০০১ সালে সেই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে চট্টগ্রামে ওয়ানডে অভিষেকের পর এখন পর্যন্ত মাশরাফি ১৯৯টি ম্যাচ খেলেছেন। ৪.৮২ ইকোনোমিতে পেয়েছেন ২৫২টি উইকেট। এছাড়া ৫৪টি টি-টোয়েন্টিতে তার উইকেট সংখ্যা ৪২টি।