শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৫৬ অপরাহ্ন
এস এল টি তুহিন: শরীরের সবটুকু শক্তি দিয়েও নলকূপ থেকে এক ফোঁটা পানি পাচ্ছে না বরিশাল নগরীর বিভিন্ন এলাকার মানুষ। পানির তীব্র সংকটে নগরীজুড়ে হাহাকার চলছে। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের বরিশাল জেলা সমন্বয়কারী রফিকুল আলম জানান, ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ক্রমেই নিচে নামায় পুরো নগরীতেই দেখা দিয়েছে সুপেয় পানির সংকট। এ থেকে উত্তরণের জন্য শিগগিরই অকেজো দুই ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট চালু করা প্রয়োজন।
চৈত্রের গরমে বরিশাল নগরীতে সুপেয় পানিসংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। চাহিদার বিপরীতে সিটি করপোরেশন অর্ধেক পানিও সরবরাহ করতে পারছে না। নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ৩০-৪০ ফুট নিচে নেমে গেছে। এতে নলকূপ দিয়ে পানি উঠছে না।
পানিসংকটে সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়েছে নগরবাসী। সূত্র জানায়, সুপেয় পানির সংকট মেটাতে কীর্তনখোলা নদীর পানি শোধন করে বিশুদ্ধের জন্য ২৭ কোটি টাকা ব্যয়ে বেলতলায় এবং ২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে রূপাতলীতে দুটি সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট নির্মাণ করে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর।
সেই দুটি প্ল্যান্ট এখন অচল হয়ে পড়ে আছে। বরিশাল সিটি করপোরেশনের তথ্যমতে, নগরীর ছয় লাখ মানুষের প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি লিটার পানির চাহিদা থাকলেও সরবরাহ সম্ভব হচ্ছে ৪৫ শতাংশ। নগরীতে দুটি ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট থাকায় সিটি করপোরেশন এখনই পানিসংকটের সমাধান দিতে পারছে না। সিটি করপোরেশনের পানি শাখা জানায়, দৈনিক ৩ কোটি ২০ লাখ লিটার পানি সরবরাহের প্ল্যান্ট দুটি অচল। নগরীতে এখন ৩৭টি পাম্প কার্যকর আছে, তা দিয়ে পূরণ হচ্ছে না সুপেয় পানির চাহিদা। বরিশাল নগরীর প্রাণকেন্দ্র সদর রোড, ভাটিখানা, আমানতগঞ্জ, চাঁদমারী, নথুল্লাবাদ, নাজিরমহল্লা, কাউনিয়া, কাশিপুর, পলাশপুরসহ অনেক স্থানেই পানির স্তর পাওয়া যাচ্ছে না। ওই সব এলাকায় বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকটের কথা জানান স্থানীয়রা।
কাশিপুরের খ্রিষ্টান কলোনি এলাকার বাসিন্দা রিচার্ড রাহুল বলেন, ‘গভীর নলকূপ থাকলেও তা দিয়ে পানি উঠছে না। নলকূপ চাপতে চাপতে হাত ব্যথা হয়ে যায়, তবুও পানি পাই না। পানি ওঠাতে মোটর দীর্ঘ সময় ছেড়ে রাখতে হয়। সাপ্লাই পানিও পাওয়া যাচ্ছে না। অথচ সিটি করপোরেশনকে প্রতি মাসে পানির বিল দিতে হয়। আমানতগঞ্জের আলম রায়হান জানান, এলাকায় কোনো নলকূপ থেকে পানি ওঠে না। বাধ্য হয়ে দূর-দূরান্ত থেকে পানি সংগ্রহ করতে হচ্ছে। অনেকে পুকুরের পানি ফুটিয়ে পান করছেন। নলকূপ দিয়ে পানি না ওঠায় বরিশাল নগরীতে হাহাকার চলছে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মইনুল হাসান বলেন, ‘কেন প্ল্যান্ট দুটি চলছে না তা সিটি করপোরেশনই ভালো বলতে পারবে।
তবে ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট দুটি সংস্কারের জন্য দক্ষ জনবলসহ কিছু যন্ত্রাংশ দরকার বলে জেনেছি। ২০১৯ সালের অক্টোবরে একটা মিটিং হয়েছিল, সেই মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয় ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট দুটি সিটি করপোরেশন রক্ষণাবেক্ষণ করবে। সেটা আর বাস্তবায়ন হয়নি।’ সিটি করপোরেশনের উপসহকারী প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম মুরাদ জানান, পানিসংকটের এই সময়ে অচল ওয়াটার ট্রিটমেন্ট দুটি চালু করতে মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হয়েছে।
আশা করা যায়, শিগগিরই এগুলো চালুর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত আসবে। বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র গাজী নঈমুল হোসেন লিটু বলেন, ‘প্রকল্পে লুটপাট করায় প্ল্যান্ট দুটি কোনো কাজে আসছে না। অকেজো ও ঝুঁকিপূর্ণ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট বুঝে নেয়াটাও নগরবাসীর দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়াবে।