শুক্রবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৪৭ পূর্বাহ্ন
অনলাইন ডেস্ক:
নানা কারণেই ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। দলগুলোর এ যোগাযোগ রক্ষায় ভারতের সাড়া থাকলেও তারা কেবল সম্পর্ক রাখে না জামায়াতের সঙ্গে। স্বাধীনতাবিরোধী দলটির সঙ্গে কোনো ধরনের আপস করতেও রাজি নয় প্রতিবেশী দেশটি।
ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনের এক কূটনীতিকের সঙ্গে আলাপ করে নয়াদিল্লির এমন মনোভাব জানা গেছে। ওই কূটনীতিকের ভাষ্যে, তিনটি কারণে জামায়াতকে কোনো ছাড় দেবে না ভারত। প্রথমত, মুক্তিযুদ্ধের সময় জামায়াতের ভূমিকা; দ্বিতীয়ত, তাদের সাম্প্রদায়িক রাজনীতি এবং তৃতীয়ত তাদের নীতি ও আদর্শ।
ওই কূটনীতিক বাংলানিউজকে বলেন, প্রতিবেশী দেশ হিসেবে ভারত এদেশের প্রায় সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে চলে। সে কারণে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, বিকল্প ধারা, জাকের পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, বাংলাদেশের ওয়াকার্স পার্টি প্রভৃতি রাজনৈতিক দলের সঙ্গেই ভারতের যোগাযোগ রয়েছে। কিন্তু একাত্তরের ভূমিকা, সাম্প্রদায়িক রাজনীতি ও নীতি-আদর্শের কারণে জামায়াতের ব্যাপারে নয়াদিল্লির মনোভাব পুরোপুরি নেতিবাচক।
তিনি স্পষ্ট করে বলেন, জামায়াত ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের বিরোধিতা করেছে। আর স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় ভারতের সেনাবাহিনী বাংলাদেশের পক্ষে লড়াই করেছে। সে সময় জামায়াতের প্রত্যক্ষ মদদে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লড়াইয়ে যারা ছিলেন, তাদের হত্যা করা হয়েছে। ওইসময় হত্যার শিকার হয়েছেন ভারতীয় সেনারাও। এছাড়া জামায়াত সাম্প্রদায়িক রাজনীতি করে থাকে। বিভিন্ন সময়ে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপরও সহিংসতায় লিপ্ত হয়েছে জামায়াত।
ভারতের মনোভাব স্পষ্ট করে এ কূটনীতিক বলেন, ১৯৭১ সালে সালে জামায়াতের যে নীতি ও আদর্শ ছিলো, সেই আদর্শই এখনো লালন করছে দলটি। বাংলাদেশের স্বাধীনতার এতো বছর পরও তারা সেই আদর্শ থেকে সরে আসেনি। দলটির আদর্শ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী। সে কারণে জামায়াতকে কোনোভাবেই ছাড় দিতে রাজি নয় নয়াদিল্লি ।
এদিকে নির্বাচনী ঢামাঢোলের মধ্যে ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, বিকল্প ধারাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে চলেছেন। হাইকমিশনার এ ব্যাপারে বলছেন, তিনি সৌজন্য সাক্ষাৎ করছেন। অবশ্য নির্বাচন বিষয়ে ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি স্পষ্ট করে শ্রিংলা বলছেন, ‘এদেশের নির্বাচন এখানকার জনগণ ও রাজনৈতিক দলের ব্যাপার।’
ভারতীয় হাইকমিশন সূত্র জানায়, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করলেও ভারতীয় হাইকমিশনার জামায়াতের কারও সঙ্গে বসার চিন্তাও করছেন না।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতের বেশ কয়েকজন শীর্ষনেতার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে। বিগত ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে ও পরে সহিংসতার জন্য জামায়াতকে দোষী করা হয়ে থাকে। দলটির ব্যাপারে পশ্চিমা দেশগুলোও নেতিবাচক মনোভাব দেখিয়ে আসছে। স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল হয়ে গেলেও তারা বিএনপির সঙ্গে ২০ দলীয় জোটগতভাবে নির্বাচনে অংশ নিতে প্রস্তুতি নিচ্ছে।