সোমবার, ০৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০১:৪৮ অপরাহ্ন
দুর্নীতির সম্পৃক্ততা পেলে আত্মীয়, দল-মত বিবেচনা না করেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দুর্নীতির উইপোকা বিনাশ করা হবে।
বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতি বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া এবং চলমান অভিযান অব্যহত রাখার কথাও জানান প্রধানমন্ত্রী।
বুধবার (২ অক্টোবর) রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর মাধ্যমে বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলোর বাণিজ্যিক সম্প্রচার কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘উন্নয়ন প্রকল্পগুলো গ্রহণ করার সময় বা বাস্তবায়ন করার সময় আমরা মাঝে মাঝে দেখি যে উইপোকা খেয়ে ফেলে। এখন এই উইপোকাগুলো ধরা, আর সেগুলোকে বিনাশ করা হবে।’
‘আর জনগণের কষ্টার্জিত পয়সা, প্রতিটি টাকা যেন সঠিকভাবে দেশের উন্নয়নে ব্যবহৃত হয় তার জন্য আমরা প্রচেষ্টা নিয়েছি।’
দুর্নীতির সম্পৃক্ততা পেলে আত্মীয়, দল-মত বিবেচনা না করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, মাদক, দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান শুরু করেছি। এই অভিযান অব্যাহত থাকবে। এই অভিযান আমরা অব্যাহত রাখবো।’
‘সে যে-ই হোক না কেন, এখানে দল-মত, আত্মীয় পরিবার বলে কিছু নেই। এর সঙ্গে যাদের সম্পৃক্ত রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘ইতোমধ্যে বাজেটও আমরা বৃদ্ধি করেছি। আমি এর আগে এসে পেয়েছিলাম ৬০ বা ৬১ হাজার কোটি টাকা ছিল। আজকে আমরা ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার বাজেট দিয়েছি। প্রকল্প গ্রহণ এবং উন্নয়ন বাজেট বাড়িয়েছি। আমরা ১ লাখ ৭৩ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নিয়েছি।’
জীবনকে বাজি রেখে কাজ করে যাওয়ার কথা জানিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘আমার কিন্তু হারাবার কিছু নেই। আমি বাবা-মা-ভাই সব হারিয়েছি। মানুষ একটা শোক সইতে পারে না। কিন্তু আমরা দুইবোন একদিনে সব হারিয়েছি।’
‘সেই বেদনা, সেই কষ্ট বুকে নিয়েও আমার ফিরে আসার এবং দায়িত্ব নেওয়ার একটাই কর্তব্য মনে করেছি- যে আমার বাবা এদেশ স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন, এদেশে শোষিত বঞ্চিত মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে চেয়েছেন, দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চেয়েছেন, সেই দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোটাই হচ্ছে আমার একমাত্র কর্তব্য।’
‘সমালোচনার পাশাপাশি ভালো কাজের প্রচার করুন’
গঠনমূলক সমালোচনার পাশাপাশি সরকারের ভালো কাজগুলো মানুষের কাছে তুলে ধরতে টেলিভিশন মালিকদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্য যেমন করবেন তেমনি দেশের উন্নয়নের তথ্যগুলো দয়া করে দেশের মানুষের কাছে পৌঁছে দেবেন, যাতে মানুষের ভেতরে একটা আত্মবিশ্বাস সৃষ্টি হয়। তারা যেন আরো সুন্দর জীবনের স্বপ্ন দেখতে পারেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এমন কিছু করবেন না যেন আমাদের দেশের মানুষ এত কিছু পাবার পরও তারা যেন আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলে, দিশেহারা হয়ে যায়। কাজেই যেটুকু ভালো কাজ করেছি অন্তত সেটুকুর প্রচার অবশ্যই আমি দাবি করি। আমি চাইতে পারি সেটা আপনাদের কাছে।
সব টেলিভিশন চ্যানেল বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর মাধ্যমে বাণিজ্যিকভাবে সম্প্রচার শুরু করার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানান প্রধানমন্ত্রী।
টেলিভিশন মালিকদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিদেশি স্যাটেলাইট ভাড়া করে করে যে টাকাটা খরচ করলেন সেটা কিন্তু বেঁচে গেল। এখন সে টাকা কী করবেন এটাও আমার একটু প্রশ্ন আছে? এর কিছু দান-টান করে দিয়েন দরিদ্র মানুষের জন্য। কারণ অনেক টাকাই আপনাদের বেঁচে যাচ্ছে।
দুর্যোগ মোকাবেলা, দুর্গম পাহাড়ে বা চর অঞ্চলের মানুষ বা হাওরাঞ্চলের মানুষের কাছে তথ্য পৌঁছে দেওয়া, টেলিমেডিসিন সেবা পৌঁছে দেওয়া, শিক্ষাক্ষেত্রে প্রত্যন্ত অঞ্চলে ই-এডুকেশন এর ক্ষেত্রে স্যাটেলাইটের সুবিধার কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তফা জব্বার, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব অশোক কুমার বিশ্বাস, অ্যাসোসিয়েশন অব টেলিভিশন চ্যানেল ওনার্স- অ্যাটকোর সভাপতি ও মাছরাঙা টেলিভিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অঞ্জন চৌধুরী প্রমুখ।