সোমবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:১৯ অপরাহ্ন
ক্রাইমসিন২৪:
চাঞ্চল্যকর বরিশালের উজিরপুর উপজেলার ৩ নং জল্লা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিশ্বজিৎ হালদার নান্টুকে হত্যায় ভাড়াটে খুনি ব্যবহার করা হয়েছিলো। হত্যার ঘটনার ১ মাস ২১ দিন পরে সেই ভাড়াটে খুনিকে গ্রেফতার করার পরে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে পুলিশ। তবে গ্রেফতারের পরই অস্ত্র উদ্ধারে গিয়ে ক্রসফায়ারে নিহত হয়েছেন ভাড়াটে খুনি রবিউল আউয়াল ওরফে রুবু। যদিও এরআগে পুলিশের অভিযানিক দলের কাছে জনপ্রিয় চেয়ারম্যান নান্টুকে হত্যার কথা স্বীকার করে যায় সে। মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) দুপুরে এক ব্রিফিং এ বরিশালের পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম জানান, উজিরপুরের ৩ নং জল্লা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিশ্বজিৎ হালদার নান্টুকে হত্যার ঘটনায় সর্বোশেষ ৮ জনসহ এ পর্যন্ত ২০ জনের মতো আসামীদের গ্রেফতার করে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ ও তাদের দেয়া আদালতে ৬৪ ধারার জবানবন্দিতে তথ্যানুযায়ী চেয়ারম্যানকে হত্যাকারী সুটারই হলো মাদারীপুর জেলার কালকিনী উপজেলার কুকরিরচর এলাকার লাল চাঁনের ছেলে রবিউল আউয়াল রুবু (২৮)। এ তথ্যের ওপর ভিত্তি করে রবিউলকে গ্রেফতারের লক্ষে মাঠ পর্যায়ে তৎপরতা শুরু হয়। ধারাবাহিকতায় সোমবার (১২ নভেম্বর) রাত ৮ টার দিকে মাদারীপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে রবিউলকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পর তাকে নিয়ে উজিরপুর মডেল থানার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়া হয়। তবে পথিমধ্যে ঘটনার বিষয়ে গ্রেফতার রবিউল জানায়, চেয়ারম্যানি বিশ্বজিৎ হালদার নান্টুকে সে
নিজ হাতে পিস্তল দিয়ে গুলি করে হত্যা করে। পাশাপাশি ঘটনার সময় তার কাছে আরো অস্ত্র ছিলো যা জল্লা ইউনিয়ন এলাকায়ই রয়েছে। রবিউলের দেয়া তথ্যানুযায়ী তাকে নিয়ে জল্লা ইউনিয়নের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করা হয়। ইউনিয়নের পীরেরপাড় ফুলতলা এলাকায় রাত পৌনে ৩ টা নাগাদ পৌছালে রবিউলের সঙ্গীরা তাকে ছিনিয়ে নেয়ার উদ্দেশ্যে পুলিশকে লক্ষ করে গুলি ছোড়ে। পুলিশও আত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলি ছোড়ে। তবে এরমধ্যে রবিউল পালিয়ে যাওয়ার জন্য দৌড় দেয়। তিনি বলেন, গুলির শব্দে আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসে। পরে তাদের নিয়ে পুলিশ সদস্যরা এলাকাটিতে তল্লাশি চালিয়ে রবিউলকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। পাশাপাশি তার সঙ্গীদের ফেলে যাওয়া একটি
পিস্তল, তিন রাউল গুলি ও ৩ টি রামদা উদ্ধার করা হয়। এদিকে রবিউলকে নিয়ে উজিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসলে চিকিৎসক মৃত বলে ঘোষনা করেন। পুলিশ সুপার জানান, রবিউল মূলত ভারাটে খুনি। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় হত্যাসহ একাধিক মামলা রয়েছে। তবে যারা রবিউলকে ভাড়া করেছে তাদের বিষয়ে তদন্তের স্বার্থে এ মুহুর্তে কিছূ বলতে না চেয়ে পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম বলেন, অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় একটি মামলা দায়ের করা হচ্ছে। আর মামলার সকল অগ্রগতি জানানো হবে তবে যেহেতু মামলাটি আদালতে রয়েছে তাই সে বিষয়েও চিন্তা করতে হবে। উল্লেখ্য চলতি বছরের গত ২১ সেপ্টেম্বর রাত পৌনে ৯ টার দিকে উজিরপুর থানধীন জল্লা ইউনিয়নের কারফা বাজারে নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অবস্থানকালে গুলি করে নৃশংসভাবে চেয়ারম্যান বিশ্বজিৎ হালদার নান্টুকে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনার পরের দিন বিশ্বজিৎ হালদার নান্টুর বাবা মুক্তিযোদ্ধা সুকলাল হালদার স্থানীয় সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুসের পিএস মো. আবু সাঈদ রাঢ়ীসহ ৪০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে হত্যা মামলা করেন। যারমধ্যে ৩২ জনকে নামধারী এবং আরও ৭/৮ জন অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। পাশাপাশি হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেফতার ও বিচার দাবী ওঠে। কারফা বাজারে ব্যবসায়ীদের ধর্মঘট ও মানববন্ধনের পাশাপাশি গোটা উজিরপুর জুড়ে নানান কর্মসূচী পালন করা হয়। পুলিশ ঘটনার তদন্তে নেমে প্রথম দফায় ১২ জন ও পরের দফায় ৮ জনকে গ্রেফতার করে। পাশাপাশি ৮ জনকে গ্রেফতারের পর আসামী মামুন শাহর দেয়া তথ্যানুযায়ী হত্যাকান্ডের ঘটনায় ব্যবহৃত ১টি পিস্তল ও ২ রাউন্ড গুলিও উদ্ধার করে। আর এরপরপরই পুলিশ
প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়, গ্রেফতার হওয়া মোঃ শাকিল ইসলাম রাব্বি ও মামুন শাহসহ বেশ কয়েকজনে মিলে এলাকায় নিজেদের অবস্থান সু-দৃঢ় করার জন্য এ হত্যাকান্ড চালানো হয়েছে।