বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:০৫ অপরাহ্ন
বরিশালের কাউনিয়া থানাধীন সাপানিয়া এলাকায় তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী সাবিহা আক্তার অথৈকে (০৯) হত্যার ঘটনায় তার বাবা কাজী গোলাম মোস্তফাকে আটক করেছে পুলিশ। মোস্তফা বরিশাল সিটি করপোরেশনের (বিসিসি) পানির পাম্প অপারেটর হিসেবে কাজ করতেন। অথৈ নগরের সাপানিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী ছিলো।
বুধবার দুপুরে নগরের আমতলা মোড়ের পুলিশ কমিশনারের অস্থায়ী কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. মোশারেফ হোসেন এ তথ্য জানান।
তিনি জানান, অথৈর মৃত্যুর খবরের পরপরই পুলিশ তদন্ত শুরু করেন। তদন্তে নিহত অথৈর বাবার দেয়ার তথ্য অনুযায়ী একজনকে জিজ্ঞাসাবদের জন্য আটকও করা হয়। তবে তদন্তের সময় অতিবাহিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ১০ থেকে ১২ লাখ টাকার দেনা-পাওনার একটি বিষয় বেড়িয়ে আসে। যার সূত্র ধরে তদন্তে নেমেই অথৈর বাবা মোস্তফাকে ‘সন্দিগ্ধ আসামি’ হিসেবে আটক করা হয়। তাকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, অথৈর বাবার কাছে বেশ কয়েকজন টাকা পায়। সেই টাকা পরিশোধ করতে না পেরে সন্তানকে হত্যা করে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে চেয়েছিলো তিনি।
পুলিশ কমিশনার আরও জানান, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে, আরও জিজ্ঞাসাবাদ শেষে পরবর্তীতে তুলে ধরা হবে বলেও জানান কমিশনার।
এদিকে প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদে গোলাম মোস্তফার দেওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, ঘটনার দিন সকালে মেয়ে অথৈকে স্কুলে নিয়ে যাবার কথা বলে মোটরসাইকেল নিয়ে বাড়ি বের হন মোস্তফা। পরে তাকে স্কুলে না নিয়ে ভাড়ায়চালিত মোটরসাইকেলে করে নিজ কর্মস্থল নগরের সদর রোডের বিসিসির পানির পাম্প হাউসের পাশে থাকা একটি রুমে নিয়ে যান তিনি। সেখানেই নিজ হাতে আদরের শিশুকন্যা অথৈকে শ্বাসরোধে হত্যা করেন তিনি। পরে মরদেহ বাড়ির পাশের একটি লেবু বাগানে ফেলে রেখেন মোস্তফা।
এর আগে গত মঙ্গলবার (৬ নভেম্বর) নগরের সাপানিয়া এলাকার ছাদওয়ালা বাড়ি সংলগ্ন লেবু বাগান থেকে অথৈকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে তার মা শিউলী আক্তার রুমা। পরে দ্রুত তাকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
মৃত ঘোষাণার পর অথৈর বাবা মোস্তফা জানান, সাপানিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ থাকার পরও মনিরুজ্জামান নামে বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক মঙ্গলবার অথৈকে ছবি নিয়ে জরুরি ভিত্তিতে বিদ্যালয়ে যেতে বলছিলেন। পরে মঙ্গলবার সকালে অফিসে যাওয়ার সময় তিনি (বাবা) অথৈকে ছবিসহ বিদ্যালয়ের গেটে নামিয়ে দিয়ে যান। ঘণ্টা খানেক পরে অথৈর মাকে ফোন দিয়ে জানতে পারেন মেয়ে বাড়িতে ফেরেনি। এরপর তাকে খোঁজ নিতে বললে সে বাড়ির পাশের একটি লেবুর বাগান থেকে অথৈকে অচেতন অবস্থান উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
সাপানিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক মনিরুজ্জামান জানান, সোমবার (০৫ নভেম্বর) মোস্তফাকে ফোন করা হলে স্ত্রীসহ হাসপাতালে রয়েছেন বলে জানান তিনি। তাই মোস্তফাকে বলা হয়েছিল তার মেয়ের উপবৃত্তির টাকার জন্য অথৈর মায়ের স্বাক্ষর প্রয়োজন। স্কুল বৃহস্পতিবার (৮ নভেম্বর) খোলা থাকবে, তিনি যেনো ওই দিন তার স্ত্রী রুমাকে স্কুলে পাঠিয়ে দেন। কন্যা অথৈকে স্কুলে পাঠানোর কথা বলা হয়নি বলেও জানান মনিরুজ্জামান।
এদিকে নিহত অথৈর মা রুমা বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেছেন।