শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:০৪ অপরাহ্ন
ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যা মামলার তদন্ত শেষ পর্যায়ে। আলোচিত এই হত্যা মামলার চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দাখিল করা হবে আগামী ২৭ মের মধ্যেই। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আলামত, জবানবন্দি ও সাক্ষ্য-প্রমাণ থেকে এখন পর্যন্ত ১৬ জনের সম্পৃক্ততা পেয়েছে তদন্তকারী সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
পিবিআই সূত্রে জানা যায়, পুলিশের অভিযানে গ্রেপ্তার হওয়া ২১ জনের মধ্যে থাকা ওই ১৬ জন প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে হত্যায় অংশ নিয়েছে। আলামতের ফরেনসিক রিপোর্ট, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন ও জবানবন্দির মাধ্যমে হত্যায় কার কী ভূমিকা ছিল, তা যাচাই করা হচ্ছে।
সূত্র মতে, নুসরাতকে হয়রানিমূলকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করে তার ভিডিও চিত্র অনলাইনে ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে করা মামলার তদন্তও শেষ পর্যায়ে। তদন্তে মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। আগামী ২৭ মে আদালতের নির্দেশে প্রতিবেদন দাখিল করার কথা রয়েছে। ওই দিনের মধ্যেই সব তদন্ত শেষ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে পিবিআই। পিবিআইয়ের প্রধান, উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) বনজ কুমার মজুমদার বলেন, ‘আইসিটি আইনে ওসির বিরুদ্ধে করা মামলার প্রতিবেদন দেওয়ার তারিখ ২৭ মে। ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার আংশিক সত্যতা পাওয়া গেছে। নির্ধারিত দিনেই প্রতিবেদন দেব।’ তিনি আরো বলেন, ‘নুসরাত জাহান রাফি হত্যার ঘটনায় ১৬ জনের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেয়েছি আমরা। তাদের মধ্যে ১২ জনের জবানবন্দি আছে। ঘটনার আগে-পরে যারা মদদ জুগিয়েছে তারাও যাতে শাস্তি পায় সেসব বিষয় উপস্থাপন করেই চার্জশিট দেওয়া হবে।’
তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসার বরখাস্ত হওয়া অধ্যক্ষ এস এম সিরাজ উদ দৌলার নাম নির্দেশদাতা হিসেবে এসেছে তদন্তে। নির্দেশ বাস্তবায়নে তাঁর ঘনিষ্ঠ কয়েকজন ছাত্র জড়িত। তাদের মধ্যে যারা সরাসরি রাফিকে আগুনে পুড়িয়ে মেরেছে, চার্জশিটে তাদেরই নাম থাকবে প্রথমে। এরপর থাকবে সহায়তাকারীদের নাম। শেষ দিকে নাম থাকছে সিরাজ ও তাঁর অনুসারীদের সহায়তাকারীদের। গত ২৭ মার্চ সিরাজ উদ দৌলার বিরুদ্ধে ছাত্রী রাফিকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে মামলা করেছিলেন রাফির মা। এতে পুলিশ সিরাজকে গ্রেপ্তার করেছিল। ৬ এপ্রিল পরীক্ষা দিতে গেলে রাফিকে সাইক্লোন শেল্টার ভবনের ছাদে ডেকে নিয়ে শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয় সিরাজের সহযোগীরা।
৮ এপ্রিল রাফির ভাই মামলা করেন সিরাজকে প্রধান আসামি করে। ১০ এপ্রিল ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে রাফির মৃত্যু হয়। হত্যার ধারায় যুক্ত মামলাটির তদন্তভার দেওয়া হয় পিবিআইকে। আসামিদের মধ্যে সিরাজ, পপি, জাবেদ, জোবায়ের, নূরুদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামিম, মনি, শরিফ, রানা, মামুন, শাকিল ও আব্দুল কাদের আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানবন্দিতে চারজন সরাসরি হত্যায় অংশ নেওয়ার কথা জানান।