সোমবার, ২১ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:৫৯ অপরাহ্ন
অনলাইন ডেক্স: বরিশালে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশের একদিন আগেই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে দুরপাল্লা, অভ্যন্তরীন ও তিন চাকার সব ধরনের যানবাহন। মহাসড়কে তিন চাকার অবৈধ যান ও ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল বন্ধের দাবির কথা বলেছে এই ধর্মঘট ডেকেছে বাসমালিকদের সংগঠন বরিশাল জেলা বাস মালিক গ্রুপ। শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে শুরু হওয়া এ ধর্মঘট চলবে সমাবেশের দিন আগামীকাল শনিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত।
ধর্মঘটের কারণে বরিশাল থেকে কোনো রুটে বাস ছাড়ছে না। বাস ছাড়াও ভোলা থেকে বরিশাল রুটে স্পিডবোট ও লঞ্চ চলাচলও বন্ধ থাকায় সারাদেশের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে বরিশালের যোগাযোগ ব্যবস্থা। শুক্রবার সকাল ছয়টার পর বরিশাল থেকে কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা। বাস না পেয়ে অনেকে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। পরিবহন বন্ধ থাকায় মালামাল নিয়ে বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীরাও। বিকল্প উপায়ে কেউ ভেঙে ভেঙে গন্তব্যে গেলেও তাতে গুণতে হচ্ছে বাড়তি ভাড়া। সকালে বরিশাল কেন্দ্রীয় নথুল্লাবাদ বাসস্ট্যান্ড গিয়ে দেখা যায়, বাসের টিকিট কাউন্টারগুলো বন্ধ।
স্ট্যান্ডে সব বাস সারি সারি দাঁড়িয়ে আছে। মহাসড়কে চলছে ভ্যান, কিছু সংখ্যক অটো রিকশা, রিকশা। আর এতে ভরসা করেই গন্তব্যে যাচ্ছে মানুষ। দেওয়ান মোহন নামের এক যাত্রী বলেন, রাজনৈতবক কারনে বাস বন্ধ রাখা কোন যুক্তিতে পরেনা। আমাদের ভোগান্তিতে ফেলে তারা তাদের স্বার্থ উদ্ধার কারার চেষ্টা চালাচ্ছে। মানিক হোসেন বলেন, আমি মাদারীপুরে যাওয়ার জন্য এসেছিলাম। জানতাম বাস বন্ধ থাকবে তার পরও বিকল্প ব্যবস্থায় যেতে চেয়েছিলাম। কিস্তু তিন চাকার সব যান চলাচলও বন্ধ রয়েছে। এখন কিভাবে যাবো বুঝতে পারছিনা।
এদিকে বাস লঞ্চ বন্ধ থাকলেও গনসমাবেশে যোগ দিতে বৃহস্পতিবার বিকেল থেকেই সমাবেশস্থলে আসতে শুরু করে নেতাকর্মীরা। যত ভোগান্তি হোকনা কেন সমাবেশ সফল করতে নেতাকর্মীরা সময় মত মাঠে থাকবে বলে জানিয়েছে তারা। এদিকে শনিবার বরিশাল নগরীর বঙ্গবন্ধু উদ্যানে জেলা বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ হবে। সমাবেশের আগের দিন বাস বন্ধ করায় ক্ষোভ প্রকাশ দলটির নেতাকর্মীরা।
পরিবহন বন্ধের জন্য সরকারকে দায়ী করে বিএনপি নেতাকর্মীরা বলছেন, গণসমাবেশের যেন মানুষ আসতে না পারে সেজন্য সরকার এমন কাজ করেছে। তবে সরকার সংশ্লিষ্টদের দাবি, এতে সরকারের কোনো হাত নেই। বাস বন্ধের বিষয়টি জানার পরও যাদের খুবই জরুরি কাজ ছিল তাদের অনেককে বরিশাল বাস টার্মিনালে আসতে দেখা যায়। এদিকে বিএনপির গণসমাবেশ ঘিরে বৃহস্পতিবার থেকেই দলটির অনেক নেতাকর্মী বরিশালে এসেছেন। সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নেতাকর্মীদের ভিড়ও বাড়তে থাকে সমাবেশস্থলে। গতরাতে প্যান্ডেল টানিয়ে সমাবেশস্থলে আড্ডা, হই-হুল্লোড় করেন তারা।
নেতাকর্মীরা বলছেন, সমাবেশ যেন সফল না হয় সেজন্য শুক্রবার থেকে গণপরিবহন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এ কারণে আগেভাগেই তারা সমাবেশস্থলে চলে এসেছেন। সমাবেশের আগের দুই রাত এখানেই কাটাবেন। মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব মীর জাহিদুল কবির জাহিদ বলেন, রাতে উদ্যানেই ঘুমান দূর থেকে আসা নেতাকর্মীরা। কারণ আবাসিক হোটেলগুলোতে পুলিশ অভিযানের নামে তাদের হয়রানি করতে পারে। তিনি বলেন, ‘সব ধরণের পরিবহন বন্ধ করে দিয়েছে সরকার আমাদের সমাবেশ ঠেকাতে।
তবে তাদের কোনো উদ্যোগই সফল হবে না। জনগণের জন্য আন্দোলনে সব বাধা অতিক্রম করে দুই দিন আগেই সমাবেশস্থলে হাজির হচ্ছেন নেতাকর্মীরা। এখানেই থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে ত্রিপল টানিয়ে। গত ১৫ অক্টোবর ময়মনসিংহে কর্মসূচির দিন ধর্মঘট ডাকা না হলেও বাস চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বিভিন্ন স্থানে বাধা দেন। এরপর খুলনায়ও ২২ অক্টোবর কর্মসূচির দুই দিন আগে পরিবহন ধর্মঘট ডাকা হয়েছিল। পাশাপাশি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে সমাবেশমুখী লোকজনকে ঠেকাতে কিছু জায়গায় বাধা ও হামলার অভিযোগ ছিল। ২৯ অক্টোবর রংপুরে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশকে কেন্দ্র করে দুই দিন বাস বন্ধ ছিল।