বুধবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ০৫:৩৮ পূর্বাহ্ন
এস এল টি তুহিন, :বরিশাল শের-ই বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতালে অর্ধেকেরও বেশী পদ শূণ। এর মধ্যেই আরো ৮ জন মেডিকেল অফিসার সহ বিভিন্ন পদের চিকিৎসককে অন্যত্র বদলী করা হয়েছে। এতে দক্ষিণাঞ্চলের সর্ববৃহত সরকারী চিকিৎসা সেবা প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়ার উপক্রম হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যে হাসপাতালের পরিচালক স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিবের সাথে কথা বললেও শণিবার দুপুর পর্যন্ত কোন ফল হয়নি।
অথচ এ হাসপাতাল থেকে বদলীকৃত ৮জন সহ একই আদেশে আরো দুজনকে শনিবারই নতুন কর্মস্থলে যোগ দিতে বলা হয়েছে। এ ব্যাপারে শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. সাইফুল ইসলাম জানান, বদলীকৃত সব মেডিকেল অফিসার পদোন্নতি পেয়ে জুনিয়র কনসালটেন্ট হয়েছেন। কিন্তু তার হাসপাতালে এ ধরনের কোন পদ না থাকায় এখানে তাদের পদায়ন সম্ভব নয়। তাই মন্ত্রনালয় তাদের অন্যত্র বদলী করেছে। তবে মন্ত্রনালয় ইচ্ছে করলে তাদের অন্যত্র বদলী করলেও এখানে সংযুক্তির মাধ্যমে কাজ চালিয়ে যাবার বিধান আছে বলেও স্বীকার করেন তিনি। পুরো বিষয়টি মন্ত্রনালয়ের সচিবকে অবহিত করার কথা জানিয়ে ‘নিশ্চই কোন ব্যবস্থা হবে’ বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
এক হাজার শয্যার শেবাচিম হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ১ হাজার ৮শ রোগী চিকিৎসাধীন থাকছে। কোন কোন সময় ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা দু হাজারও অতিক্রম করছে। বরিশাল বিভাগের ৬টি জেলা ছাড়াও মাদারীপুর, শরিয়তপুর ও বাগেরহাটের রোগীরা পর্যন্ত এ বিশেষায়িত হাসপাতালটিতে চিকিৎসার জন্য আসছেন। উপরন্তু এ হাসপাতালের বহি.র্বিভাগে প্রতিদিন গড়ে আরো অন্তত ৪ হাজার রোগী চিকিৎসা পরামর্শ গ্রহন করছেন।
কিন্তু নিকট অতীতের ৫শ শয্যার এ হাসপাতালটির জনবল মঞ্জুরী বৃদ্ধি না করেই ১ হাজার শয্যায় উন্নীত করা হলেও চিকিৎসক ও চিকিৎসা কর্মীর অভাবে তা চলছে খুড়িয়ে। দক্ষিণাঞ্চলের সর্ববৃহত সরকারী এ চিকিৎসা সেবা প্রতিষ্ঠানটিতে ৫শ শয্যার মঞ্জুরীকৃত ২২৪ জন চিকিৎসক পদের মধ্যে কর্মরত ছিলেন ১১০ জনের মত। কিন্তু সেখান থেকেও ৮ জনকে বদলী করায় পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ আকার ধারন করতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক চিকিৎসক।
মন্ত্রনালয়ের সদ্য জারী করা আদেশে শেবাচিম হাসপাতালের অর্থিাপেডিক্স বিভাগের ডা. মোঃ মাসরেফুল ইসলাম ও ডা. সুদিপ্ত কুমার হালদার, গাইনী বিভাগের ডা. তানিয়া আফরোজ, ইএনটি বিভাগের ডা. আলী আহমেদ, ডা. মো আবদুল্লাহ আল মামুন ও ডা. মোঃ শরিফুল ইসলাম, সার্জারী বিভাগের ডা. জয় জাকারিয়া ও ডা. মোঃ সুফিয়ার রহমান ছাড়াও বরিশাল জেনারেল হাসপাতাল থেকে ডা. সঞ্জয় কুমার দাসকে অন্যত্র বদলী করা হয়েছে।
অত্যন্ত আশ্চর্যজনক হলেও সত্যি যে এ হাসপাতালের জরুরী বিভাগে ১০ জন মেডিকেল অফিসার পদের বিপরীতে এখন মাত্র ১ জন কর্মরত আছেন। গোটা হাসপাতালে ডেন্টাল বিভাগের একমাত্র জুনিয়র কনসালটেন্ট-এর পদে কোন চিকিৎসকই নেই। রেজিষ্ট্রার-এর ৩৩ জন চিকিৎসকের ১৫টি পদই শুণ্য। ৬৬ জন সহকারী রেজিষ্ট্রার পদের ৪৭টি পদই শূণ্য ।
এছাড়া হাসপাতালটির ৪৬ জন মেডিকেল অফিসারের প্রায় ২০টি পদেই কোন জনবল নেই। এমনকি নব সৃষ্ট ২০টি মেডিকেল অফিসার পদের বিপরীতেও কর্মরত আছেন মাত্র ৬ জন। ১৪টি পদেই কোন চিকিৎসক নেই। ২০ জন ইনডোর মেডিকেল অফিসারের ৮টি পদই শূণ্য।
বিশাল এ হাসপাতালে মাত্র ১ জন সিনিয়র প্যাথলজিষ্ট থাকলেও ৪ জন ক্লিনিক্যাল প্যাথলজিষ্ট-এর আছেন দুজন। স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের আদেশে শেবাচিম হাসপাতালের ৮ জন ছাড়াও বরিশাল জেনারেল হাসপাতালেরও এক চিকিৎসককে বদলী করায় সংকট সেখানেও ঘনিভুত হতে চলেছে। ৩২ জন চিকিৎসকের মঞ্জুরীকৃত মহানগরীর এ হাসপাতালটিতে আগে থেকেই ৯টি পদ শূণ্য ছিল। আরো একজনকে বদলীর ফলে ১শ শয্যার এ হাসপাতালটির প্রায় এক-তৃতীয়াংশ পদই শূণ্য হয়েছে।