মঙ্গলবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:১৩ পূর্বাহ্ন

সর্বশেষ সংবাদ :
জিয়া উদ্দিন সিকদার কে ১৭ নং ওয়ার্ড বিএনপির সংবর্ধনা প্রার্থীদের মাঝে এখনো আতঙ্ক কাটেনি: সাইফুল হক প্রার্থীদের ক্যাম্পিং ও জনগণের ভোটের নিরাপত্তা পেলেই নির্বাচন সুষ্ঠু হবে – ব্যারিস্টার ফুয়াদ মৃত চাচার পালক পুত্রকে ওয়ারিশ হিসেবে উপস্থাপনের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন বরিশাল-৪ আসনে জামায়াত প্রার্থীর মনোনয়নপত্র দাখিল মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন সোমবার, কতজন তুললেন জমা দিলেন তারেক রহমান ঢাকা-১৭ আসনে বেস্ট প্রার্থী: পার্থ তাসনিম জারার পদত্যাগ নিয়ে মুখ খুললেন আখতার পদত্যাগকারীদের বিষয়ে যা বললেন নাহিদ দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ দামে স্বর্ণ কলাপাড়ায় ঘন কুয়াশার সঙ্গে বেড়েছে শীতের তীব্রতা পটুয়াখালী-০৪ আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে মনোনয়ন পত্র দাখিল কলাপাড়া পৌর মহিলা দলের মতবিনিময় সভা ও দোয়া মোনাজাত স্ত্রীকে চিকিৎসার জন্য নেওয়ার সময় মাঝ নদীতে প্রাণ হারালেন স্বামী ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন বিএনপির মনোনয়ন বঞ্চিতরাও সক্রিয়
প্রিয় মানুষ তপা দা’র মৃত্যু ও কিছু কথা…..

প্রিয় মানুষ তপা দা’র মৃত্যু ও কিছু কথা…..

Sharing is caring!

বেলায়েত বাবলু : প্রিয় মানুষদের না ফেরার দেশে চলে যাওয়ার তালিকায় আরেকটি নাম যোগ হলো আরেকটি নাম। তপন কুমার সাহা, আমাদের সকলের প্রিয় তপা দা আর নেই। শুক্রবার বরিশাল সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকাবস্থায় তিনি পরলোকগমন করেন।

বরিশাল নগরীতে বসবাস করেন অথচ তপাকে চিনতেন না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। সদর রোড, হাসপাতাল রোড, লাইন রোড, বাজার রোড, স্ব রোড আর ভাটিখানা তপার বিচরন থাকলেও তাকে চিনতো পুরো নগরবাসী। ভাটিখানা ষোল বাড়ীর বাসিন্দা তপা যৌবনকালে দর্জির কাজ করতেন এ তথ্যটি আগে জানতাম না। শুনেছি তপা একটি মেয়েকে ভীষন ভালবাসতো। তাইতো পরিবারের সদস্যরা স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে দেশ ত্যাগ করলেও তপা দেশ ত্যাগ করেননি।

তপার বাল্য বন্ধু ভাটিখানা পুজা উদযাপন পরিষেদর সহ সভাপতি দিলীপ কুমার দাসের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বাবা রঙ্গলাল সাহা ছিলেন মুদি ব্যবসায়ী। ছোটকাল থেকেই তপা কিছুটা অলস প্রকৃতির থাকায় তার বেশীদিন দর্জির কাজ করা হয়ে উঠেনি। ৫ ভাই আর ৪ বোনের মধ্যে তপা ছিলো তৃতীয়। বাবা মা, ভাই ও বোনেরা দেশত্যাগী হওয়ার পর তপা আর সংসারের ব্যাপারে মনোযোগী হয়নি। শুরু করে যাযাবরী জীবন। রাজপথই ছিলো তার ঠিকানা। সারাদিন এক মহল্লা থেকে আরেক মহল্লা ঘুরে কারো কাছ থেকে ১০ টাকা করে চেয়ে খাবারের টাকা জোগাড় হলেই তপা ছুটে যেতো কোন খাবারের হোটেলে। দুবেলা অন্যের কাছ থেকে খাবার খেয়ে রাতে কোন এক সড়কের কোন দোকানের কোনায় তপা আশ্রয় নিতো। শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষাকে সাথে নিয়েই বছরের পর বছর এভাবেই কাটিয়ে দিয়েছে অনুমান ৬৮ বছর বয়সী তপা।

তপা পাগলা হিসেবে সকলের কাছে পরিচিত থাকলেও সে পুরোদস্ত পাগল ছিলো এটা বলা যাবেনা। মাানুষের কাছ থেকে চেয়ে খেলেও তপা কোনদিন কারোর ক্ষতি করেছে এরকম নজির পাওয়া যাবেনা। খেয়ে না খেয়ে দিন কাটিয়ে দেয়া তপা সবসময় হাসি মুখে থাকতো। স্বল্প শিক্ষিত তপাকে নিয়মিত পেপার পড়তে দেখা যেতো। নাপিত বলে যারা তপাকে ক্ষেপিয়ে মজা নিতো তারাও দিনশেষে তপা খেলো কিনা খোঁজ নিতো।

কিছুদিন পূর্বে হঠাৎ তপা অসুস্থ হয়ে পড়ে। রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে রাস্তার এক কোনায় পড়ে থাকতে দেখে অনেকেই বিচলিত হয়ে পড়ে। বাজার রোডের কিছু লোক উদ্যোগী হয়ে তাকে বরিশাল সদর হাসপাতালে ভর্তি করায়। খবর পেয়ে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ তপার চিকিৎসার খোঁজ খবর রাখার পাশাপাশি চিকিৎসা ব্যবস্থা তদারকিরও ব্যবস্থা করেন। টানা কয়েকদিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকাবস্থায় শুক্রবার সকালে তপার মৃত্যু হয়। পরে বরিশাল মহা শ্মশানে তার অন্তেষ্ট্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। মেয়র সাদিক আবদুল্লাহর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে তপার শেষকৃত্যর জন্য খরচ হওয়া সকল অর্থ তিনি বহন করবেন।

তপা চলে গেছেন না ফেরার দেশে। কিন্তু সকলের কাছে প্রিয হওয়ায় তার লাশ হাসপাতালে পড়ে থাকেনি। মেয়রসহ অন্যদের সহায়তায় যথাযথ ধর্মীয় মর্যাদায় তপা সমাহিত হয়েছে। তপার অসুস্থতা আর মৃত্যু পরবর্তী সময়ে নেয়া পদক্ষেপে মনে হয়েছে আমরা অনেক মানবিক। আমাদের নগরে যেমন মানবিক মেয়র আছেন তেমনি মানবিকতা সম্পন্ন অনেক মানুষ। রয়েছেন। তপা কেন সকলের কাছে প্রিয় ছিলো এর উত্তর পাওয়া যাবেনা হয়তে। কিন্তু আগামীতে এখানকার মানুষেরা তপাকে স্মরণ করে বলবে আমাদের এক তপা পাগলা ছিলো।

লেখক: সাবেক সাধারণ সম্পাদক, বরিশাল সাংবাদিক ইউনিয়ন।

নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন




© All rights reserved © crimeseen24.com-2024
Design By MrHostBD