বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:৫৬ অপরাহ্ন

সর্বশেষ সংবাদ :
কলাপাড়ায়- ফরিদগঞ্জ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শ্রেনিকক্ষ পরিত্যক্ত, ভবন সঙ্কট, জরাজীর্ণ টিনের ঘরে পাঠদান কলাপাড়ায় শিশু শিক্ষার্থীকে ধর্ষনের অভিযোগ কলাপাড়ায় মেগাপ্রকল্পের জমি অধিগ্রহণে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের ন্যায্যতার দাবিতে সংবাদ সম্মেলন ১০ম গ্রেডের দাবিতে বরিশালে প্রাথমিক শিক্ষকদের মানববন্ধন থ্রি হুইলার চালক শ্রমিকদলের নেতৃবৃন্দের মতবিনিময় সভা বাউফলে সিরাতুন্নবী (সাঃ) উপলক্ষে আলোচনা সভা ও দোয়া মিলাদ অনুষ্ঠিত বাউফলে প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ ও স্মারক লিপি প্রদান নার্সিং প্রশাসন ক্যাডারদের অপসারণের দাবিতে বরিশালে নার্সদের মানববন্ধন বরিশালে প্রতারনার প্রি-পেইড মিটার স্থাপন বন্ধ করার দাবিতে বরিশালে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করেছে কলাপাড়ায় বৃক্ষরোপণের প্রয়োজনীয়তা বিষয়ক ক্যাম্পেইন ও চারা গাছ বিতরণ কলাপাড়ায় ব্যাবসায়ীর হাত-পা, মুখ বেঁধে নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার লুট করেছে দুর্বৃত্তরা গণতন্ত্র দিবস ও বিএনপির বরিশাল বিভাগীয় সমাবেশে ঘনঘন লোডশেডিং ও ভূতুড়ে বিল, বিপাকে কলাপাড়া পল্লী বিদ্যুৎ গ্রাহকরা কলাপাড়ায় ইউপি চেয়ারম্যান আনছার মোল্লা কারাগারে পিলখানা হত্যাকান্ডের সুষ্ঠু তদন্ত পূর্বক বিচার ও ৯ দাবীতে চাকুরিচ্যুত বিডিআর সদস্যদের সংবাদ সম্মেলন
বরিশালে গণমাধ্যমকর্মীদের উদ্যোগ নৌবন্দরের অসহায় মানুষের খাবার সরবরাহ অব্যাহত

বরিশালে গণমাধ্যমকর্মীদের উদ্যোগ নৌবন্দরের অসহায় মানুষের খাবার সরবরাহ অব্যাহত

Sharing is caring!

করোনায় প্রতিদিন বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। বাড়ছে মৃত্যুও। মানুষের বাঁচার আকুতির সঙ্গে বাড়ছে ক্ষুধা। কর্মহীন এবং অসহায় মানুষ করোনার সঙ্গে ক্ষুধার সঙ্গেও যুদ্ধ করছে। এমন বাস্তবতায় করোনা মোকাবেলার সঙ্গে সঙ্গে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছে বরিশালের গণমাধ্যমকর্মীরা। প্রায় দেড় মাস ধরে
তারা প্রতিদিন রান্না করা খাবার সরবরাহ করছেন বরিশাল নদী বন্দরে থাকা দুই শতাধিক অসহায় চিন্নমূল শিশু ও দুস্থদের।

করোনায় চরম ঝুঁকির মধ্যে যখন সবাইকে বলা হচ্ছে ঘরে থাকুন, সুস্থ্য থাকুন। সেই মুহূর্তে বরিশালের গণমাধ্যমকর্মীরা প্রাতিষ্ঠানিক কাজের বাইরে
অতিরিক্ত ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন রান্না করা খাবার সরবরাহ করছে। মার্চ মাসের ২৬ তারিখ থেকে প্রতিদিন রাতে লঞ্চঘাটে থাকা অবহেলিত ওইসব শিশু ও অসহায়দের খাবার পরিবেশন করছেন তারা। কয়েক দিন পর দুপুরে বন্দর কর্মকর্তা আজমল হুদা মিঠু সরকারের পক্ষ থেকে দুপুরের খাবার সরবরাহ করা। তিনি ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখেন। পরে সেটা বন্ধ হয়ে যায়। তাই গত ২৬ এপ্রিল রোববার থেকে দুপুরে ছিন্নমূল শিশুদের খাবারও সরবরাহ করে গণমাধ্যমকর্মীরা। যতদিন পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হবে ততদিন দুই বেলা রান্না করা খাবার সরবারাহ করবে তারা।

গণমাধ্যমকর্মীরা তাদের এই কাজের নাম দিয়েছেন ‘উদ্যোগ’। কোন বিশেষ সংবাদকর্মীরা নয়, তাদের এই উদ্যোগের সঙ্গে আছেন বরিশাল শহীদ আবদুর রব
সেরনিয়াবত প্রেসক্লাব, বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটিসহ বরিশালের সকল গণমাধ্যম সংগঠনের কর্মীরা। এই কর্মীরা আর্থিক ও শারীরিক শ্রম দিয়ে ওই উদ্যোগ অব্যাহত রেখেছেন। বর্তমানে তাদের এই উদ্যোগের সঙ্গে আর্থিক সহযেগিতা নিয়ে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ সহযোগী হচ্ছেন। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়া পর্যন্ত এই খাবার সরবরাহ অব্যাহত থাকবে বলেও
জানিয়েছেন তারা।

গণমাধ্যমকর্মীরা জানান, সারা দেশে যখন করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে, তখন ঢাকা-বরিশালের লঞ্চসহ সকল হোটের বন্ধ করে দেয় সরকার। লঞ্চ এবং হোটেল
বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বরিশাল নৌবন্দর এলাকায় কাজ করে বেঁচে থাকা ছিন্নমূল শিশু এবং অসহায় মানুষ খাবার সংকটে পড়ে। যারা লঞ্চ এবং হোটেলের অবশিষ্ট খাবার খেয়ে জীবন চালাত। করোনার ঝুঁকি মোকাবেলায় মানুষদের সচেতন করতে গিয়ে বিষয়টি নজরে আসে সংবাদকর্মীদের। শুরুতে কয়েকজন বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করেন। পরে এটাকে বাস্তবে রূপ দিতে কাজ শুরু করেন তারা। লঞ্চঘাটে থাকা অসহায়
মানুষের এক বেলা খাবার ব্যবস্থা করার ইচ্ছা থেকেই বরিশালের গণমাধ্যম কর্মীরা কাজ শুরু করে।

প্রথম দুই দিন বরিশাল প্রেসক্লাব সম্পাদক এসএম জাকির হোসেন ব্যক্তিগতভাবে খাবার সরবরাহ করেন। পরে তার সঙ্গে অর্থ ও খাবার সহায়তা নিয়ে এগিয়ে আসেন কাজী আফরোজা নামে এক উদ্যোক্তা। এরপরই বরিশালের সকল গণমাধ্যমকর্মীরা লঞ্চঘাটে থাকা সব শিশুদের ধারাবাহিকভাবে রান্না করা খাবার সরবরাহের
উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তাদের এই উদ্যোগে সরকারি-বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠান করোনায় কর্মহীনদের সহযোগিতা দিচ্ছেন। বর্তমানে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি
পেশার মানুষ যুক্ত হচ্ছেন। গণমাধ্যমকর্মী এবং অন্যদের সহযোগিতা নিয়ে প্রতিদিন চলছে এই কার্যক্রম। যা এক মাসেরও বেশি সময় ধরে চলছে।

গণমাধ্যম কর্মীদের এই উদ্যোগ দেখে বরিশাল নদী বন্দর কর্তৃপক্ষ অসহায় এইসব মানুষদের দুপুরের খাবার দেওয়া শুরু করেন। বন্দর কর্মকর্তা আজমল হুদা মিঠু
সরকারের উদ্যোগে ওই ব্যবস্থা শুরু হয়। কিন্তু রমজান শুরু হওয়ার পর তারা তাদের উদ্যোগটি বন্ধ করে দেন। ফলে ছিন্নুমূল শিশুদের দুপুরের খাবার বন্ধ হয়ে যায়। এই অবস্থা জানতে পেরে গণমাধ্যমকর্মীরা ১ রমজান ২৬ এপ্রিল রোববার তাদের দুপুরের খাবারও সরবরাহ করে। অব্যাহতভাবে দুপুর এবং রাতে তারা খাবার
সরবরাহ করে।

পরবর্তী সময় দুপুরের খাবার সরবরাহের দায়িত্ব নিয়ে এগিয়ে আসেন বরিশালের এসএসসি-৯৩ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা। তারা প্রতিদিন দুপুরের খাবার সরবরাহ
শুরু করে। এরপর গত ৩ মে পুনরায় নৌবন্দর কর্তৃপক্ষ দুপুরের খাবার সরবরাহের দায়িত্ব গ্রহণ করতে আগ্রহী হয়। বন্দর কর্মকর্তা আজমল হুদা মিঠু সরকার এসএসসি-৯৩ ব্যাচের সঙ্গে একাত্ম হয়ে ওই দায়িত্ব গ্রহণ করেন। বর্তমানে দুপুরে একদিন বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং একদিন ৯৩-ব্যাচের শিক্ষার্থীরা খাবার সরবরাহ করে চলেছে।

অন্যদিকে গত ২৬ মার্চ থেকে অব্যাহতভাবে রাতে রান্না করা খাবার সরবরাহ করে চলেছে বরিশালের গণমাধ্যমকর্মীরা। একই সঙ্গে তারা নৌবন্দরে থাকা অসহায় মানুষদের সেহেরীরও ব্যবস্থা করে চলেছেন।
এই কর্মসূচির উদ্যোক্তাদের একজন  মঈনুল ইসলাম সবুজ জানান, করোনার কারণে সংকটে থাকা দুস্থ্য শিশু ও অসহায় মানুষের পাশে খাবার সরবরাহের চেষ্টা
অব্যাহত আছে। কোন ধরণের রাজনৈতিক চিন্তা থেকে নয়, কেবল দুঃস্থদের পাশে থাকার জন্য গণমাধ্যমকর্মীরা একাট্টা হয়েছেন। সবাই যার যার অবস্থান থেকে আর্থিক সহযোগিতা দিচ্ছেন। সেই অর্থ দিয়ে প্রতিদিন রান্না করা খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে। যতদিন অবস্থার উন্নতি না হবে ততোদিন এই চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। নৌবন্দর কর্তপক্ষ দুপুরে শিশুদের খাবার সরবরাহ করতো। তারা হঠাৎ তাদের সেই খাবার দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। তখন গণমাধ্যম কর্মীরা দুই বেলা এই অসহায় ও ছিন্নমূল শিশুদের খাবার সরবরাহ করে। এরপর এসএসসি-৯৩ ব্যাচ দুপুরের খাবারের দায়িত্ব নেয়। বর্তমানে বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং ৯৩-ব্যাচ
দুপুরের খাবারের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন।

এদিকে বরিশাল নৌবন্দর কর্মকর্তা আজমল হুদা মিঠু সরকার সাংবাদিকদের জানান,আমার সীমাবদ্ধতার কারণে দুপুরের খাবার সরবরাহ বন্ধ করা হয়েছিল। পরবর্তী সময় বিআইডব্লিউটিএ ঢাকা কার্যালয়ের সহযোগিতায় পুনরায় খাবার সরবরাহ শুরু
হয়েছে। এই খাবার চালিয়ে যেতে বরিশালের জেলা প্রশাসক ১ টন চাল বরাদ্দ দিয়েছেন। বর্তমানে আমাদের পক্ষ থেকে একদিন এবং একদিন এসএসসি ৯৩ ব্যাচের
শিক্ষার্থীরা দুপুরের খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে। যতদিন এই অবস্থা থাকবে ততোদিন সমন্বিতভাবে আমরা খাবার সরবরাহ করবো।

Print Friendly, PDF & Email

নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন




© All rights reserved © crimeseen24.com-2024
Design By MrHostBD