মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:২৮ অপরাহ্ন

সর্বশেষ সংবাদ :
কলাপাড়ায় প্রীতি ফুটবল ম্যাচ অনুষ্ঠিত কলাপাড়ায় ডাকাত দলের ৬ সদস্য আটক মৎস্যজীবী দলের দোয়া মুনাজাত বাউফলে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে সার ও বীজ বিতরণ বাউফলে আগষ্টের গনঅভ্যুত্থানে নিহত শহীদদের উদ্দেশ্যে স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত কলাপাড়ায় তারেক রহমান’র মুক্তির খবরে আনন্দ মিছিল কলাপাড়ায় উড়ন্ত মৃদু বিষধর বিলুপ্তপ্রায় লাউডগা সাপ উদ্ধার কলাপাড়ায় যাত্রীবাহি ৩ টি বাস থেকে ২৫ মন জাটকা ইলিশ জব্দ কলাপাড়ায় শের-ই বাংলা নৌ ঘাঁটিতে নৌবাহিনীর নবীন নাবিকের শিক্ষা সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত মামলা থেকে তারেক রহমানকে অব্যাহতি দেওয়ায় দোয়া মাহফিল শ্রমিকদলের আলোচনা সভা এবং দোয়া মুনাজাত নগরীতে নিখোঁজ কলেজ ছাত্রী মিলা বাউফলে একই রাতে দুই বাড়িতে ডাকাতি বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে শহীদদের স্মরণে সরকারি মোজাহার উদ্দিন বিশ্বাস কলেজের কর্মসূচি কুয়াকাটায় সানভিউ প্রপার্টিজ এমডির বিরুদ্ধে ১ কোটি ৮৪ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ
যেখানে ব্যতিক্রম মনীষা চক্রবর্তী

যেখানে ব্যতিক্রম মনীষা চক্রবর্তী

Sharing is caring!

শফিক মুন্সি: বরিশাল নগরীর চল্লিশোর্ধ্ব রিকশা চালক শাজাহান মিয়া। তবে রিকশা তার নিজের নয়। ভাড়ায় চালানোর কারণে রিকশা নিয়ে বের হলেই মালিককে দিতে হয় তিনশো টাকা।চারজনের সংসার নিয়ে নগরীর সাগরদি এলাকায় ভাড়া ঝুপড়িতে থাকেন। করোনার প্রাদুর্ভাব রুখতে শহরজুড়ে মানুষ যখন ঘরবন্দী তখন শাজাহান মিয়ার কপালে চিন্তার ভাঁজ। প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা আর রাস্তায় লোকজনের অভাবে রিকশা নিয়ে বের হতে পারছেন না নিয়মিত। আবার রিকশা না চালাতে পারলে চারজন মানুষের জন্য চুলায় আগুন জ্বলে না। পেটের তাগিদে ঘরে না থাকতে পারা এমন মানুষদের জন্য বিশেষ কর্মসূচী নিয়েছে বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল(বাসদ) বরিশাল জেলা শাখা। নগরীর নিম্নআয়ের মানুষদের জন্য নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য ও ব্যক্তিগত পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা সামগ্রী বিতরণের ব্যবস্থা করেছে তারা।

শাজাহান মিয়া বলেন, ” রোজগার কইম্মা যাওয়ায় চোহে আন্ধার দেহা শুরু করছেলাম।করোনার জন্যে রিকশা চালানোও বন্দ হয়ে যাচ্ছিলো। তহন দিদির কাছ দিয়া চাইল-ডাইল পাই”। উল্লেখিত এই দিদি হচ্ছেন ডা. মনীষা চক্রবর্তী। আছেন বরিশাল জেলা বাসদের সদস্য সচিবের দায়িত্বে ।শাজাহান মিয়া আরো জানান, করোনা প্রভাবে তার দৈনিক আয় কমে গেলেও পান নি সরকারি – বেসরকারি কোন সাহায্য। গত রবিবার সর্বপ্রথম জেলা বাসদের পক্ষ থেকে একটি প্যাকেট পেয়েছেন তিনি।যার মধ্যে ছিল ৪ কেজি চাল, ৩ কেজি আলু, আধা লিটার সয়াবিন তেল, ১ কেজি মসুর ডাল, ১ কেজি লবণ, ১ কেজি পেঁয়াজ, ১টি সাবান ও ১ প্যাকেট মশার কয়েল। করোনা পরিস্থিতিতে এখন কয়েকটা দিন ঘরে থাকতেও তার অসুবিধা হবে না।

শাজাহান মিয়ার মতো এমন গল্প অনেকের। করোনা বিপর্যয় শুরুর সাথে সাথে নগরীতে বিভিন্ন কর্মসূচী হাতে নেয় বাসদ।এগুলোর মধ্যে ছিল করোনা প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধি, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা সামগ্রী বিতরণ, যানবাহনে স্প্রে করা, চিকিৎসকদের জীবাণু প্রতিরোধক নিরাপত্তা সামগ্রী প্রদান ও নিম্ন আয়ের মানুষদের খাদ্য সামগ্রী বিতরণ। প্রতিটি কর্মসূচীতেই সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন ডা. মনীষা চক্রবর্তী। ক্ষমতাসীন কিংবা বড় রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা করোনা বিপর্যয়ে দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতির মাঠে অনুপস্থিত। সেখানে শুরু থেকেই বিভিন্ন ছোট ছোট পদক্ষেপ নিয়ে নগরবাসীর পাশে ছিলেন মনীষা চক্রবর্তী। এতে করে ইতোমধ্যে নগরবাসীর প্রশংসা কুড়িয়েছেন তিনি। সচেতন মহলের চোখে পড়েছেন রাজনীতির সৌন্দর্য হিসেবে।

বৃহৎ লোকবল, রাজনৈতিক পেশিশক্তি কিংবা অর্থনৈতিক ক্ষমতা কোনোটিই নেই বয়সে তরুণ এই রাজনীতিবিদের। সর্বশেষ বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে একমাত্র নারী প্রার্থী হিসেবে নজরে আসেন। ভোটগ্রহণের দিন ক্ষমতাসীন দলের কর্মীদের কাছে মার খেয়েছেন দাবি করলে আলোচনায় আসেন পুরো দেশে। এরপর থেকে বরিশালের রাজনীতির মাঠে তাকে নিয়মিত সক্রিয় থাকতে দেখা গেছে। নগরীর অটোরিকশা চালকসহ নিম্নআয়ের মানুষদের বিভিন্ন আন্দোলনে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে গেছেন। আর এখানেই ব্যাতিক্রম তিনি। ক্ষমতাসীন কিংবা বড় দলের নেতারা যেখানে বিশাল কর্মীবাহিনী বেষ্টিত থাকেন সবসময়। দামি জামাকাপড় আর বড়লোকি অভ্যাসে নিম্নশ্রণীর মানুষদের থেকে দূরত্ব বজায় রেখে রাজনীতি করেন। সেখানে সহজে প্রাপ্য মনীষা চক্রবর্তীর সঙ্গে শহরের নিম্ন বা স্বল্প আয়ের মানুষদের সরাসরি যোগাযোগ।

সর্বশেষ করোনা ভাইরাসের সংক্রমণে বিশ্বব্যাপী সকলের স্বাস্থ্য ঝুঁকি বেড়ে যায় । সচেতনতার অভাবে বরিশাল নগরজুড়ে বাড়ে আক্রান্তের শংকা। সংক্রমণ রুখতে সরকারি প্রশাসন কার্যত লকডাউন করে রেখেছে সবকিছু। স্বল্প আয়ের মানুষদের ওপর পড়তে শুরু করে লকডাউনের প্রভাব। নাগরিকদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি ও নিম্নআয়ের মানুষদের সহযোগিতা করার কথা চিন্তা করে প্রথম থেকেই বিভিন্ন কর্মকান্ড শুরু করেন মনীষা চক্রবর্তী। যেগুলো করার দায়িত্ব ছিল স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের। তবে মনীষা চক্রবর্তী বিভিন্ন কার্যক্রম শুরু করলেও দীর্ঘদিন কোনো পর্যায়েরই ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের দেখা মেলেনি। সংকটের মধ্যে জনপ্রতিনিধিদের এমন আচরণে ক্ষুব্ধ ছিলো নগরবাসী।

তিনদিনে ৮০০ পরিবারকে জরুরী খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দিয়েছেন বলে জানান ডা. মনীষা চক্রবর্তী। তিনি আরো জানান, ১৮ই মার্চ থেকে করোনা প্রতিরোধে নগরবাসীর জন্য কাজ করে যাচ্ছে তাঁর সংগঠন। তবে এই সংকটময় মুহূর্তে সরকারি সহায়তার বাইরে গিয়ে বৃহৎ পরিসরে মানুষের পাশে দাঁড়ানো সম্ভব নয়। তিনি বলেন, ” খাদ্য সরবরাহ কিংবা আপৎকালীন সহায়তা বাদ দিয়ে নিম্নআয়ের মানুষদের ঘরে রাখা সম্ভব নয়।আর তাদেরকে ঘরে না রাখতে পারলে করোনা পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে৷ তাই সরকারের কাছে আমাদের স্পষ্ট দাবি গরীব এবং দুঃস্থ মানুষদের জন্য রেশনিং পদ্ধতি চালু করা হোক। এছাড়া নাগরিকদের বাসায় থাকতে গিয়ে আয়ের ওপর যেন গুরুতর প্রভাব না পড়ে সেটাও সরকারকেই দেখতে হবে”৷

লেখক: সাংবাদিক, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়।

নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন




© All rights reserved © crimeseen24.com-2024
Design By MrHostBD