বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৩৯ অপরাহ্ন
সৈয়দ মেহেদী হাসান (অতিথি প্রতিবেদক): ১০ নং ওয়ার্ড কেডিসি বস্তির দিন মজুর পারুল বেগম কাজ করছেন রুপাতলী গ্যাসটারবাইন এলাকার একটি নব নির্মিত ভবনে দিন মজুরের। পারুলের সাথে আরও কয়েকজন শ্রমিক ঘাম ঝড়িয়ে যাচ্ছেন। একটু বিরতি দিলে কথা হয় পারুলের সাথে। তিনি বলেন, টিভিতে-মানসের মুখে হুনছি করুনা আইচে। হাত ধোয়া লাগবে। ঘরে থাকা লাগবে। কিন্তু মুই গরিব। মোর কি অত বড়লোকি সাজে? কাম না হরলে খাওয়াইবে কেডা?
শুধু পারুল নয়; একই বক্তব্য শ্রমিক রেহেনা, ইউনুস, মজিতন বিবির। এটি রুপাতলীর চিত্র সেটাই নয়; নগরীর ৩৫টি বস্তির ৫০ হাজারের অধিক বাসিন্দা এখনো জানে না করোনা প্রতিরোধে তাদের কি করতে হবে। কেডিসির পাশের বস্তি বালুর মাঠ, ভাটার খাল। তার অদূরে নদীর ওপার হিরন নগর ও ৯ নং ওয়ার্ডের রসুলপুর, পলাশপুরের অবস্থান। এসব বস্তি ঘুরেও দেখা মিললো একই চিত্রের। বাসিন্দারা বলছেন, নারী/পুরুষ কোন কাউন্সিলরই আসেনি তাদের খোঁজ নিতে; সচেতন করতে। যদিও নির্বাচনের আগে কাজ ছাড়াই কাউন্সিলররা এসে খোঁজ খবর নিতেন। আর এখন ক্রান্তিকালে নিম্নবিত্তের ঘরে কোন বার্তা পৌঁছাচ্ছে না জনপ্রতিনিধিরা। অথচ বিশ্বব্যাপী প্রানহানি ঘটিয়ে কোভিড-১৯ ভাইরাসটি বাংলাদেশে সংক্রমণ ঘটাচ্ছে। তার ধাক্কা এসে লেগেছে বরিশাল নগরেও। মঙ্গলবার সিটি কর্পোরেশন এলাকার দুইজনকে কোভিড-১৯ করোনা ভাইরাস আক্রান্ত সন্দেহে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে। পুরো বিভাগে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে আড়াই হাজারের অধিক। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের চেয়েও ভয়াবহ এই ভাইরাসের সংক্রমন থেকে বাচাতে কার্যকরি প্রচার-প্রচারণায় না নামায় ক্ষোভ রয়েছে অনেকের মনেই।
নিম্নবিত্ত এসব এলাকার মানুষ মনে করেন, ঈদে-পূজা বা যেকোন উৎসবে সিটি কর্পোরেশনকে যেভাবে কাছে পায় চলমান দুঃসময়েও তেমনি পাশে এসে দাড়াবে। নয়তো বস্তিবাসির না খেয়ে থাকতে হবে। অসচেতনতায় প্রান দিতে হবে।
বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তারা বলছে, ইতিমধ্যে কিছু স্থানে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। নগরীতে চালানো হয়েছে মাইকিং। বিতরণ করা হয়েছে লিফলেট। সর্বশেষ একটি সেল স্থাপন করা হয়েছে।
মূলত বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের তিনটি থানা, ৩০টি ওয়ার্ড ও ২২৫টি মহল্লার ৫৮ বর্গ কিলোমিটার এলাকা নিয়ে সিটি কর্পোরেশন। ২০১১ সালের আদমশুমারি বলছে প্রশাসনিক এই এলাকায় ৩ লাখ ২৮ হাজার ২৭৮ জন মানুষ বসবাস করেন। আর কর্পোরেশন সূত্রে জানা গেছে, বিগত ৯ বছরে জনসংখ্যা বেড়ে পাঁচ লাখ ছাড়িয়েছে। উদ্বেগের তথ্য হলো পাঁচলাখ মানুষের কমপক্ষে অর্ধলাখ বসবাস করেন নগরীর ৩৫টি বস্তিতে। এই বস্তির বাইরে আবার কিছু এলাকা রয়েছে যেখানে সম্পূর্ন নাগরিক সেবা পৌঁছেনি এখনো। মূল শহরের বাইরে অথচ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে নজরদারী বাড়ানো দরকার বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দারা। কথা হয় নগরীর বিচ্ছিন্ন ২৬ নং ওয়ার্ডের চরজাগুয়ার বাসিন্দা আঃ ছালাম মোল্লার সাথে। তিনি জানান, করোনা সচেতনতায় তারা কি করবে তা কিছুই জানায়নি সিটি কর্পোরেশন। যা টেলিভিশনে দেখেছে। পাশের ইউনিয়নের মানুষ এসে বলেছে। অথচ তারা যে এলাকার বাসিন্দা সেখান থেকে হাত ধোয়ার জন্য পানির ট্যাংকি, সাবান, স্যানেটাইজার-কিছুই দেয়নি। ‘আমাগো খোঁজ নিবে কি! কর্পোরেশনইতো মনে হয় করেন্টাইনে। নইলে একবার হইলেওতো আইতো’ বলেন আরেক বাসিন্দা ওবায়েদুল মুন্সি।
২৩ নং ওয়ার্ড তাজ কাঠির বাসিন্দা রাহেলা বেগম বলেন, ট্যাক্স নেওনের সময় আইন-আদালত লইয়া আয়। আর এহন বিপদে পরছি। কোন মনুগো চোহে দেহি নায়। এই নেতাগো বিচার আল্লায় করবে।
উল্লেখিত এলাকার পাশাপাশি আরও ওয়ার্ড ঘুরে এমন কথা শোনা গেলো বাসিন্দাদের কাছে। যদিও ব্যাক্তি উদ্যোগে এবং প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগে জনসচেতনতা কার্যক্রম ও পরিচ্ছন্নতা সামগ্রি বিতরণ করছেন অনেকেই। যা প্রান্তিক মানুষের মনে জুগিয়েছে ভরসা। এরমধ্যে পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী ও বরিশাল সদর আসনের সংসদ সদস্য কর্নেল (অবঃ) জাহিদ ফারুক, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদের জেলা শাখার সদস্য সচিব ডাঃ মনীষা চক্রবর্তী নগরবাসী ও বিভিন্ন বস্তিতে গিয়ে করোনা সুরক্ষায় মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরণ করেছেন। বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের উদ্যোগে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের সড়ক জীবানুমুক্ত করনকল্পে ওয়াটার ক্যানন ব্যবহার করে স্প্রে করেছে।
করোনা প্রতিরোধে গৃহিত পদক্ষেপ সর্ম্পকে জানতে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ ইসরাইল হোসেনের সাথে আলাপ করলে তিনি এই বিষয়ে কোন কথা বলতেই রাজি হননি। প্রশাসনিক কর্মকর্তা কাজী মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, করোনা প্রতিরোধে সিটি কর্পোরেশন কি করছে সেই সর্ম্পকে কোন কথা বলার এখতিয়ার তার নেই। তবে প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ মতিউর রহমান জানিয়েছেন, করোনা প্রতিরোধের সবগুলো সমন্বয় সভায় সিটি কর্পোরেশনের প্রতিনিধি ছিল। তারা ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। পাশাপাশি ডেঙ্গু প্রতিরোধে স্প্রে করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
এই কর্মকর্তা বলেন, করোনা প্রতিরোধে আগে নিজেকে রক্ষা করতে হবে। সবাইকে ঘরে থাকতে হবে। কে কি করলো তা দেখার বিষয় এখন না।
সুত্র: হ্যালো বরিশাল