বৃহস্পতিবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৪, ১১:২৬ পূর্বাহ্ন
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের একামেডিক ভবনে প্রকাশ্যে এক ছাত্রীকে শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতনের ঘটনার ৫ দিনেও কোন ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ। এমনকি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ওই ছাত্রীকে দেখতে পর্যন্ত যায়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা। যদিও কর্তৃপক্ষ এ বিষয়টি তদন্তের প্রয়োজনীয়তা আছে কি না তা খতিয়ে দেখার কথা বলেছে। সব কিছু ছাপিয়ে ওই ছাত্রী ক্লাসে ফেরার আকুতি জানিয়েছেন। তিনি তার উপর নির্যাতনের ঘটনায় ছাত্রলীগ নামধারীদের সাথে গণিত বিভাগের ২জন শিক্ষকের জড়িত থাকার সন্দেহ করছেন।
এদিকে শিক্ষার্থী নির্যাতনের ঘটনায় ওই ছাত্রীর পরিবার থানায় কোন অভিযোগ দেয়নি। এর আগে একবার নির্যাতনের ঘটনায় থানায় সাধারন ডায়রি করেও কোন বিচার পায়নি তারা। তাই এবার আগে সুস্থ হয়ে পরে অভিযোগ দায়ের করার কথা জানিয়েছেন তারা। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ওই ছাত্রী ও তার পরিবার এখন চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছেন।
গত পহেলা মার্চ বিকেলে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের ২০১৫-১৬ বর্ষের ভেক্টর ক্যালকুলাস (এমএইচ ২২২) পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ওইদিন পরীক্ষা শেষ হওয়ার ৪৫ মিনিট আগে কোন কারণ ছাড়াই জান্নাতুল নওরীন উর্মি নামে ওই শিক্ষার্থীর উত্তরপত্র টেনে নিয়ে হল থেকে বের করে দেন হল পরিদর্শক গণিত বিভাগের প্রভাষক সুজিত কুমার বালা।
উর্মি জানান, একাডেমিক ভবনের সিড়ি বেয়ে নামার সময় আচমকা অন্তত ১৫জন মুখোশধারী তার পথরোধ করে শারীরিক নির্যাতন শুরু করে। পরে তাকে ৫ম তলার একটি নির্জন স্থানে নিয়ে লাঠিসোটা এবং ক্রিকেট স্ট্যাম্প দিয়ে বেদম মারধর করে তারা। এতে সে মেঝেতে লুটিয়ে পড়লে তারা তার শরীরে উঠে পদদলিত করে। এ সময় তার হাতে থাকা জ্যামিতি বক্সের সুচালো কাটা দিয়ে তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে ক্ষত করে।
এ ঘটনার পর ৪দিন গোপনে বাসায় রেখে চিকিৎসা দেয়া হলেও ইনফেকশনের আশংকায় গত বুধবার বিকেলে তাকে শের-ই বাংলা মেডিকেলে ভর্তি করেন স্বজনরা। হাসপাতালেও নিরাপত্তাহীনতার কথা জানিয়েছেন উর্মির বোন ফাতেমা-তুজ জোহরা মিতু।
শের-ই বাংলা মেডিকেলের মহিলা সার্জারি ওয়ার্ডের সহকারি রেজিস্ট্রার ডা. মাহবুব আলম জানান, উর্মিকে অমানুষিক নির্যাতন করা হয়েছে। তাকে যথাযথ চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
অপরদিকে ওই ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনার ৪ দিন পর হাসপাতালে ভর্তি করা হল তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর। তিনি বলেন, এ ঘটনায় কোন লিখিত অভিযোগ পাননি। তারপরও গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রচারিত সংবাদের প্রেক্ষিতে এ ঘটনা তদন্তের প্রয়োজন আছে কি না তা খতিয়ে দেখার কথা বলেন প্রক্টর ড. সুব্রত কুমার দাস। তদন্তের প্রয়োজন হলে অভিযুক্ত যেই হোক না কেন তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেন তিনি।
ওই ছাত্রীকে নির্যাতনে ছাত্রলীগের কেউ জড়িত নয় বলে দাবি করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ নেতা মহিউদ্দিন আহমেদ শিফাত। তিনি বলেন, সামনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের কমিটি হবে। ওই কমিটিতে স্থান পেতে লাইম লাইটে আসার জন্য উর্মি নিজেই নাটক সাজিয়েছে।
উল্লেখ্য, উর্মির বাবা মহানগরীর ২ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি, তার বড় বোন মিতু মহিলা দল কেন্দ্রিয় কমিটির সহ মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক এবং বড় ভাই মেহেদী হাসান সোহেল মহানগর যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক। পদ-পদবী না থাকলেও উর্মি নিজে ছাত্রদলের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত।