বৃহস্পতিবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:১৫ পূর্বাহ্ন

সর্বশেষ সংবাদ :
পটুয়াখালী ও বাউফলে আগরতলায় বাংলাদেশের উপ হাইকমিশনার অফিসে হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ কলাপাড়ায় প্রীতি ফুটবল ম্যাচ অনুষ্ঠিত কলাপাড়ায় ডাকাত দলের ৬ সদস্য আটক মৎস্যজীবী দলের দোয়া মুনাজাত বাউফলে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে সার ও বীজ বিতরণ বাউফলে আগষ্টের গনঅভ্যুত্থানে নিহত শহীদদের উদ্দেশ্যে স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত কলাপাড়ায় তারেক রহমান’র মুক্তির খবরে আনন্দ মিছিল কলাপাড়ায় উড়ন্ত মৃদু বিষধর বিলুপ্তপ্রায় লাউডগা সাপ উদ্ধার কলাপাড়ায় যাত্রীবাহি ৩ টি বাস থেকে ২৫ মন জাটকা ইলিশ জব্দ কলাপাড়ায় শের-ই বাংলা নৌ ঘাঁটিতে নৌবাহিনীর নবীন নাবিকের শিক্ষা সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত মামলা থেকে তারেক রহমানকে অব্যাহতি দেওয়ায় দোয়া মাহফিল শ্রমিকদলের আলোচনা সভা এবং দোয়া মুনাজাত নগরীতে নিখোঁজ কলেজ ছাত্রী মিলা বাউফলে একই রাতে দুই বাড়িতে ডাকাতি বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে শহীদদের স্মরণে সরকারি মোজাহার উদ্দিন বিশ্বাস কলেজের কর্মসূচি
বিপিএল ইতিহাসের সেরা ক্রিকেটারই নেই সেরা মঞ্চে

বিপিএল ইতিহাসের সেরা ক্রিকেটারই নেই সেরা মঞ্চে

Sharing is caring!

অনলাইন ডেক্স: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীতে বিরাট আয়োজন নিয়ে আসছে ঘরোয়া ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় টুর্নামেন্ট বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল)। ২০১৯-২০ মৌসুমের এই আসরটি নিয়ে নানামুখী আয়োজন হাতে নিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। ইতোমধ্যে আসরটির উদ্বোধনী ও সূচির দিন-তারিখের ঘোষণা করেছে বিসিবি।

মিরপুরের হোম অব ক্রিকেট শের-ই-বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ১১ ডিসেম্বর শুরু হবে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) সপ্তম আসর। বিশেষ নামে হচ্ছে এবারের আসর (বঙ্গবন্ধু বিপিএল)। এবারের টুর্নামেন্টে কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি থাকছে না। সাতটি দলের পরিচালনার দায়িত্বেই থাকছে বিসিবি। বিসিবির নিজস্ব ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনায় আয়োজিত বিশেষ এই বিপিএল উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মিরপুরের হোম অব ক্রিকেটে আগামী ৮ ডিসেম্বর টুর্নামেন্টের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী।

…কিন্তু দুঃখের বিষয় হলেও সত্য এমন চমৎকার একটি মঞ্চে থাকছেন না বিপিএল ইতিহাসের সেরা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান। জুয়াড়ির প্রস্তাব গোপন করায় সাকিবকে গত ২৯ অক্টোবর সবধরনের ক্রিকেট থেকে দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি)। দুই বছরের মধ্যে এক বছর পুরোপুরি নিষিদ্ধ, আর বাকি এক বছর স্থগিত নিষেধাজ্ঞা অর্থাৎ খেলতে পারবেন কিন্তু আবারও অপরাধ করলে শাস্তি পেতে হবে।

আইসিসি’র দুর্নীতিবিরোধী আইনের তিনটি ধারা ভঙ্গ করার কথা স্বীকার করায় তাকে এই শাস্তি পেতে হচ্ছে। তিনটি অভিযোগই অবশ্য মেনে নিয়েছেন সাকিব। শাস্তি নিয়ে সাকিব আইসিসি’র সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন। ২০২০ সালের ২৯ অক্টোবর থেকে ফের মাঠে ফিরতে পারবেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার।

কিন্তু বিশ্ব ক্রিকেটে বাংলাদেশের সেরা বিজ্ঞাপন এবারের বিপিএল আসরে না থাকায়, তাকে যে সমর্থকরা প্রচণ্ডভাবে মিস করবেন তা তার বিগত আসরগুলোর পারফরম্যান্সেই বলে দেয়। তাকে বিপিএলের সেরা বলতে একটি পরিসংখ্যানই যথেষ্ট, আগের ৬ আসরের ৩টিতেই তিনি টুর্নামেন্ট সেরা নির্বাচিত হয়েছেন!

…২০১২ মৌসুমে প্রথমবার যাত্রা শুরু করে বিপিএল। সেবার চ্যাম্পিয়নের মুকুট পরে তখনকার ফ্র্যাঞ্চাইজি ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটরস। আর রানারআপ হয় বরিশাল বার্নাস। কিন্তু মজার ব্যাপার সাকিব দুটি দলের একটিতে না খেলেও টুর্নামেন্ট সেরা হন আপন পারফরম্যান্সে। সে সময়ের ফরম্যাটে সেমিফাইনালে ঢাকার কাছে হেরে বিদায় নেয় খুলনা রয়্যাল বেঙ্গলস। আর এই খুলনারই অধিনায়ক সাকিব সেবার ১১ ম্যাচে ২৮০ রানের পাশাপাশি ১৫টি উইকেট দখল করেন।

পরেরবার ২০১২-১৩ মৌসুমে খুলনা ফ্র্যাঞ্চাইজি ছেড়ে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ঢাকায় পাড়ি দেন সাকিব। আর ঢাকা দ্বিতীয়বারের মতো শিরোপা ঘরে তুললে সাকিবও জয়ী দলের সদস্য বনে যান। তবে দলটি অনেকটা তার অলরাউন্ড পারফরম্যান্সের ওপর নির্ভর করেই চ্যাম্পিয়ন হয়। ফলে এবারও টুর্নামেন্ট সেরার পুরস্কার ওঠে তারই হাতে। আসরটিতে ১২ ম্যাচে ৩২৯ রানের পাশাপাশি ১৫টি উইকেট শিকার করেন।

এক বছর বিরতি দিয়ে ২০১৫-১৬ মৌসুমে শুরু হয় বিপিএলের তৃতীয় আসর। আগের দুই মৌসুমের মতো এবারও দলে পরিবর্তন আনেন সাকিব। যোগ দেন তখনকার দল রংপুর রাইডার্সে। তবে সেবার প্রথমবার অংশ নিয়ে শিরোপা ঘরে তোলে কুমিল্লা ভিন্টোরিয়ান্স। রানারআপ হয় বরিশাল বুলস। সাকিবের দল রংপুর অবশ্য প্লে-অফ খেলে বিদায় নেয়। সেই আসরে টুর্নামেন্ট সেরা না হলেও পারফরম্যান্সে তেমন একটা ভাটা পড়েনি তার। ১১ ম্যাচে ১৩৬ রানের পাশাপাশি ১৮টি উইকেট তুলে নেন।

…২০১৬-১৭ মৌসুমে চতুর্থ আসরে পা রাখে বিপিএল। এই মৌসুমে আবারও দল পরিবর্তন করেন সাকিব। ঢাকার নতুন ফ্র্যাঞ্চাইজি ঢাকা ডায়নামাইটসে যোগ দেন তিনি। এই আসরে আবার চ্যাম্পিয়নও হয় দলটি। শিরোপাধারী দলটির হয়ে ব্যাটে-বলে দারুণ অবদানও রাখেন তিনি। ১৪ ম্যাচে ২২৬ রানের পাশাপাশি ১৩টি উইকেট দখল করেন।

পরের মৌসুম ২০১৭-১৮-তে ফের ঢাকা ডায়নামাইটসের নেতৃত্ব দেন সাকিব। এবার অবশ্য তার দল নতুন মালিকানার ফ্র্যাঞ্চাইজি রংপুর রাইডার্সের কাছে ফাইনালে শিরোপা খোয়ায়। কিন্তু পারফরম্যান্সে কোনো দাগ লাগতে দেননি বাঁহাতি এই তারকা ক্রিকেটার। ১৩ ম্যাচে ২১১ রানের সঙ্গে ২২টি উইকেট তুলে নেন। আসরটির সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি ছিলেন তিনি।

২০১৮-১৯ মৌসুমে বিপিএলের ষষ্ঠ ও সর্বশেষ আসরটি মাঠে গড়ায়। এই আসরে টানা তৃতীয়বারের মতো ঢাকা ডায়নামাইটসকে নেতৃত্ব দেন সাকিব। তার অধিনায়কত্বে আবারও ফাইনালে ওঠে দলটি। তবে এবারও আশা ভঙ্গ হয়। শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স দ্বিতীয়বার ট্রফির উৎসব করলে রানারআপ হয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয় সাকিবকে। কিন্তু পুরো টুর্নামেন্টে পারফরম্যান্সে ছাড়িয়ে যান সবাইকে। মানে তৃতীয়বারের মতো টুর্নামেন্ট সেরা হন তিনি। ১৫ ম্যাচে ৩০১ রানের পাশাপাশি দখল করেন ২৩টি উইকেট। এবারও সর্বোচ্চ সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি হন।

এতো গেল প্রতিটি আলাদা আসরে সাকিবের ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স। এবার দেখি পুরো বিপিএলে ইতিহাসে সাকিব কোথায় আছেন। এই তালিকাগুলোতেও হয়তো তিনি লিড দিচ্ছেন, না হয় ওপরের দিকেই রয়েছেন।

…বিপিএলের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলা ক্রিকেটার সাকিব। ঢাকা ডায়নামাইটস, ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটরস, খুলনা রয়্যাল বেঙ্গলস ও রংপুর রাইডার্সের হয়ে মোট ৭৬টি ম্যাচ খেলেছেন তিনি। সেরা পাঁচে অন্যরা হলেন, মাহমুদউল্লাহ (৭৫), মাশরাফি বিন মর্তুজা (৭৪), সাব্বির রহমান (৭৪) ও আনামুল হক (৭২)।

অধিনায়ক হিসেবে সর্বোচ্চ ম্যাচ খেলা ক্রিকেটারের মধ্যে সাকিব রয়েছেন সেরা তিনে। ঢাকা ডায়নামাইটস, খুলনা রয়্যাল বেঙ্গলস ও রংপুর রাইডার্সের হয়ে ৬৪টি ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। ৭৩ ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়ে শীর্ষে রয়েছেন মাশরাফি। আর মাহমুদউল্লাহ ৬৯ ম্যাচে অধিনায়কত্ব করে দ্বিতীয়স্থানে জায়গা করে নিয়েছেন।

বিপিএলের সর্বোচ্চ রানের তালিকায় সাকিব সেরা পাঁচেই রয়েছেন। ৭৬ ম্যাচ ও ৭৫ ইনিংস ব্যাট করে ১৪৮৩ রানে তার অবস্থান চতুর্থ। যেখানে ১২৯.২৯ স্ট্রাইক রেটে তার গড় ২৫.১৩। আর এক ইনিংসে সর্বোচ্চ ৮৬ (অপরাজিত) করা এই তারকা মোট পাঁচটি হাফসেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন। তার ব্যাট থেকে ১৪৩টি চার ও ৩৮টি ছক্কা এসেছে। সর্বোচ্চ রানে সাকিবের ওপরে শীর্ষ থেকে রয়েছেন যথাক্রমে তামিম ইকবাল (১৮২৫), মুশফিকুর রহিম (১৭৮৩) ও মাহমুদউল্লাহ (১৬১৯)।

…আসরটির ইতিহাসে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারের তালিকায় অবশ্য সাকিবের আধিপত্য স্পষ্ট। ৭৬ ম্যাচে ১০৬ উইকেট নিয়ে তিনি মোটামুটি সবার ধরাছোঁয়ার বাইরে। যেখানে ওভার প্রতি ৬.৭৩ ইকোনোমিতে সাকিব প্রতিটি উইকেট পেতে ১৭.৮৩ রান দিয়েছেন। ৭৪ ম্যাচ খেলা মাশরাফি ৭৩ উইকেট নিয়ে দ্বিতীয়স্থানে রয়েছেন। পরের তিনটি জায়গায় রয়েছেন যথাক্রমে রুবেল হোসেন (৭০), শফিউল ইসলাম (৬৯) ও কেভিন কুপার (৬৩)।

এবারের বিপিএল হবে ইতিহাসের সবথেকে জাকজমকপূর্ণ ঘরোয়া লিগ। বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন জানিয়ে রেখেছেন, ‘যেহেতু বঙ্গবন্ধুর নামে হচ্ছে, জাকজমকপূর্ণভাবে করা উচিত এবারের বিপিএল। এটুকু বলতে পারি, ক্রিকেট বোর্ডের ইতিহাসে এত জাঁকজমকপূর্ণভাবে কোনো আয়োজন করা হয়নি। সেরকম কিছু করারই ইচ্ছে আছে। অনেক বড় প্রোগ্রাম হবে, আয়োজনের ব্যাপারে এখনই কিছু বলতে চাচ্ছি না। তবে অনেক কিছু থাকবে। এত কিছু একসঙ্গে বাংলাদেশে আর হয়নি, তেমন কিছু করার ইচ্ছে আছে।’

বিপিএলের ছোটখাট আরও অনেক রেকর্ড ঘাটলেই সাকিবের নাম ওপরের দিকেই পাওয়া যায়। মোটাদাগে বলা যায়, বিপিএলের সেরা এই আসরে টুর্নামেন্টটি তার সেরা ক্রিকেটারকেই মিস করবে।

নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন




© All rights reserved © crimeseen24.com-2024
Design By MrHostBD