মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫, ০৪:৪২ অপরাহ্ন
অনলাইন ডেক্স: ডিম ও ব্রয়লার মুরগীর দাম সরকারের পক্ষ থেকে ভিন্ন ভিন্ন ভাবে খামারী, আরৎদার , ভোক্তা পর্যায়ে মূল্য নির্ধারন করে দেওয়ার দাবিতে বরিশালে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। রোববার সকাল ১১ টায় শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত বরিশাল প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ পোল্ট্রি খামার রক্ষা জাতীয় পরিষদ বরিশাল বিভাগীয় শাখা এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন, সংগঠনটির সভাপতি মো. আব্দুর রহিম গাজী। তিনি বলেন, পোল্ট্রি সেক্টর বাংলাদেশের ২য় বৃহত্তম কর্মসংস্থান খাত। বরিশাল বিভাগে চার লক্ষ কর্মজিবী মানুষ এই খাতে জড়িত। কিন্তু বর্তমানে এই খাতের প্রতিটি মানুষ এখন এক আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। কভিড-১৯ এর ২ বৎসরে এই সেক্টরের প্রতিটি মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছ।
এবং বহু খামার তখন ঝড়ে গেছে। পরবর্তিতে যখন আবার ঘুরে দাড়াচ্ছিল তখন আবার ইউক্রেন/রাশিয়ার যুদ্ধের কারনে এই সেক্টরে প্রতিটি খাদ্যপন্যের মূল্য হুহু করে বৃদ্ধি পেতে থাকে আর ফিডমিল গুলো এই সুযোগে তাদের প্রস্তুতকৃত খাদ্যের দাম অধিক বৃদ্ধি করতে থাকে। বিগত ২ থেকে আড়াই মাসের মধ্যে খাদ্যের দাম চার বার বৃদ্ধি করা হয়েছে। তাই যখন আমরা ১৬০০ টাকা বস্তায় খাবার কিনিছি তখন একটি ডিম ৫ থেকে ৭ টাকার বিক্রি করেও খামারী টিকে রয়েছে। এখন সেই ১ বস্তা খাবারের মূল্য বর্তমানে ২৭০০ থেকে ৩০০০ টাকা আর ব্রয়লারের খাবার ৩০০০ থেকে ৩২০০ টাকা।
এর সাথে সাথে ভেক্সিন সহ সকল প্রকার ঔষধের মূল্য বৃদ্ধির কারনে বর্তমানে একটি ডিমের উৎপাদন খরচ পরে প্রায় ৯.৭৯ টাকা এবং ব্রয়লার মুরগির প্রতি কেজি পরে ১৪০ টাকা থেকে ১৪৫ টাকা। তিনি আরো বলেন, ঢাকার বাজারের উপর ভিত্তি করে স্থানীয় আরৎদাররা চাহিদার ভিত্তিতে বাজার মূল্য নির্ধারন করে থাকেন। এখানের খামারীদের কোন হাত নেই।
বাজার মূল্য নির্ধারনের সময় ডিম ও ব্রয়লারের উৎপাদন খরচের প্রতি কোনরূপ লক্ষ্য করা হয় না। বাজার মূল্য নির্ধারনে ব্যাপারে বাংলাদেশের কিছু কর্পোরেট কোম্পানী ও বিদেশী কিছু মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানী কর্মাশিয়াল ফার্মিংএ আসায় বাজারটি তাদের হাতে চলে গেছে। কারন মোট উৎপাদনের প্রায় ২৫% তাদের হাতে। তারা চাচ্ছে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক খামারীগুলো ঝরে গেলে তারা বজারটি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রন করতে পারবে।
ভোক্তা পর্যায়ে যে ডিমের মূল্য ১২-১৩ টাকা সেখানে সেই ডিম খামারী পর্যায়ে সর্বোচ্চ ৯.৫০ টাকা। মাঝখানে আড়ৎদার, ফরিয়া, মুদি দোকানদার ২.৫০-৩ টাকা পর্যন্ত ব্যবসা করে। তিনি বলেন, কর্পোরেট কোম্পানীগুলোর ডিমের উৎপাদন খরচ অনেক কম। কারন বাচ্চা তাদের নিজস্ব হ্যাচারীতে উৎপাদন করে, খাদ্যের সমস্ত কাঁচামাল তারা বৃহৎ আকারে আমদানী করে এবং নিজস্ব ফিড মিলে খাদ্য উৎপাদন করে কর্মাশিয়াল ফার্মে ব্যবহার করে। তাই তাদের উৎপাদিত পন্যের মূল্যের সাথে প্রান্তিক খামারীদের উৎপাদিত পন্যের মূল্যের অনেক পার্থক্য থাকে। তাই প্রান্তিক খামারীরা তাদের কাছে অসহায়। তিনি আরো বলেন, পোল্ট্রি খাত একটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ খাত । প্রান্তিক খামারিরা বছরের পর বছর লোকসান গুনতে শুনতে সর্বসসাপ্ত হয়ে ঝরে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে ৪০% খামার বন্ধ হয়ে গেছে।
এইভাবে লোকসান দিতে থাকলে অচিরেই সকল প্রান্তিক খামার বন্ধ হয়ে যাবে আর লক্ষ লক্ষ মানুষ বেকার হয়ে পরবে। এসময় সংবাদ সম্মলেনের মাধ্যমে সরকারের কাছে চার দফা দাবি তুলে ধরেন তারা। দাবি গুলো হলো, ডিম ও ব্রয়লার মরগীর দাম সরকারের পক্ষ থেকে ভিন্ন ভিন্ন ভাবে খামারী, আরৎদার,ভোক্তা পর্যায়ে মূল্য নির্ধারন করা, সংশ্লিষ্ট প্রানী সম্পদ মন্ত্রনালয়, বানিজ্য মন্ত্রনালয়, ভোক্তা অধিকার, খামারী প্রতিনিধি, ফিডমিল প্রতিনিধি, হ্যাচারী মালিক প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি জাতীয় কমিটি গঠন করে ১৫ দিন বা ১ মাস অন্তর পোল্ট্রি পন্যের মূল্য নির্ধারন করা, কৃষি খাতে যেভাবে সরকার সার, ঔষধ, বিদ্যুৎ ইত্যাদিতে ভর্তুকীসহ প্রনোদনা প্রদান করেন তদরুপ পোল্ট্রি খামারীদেরও বাচ্চার মূল্য ও খাদ্যের মূল্যে ভর্তুকী প্রদান করলে ডিমের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখা, এবং পোল্ট্রি খাদ্যের মূল্য সহনীয় পর্যায় আনার জন্য সরকারের তরফ থেকে জাতীয় কমিটির নির্ভর যোগ্য তদারকি করা। সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন, মো. সেলিম সরদার, ফরিদ উদ্দিন, এনায়েত হোসেন প্রমুখ।