সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:১৪ পূর্বাহ্ন
লকডাউনে ১২ বছরের ইব্রাহিমের কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে বাড়িও ফিরেও যায়, কিন্তু বাবার অভাবের সংসার, তাই আবারো ফিরে আসে বরিশাল নদী বন্দর এলাকায়।
এরপর সেখানে সে ভাসমান পথ শিশুদের সাথে দিন কাটাতে শুরু করে। আর বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ ও গণমাধ্যমকর্মীদের দেয়া খাবার খেয়ে জীবন ধারণ করতে থাকে। যদিও এরইমধ্যে পাশের একটি মুরগির দোকানে কাজও নেয় সে।
তবে গত ৪ মে রাতে নদীবন্দরে অসহায় ভাসমান মানুষদের খাবার দিতে এসে বিষয়টি জানতে পারে সৈয়দ মেহেদি হাসান নামের একজন গণমাধ্যমকর্মী । তিনি পুরো বিষয়টি যেনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি ভিডিওসহ স্ট্যাটাস দেন।
যে বিষয়টি দ্রুতই দৃষ্টিগোচর হয় ঝালকাঠি সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এম এম মাহমুদ হাসান-পিপিএম (বার) এর। তিনি ওই গণমাধ্যমকর্মী ও উদ্যোগের আরো এক কর্মীর সহায়তায় ১২ বছরের ইব্রাহিম ওরফে সুজনের তথ্য নেন। পরবর্তীতে সার্বিক খোজ খবর নিয়ে সুজনকে বাড়িতে ফিরিয়ে দেয়া এবং খাদ্য সহায়তা প্রদানের বিষয়টি গণমাধ্যমকর্মীকে জানান।
পুলিশের ওই কর্তার অনুরোধে ইব্রাহিমকে সাথে নিয়ে বরিশাল নদী বন্দর থেকে বাকেরগঞ্জ উপজেলার রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের তবিরকাঠি গ্রামে যান গণমাধ্যমকর্মী মেহেদী হাসান।
মেহেদী হাসান জানান, সেখানে যাওয়ার পর ইব্রাহিমের বাবা মাসুদ সিকদারের হাতে ছেলেকে তুলে দেয়া হয়, পাশাপাশি তার সাথে মুঠোফোনে কথা হয় পুলিশ কর্মকর্তা এম এম মাহমুদ হাসানের। এরপর পুলিশ কর্মকর্তা ওই পরিবারকে নিজ উদ্যোগে মাসিক খাদ্যপণ্য প্রদান করেন এবং বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রতিমাসে কিছু ব্যয়ভার বহনের কথাও জানান।
স্থানীয় একটি মাদ্রাসার ষষ্ঠ শ্রেনিতে পড়ুয়া ইব্রাহিম জানান, বাবার অভাবের সংসার। সেখান থেকে পালিয়ে প্রায় ২ মাস পূর্বে বরিশাল-ঢাকা রুটের একটি লঞ্চে চাকুরি নেয়, তবে সে লঞ্চে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিলে সে অন্য একটি লঞ্চে চাকুরি নেয়। কিন্তু লকডাউনের কারণে লঞ্চ চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সে বিপাকে পড়ে।
ইব্রাহিমের বাবা মাসুদ সিকদার জানান, দেনাগ্রস্থ হয়েও পরিবারের ৫ সদস্যকে নিয়ে দিনমজুরি করে কোনভাবে সংসার চালান সে। স্ত্রী স্থানীয় একটি প্রতিষ্ঠানে ৫ শত টাকা বেতনে চাকুরি করেন। তবে করোনার কারেন তিনি বেহাল দশায় পরে যান।
ইব্রাহিম বর্তমানে বাড়িতে রয়েছে জানিয়ে বাবা আরো জানান, বকাঝকা করায় প্রায় ২ মাস পূর্বে ইব্রাহিম বাড়ি থেকে চলে যান, এরপর কয়েকদিন পরে জিডিও করা হয় এবং ১৬ দিন পরে তার সন্ধানও পাওয়া যায়। বাড়িতে নিয়ে আসা হলেও আবার সে চলে যায়। দ্বিতীয় দফায় ইব্রাহিমকে বাড়ি ফেরানোর চেষ্টা অভাবের কারনেই আর করা হয়নি। এরপর পুলিশের ওই স্যার ইব্রাহিমকে লোকদিয়ে বাড়ি পাঠায় এবং কিছু খাদ্য সহায়তা দেয়। যা দিয়ে এখনও কোনভাবে টিকে রয়েছেন বলে দাবি মাসুদ সিকদারের।