শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৪:২৭ পূর্বাহ্ন

সর্বশেষ সংবাদ :
কলাপাড়ায়- ফরিদগঞ্জ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শ্রেনিকক্ষ পরিত্যক্ত, ভবন সঙ্কট, জরাজীর্ণ টিনের ঘরে পাঠদান কলাপাড়ায় শিশু শিক্ষার্থীকে ধর্ষনের অভিযোগ কলাপাড়ায় মেগাপ্রকল্পের জমি অধিগ্রহণে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের ন্যায্যতার দাবিতে সংবাদ সম্মেলন ১০ম গ্রেডের দাবিতে বরিশালে প্রাথমিক শিক্ষকদের মানববন্ধন থ্রি হুইলার চালক শ্রমিকদলের নেতৃবৃন্দের মতবিনিময় সভা বাউফলে সিরাতুন্নবী (সাঃ) উপলক্ষে আলোচনা সভা ও দোয়া মিলাদ অনুষ্ঠিত বাউফলে প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ ও স্মারক লিপি প্রদান নার্সিং প্রশাসন ক্যাডারদের অপসারণের দাবিতে বরিশালে নার্সদের মানববন্ধন বরিশালে প্রতারনার প্রি-পেইড মিটার স্থাপন বন্ধ করার দাবিতে বরিশালে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করেছে কলাপাড়ায় বৃক্ষরোপণের প্রয়োজনীয়তা বিষয়ক ক্যাম্পেইন ও চারা গাছ বিতরণ কলাপাড়ায় ব্যাবসায়ীর হাত-পা, মুখ বেঁধে নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার লুট করেছে দুর্বৃত্তরা গণতন্ত্র দিবস ও বিএনপির বরিশাল বিভাগীয় সমাবেশে ঘনঘন লোডশেডিং ও ভূতুড়ে বিল, বিপাকে কলাপাড়া পল্লী বিদ্যুৎ গ্রাহকরা কলাপাড়ায় ইউপি চেয়ারম্যান আনছার মোল্লা কারাগারে পিলখানা হত্যাকান্ডের সুষ্ঠু তদন্ত পূর্বক বিচার ও ৯ দাবীতে চাকুরিচ্যুত বিডিআর সদস্যদের সংবাদ সম্মেলন
বরিশালে গণমাধ্যমকর্মীদের ব্যতিক্রমী উদ্যোগ অব্যাহত

বরিশালে গণমাধ্যমকর্মীদের ব্যতিক্রমী উদ্যোগ অব্যাহত

Sharing is caring!

সাইফুর রহমান মিরণ:  করোনায় প্রতিদিন বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। বাড়ছে মৃত্যুও। মানুষের বাঁচার আকুতির সঙ্গে বাড়ছে ক্ষুধা। কর্মহীন এবং অসহায় মানুষ করোনার সঙ্গে ক্ষুধার সঙ্গেও যুদ্ধ করছে। এমন বাস্তবতায় করোনা মোকাবেলার সঙ্গে সঙ্গে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছে বরিশালের গণমাধ্যমকর্মীরা। গত এক মাসেরও বেশি সময় ধরে তারা প্রতিদিন রান্না করা খাবার সরবরাহ করছেন বরিশাল নদী বন্দরে থাকা দুই শতাধিক অসহায় চিন্নমূল শিশু ও দুস্থদের।

করোনায় চরম ঝুঁকির মধ্যে যখন সবাইকে বলা হচ্ছে ঘরে থাকুন, সুস্থ্য থাকুন। সেই মুহূর্তে বরিশালের গণমাধ্যমকর্মীরা প্রাতিষ্ঠানিক কাজের বাইরে অতিরিক্ত ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন রান্না করা খাবার সরবরাহ করছে। মার্চ মাসের ২৬ তারিখ থেকে প্রতিদিন রাতে লঞ্চঘােেট থাকা অবহেলিত ওইসব শিশু ও অসহায়দের খাবার পরিবেশন করছেন তারা। রোববার থেকে দুপুরে ছিন্নমূল শিশুদের খাবারও সরবরাহ করা হচ্ছে। এখন থেকে যতদিন পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হবে ততদিন দুই বেলা রান্না করা খাবার সরবারাহ করবে তারা।

গণমাধ্যমকর্মীরা তাদের এই কাজের নাম দিয়েছেন ‘উদ্যোগ’। কোন বিশেস সংবাদকর্মীরা নয়, তাদের এই উদ্যোগের সঙ্গে আছেন বরিশাল শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবত প্রেসক্লাব, বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটিসহ বরিশালের সকল গণমাধ্যম সংগঠনের কর্মীরা। এই কর্মীরা আর্থিক ও শারীরিক শ্রম দিয়ে ওই উদ্যোগ অব্যাহত রেখেছেন। বর্তমানে তাদের এই উদ্যোগের সঙ্গে আর্থিক সহযেগিতা নিয়ে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ সহযোগী হচ্ছেন। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়া পর্যন্ত এই খাবার সরবরাহ অব্যাহত থাকবে বলেও জানিয়েছেন তারা।

গণমাধ্যমকর্মীরা জানান, সারা দেশে যখন করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে, তখন ঢাকা-বরিশালের লঞ্চসহ সকল হোটের বন্ধ করে দেয় সরকার। লঞ্চ এবং হোটেল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বরিশাল নৌবন্দর এলাকায় কাজ করে বেঁচে থাকা ছিন্নমূল শিশু এবং অসহায় মানুষ খাবার সংকটে পড়ে। যারা লঞ্চ এবং হোটেলের অবশিষ্ট খাবার খেয়ে জীবন চালাত। করোনার ঝুঁকি মোকাবেলায় মানুষদের সচেতন করতে গিয়ে বিষয়টি নজরে আসে সংবাদকর্মীদের। শুরুতে কয়েকজন বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করেন। পরে এটাকে বাস্তবে রূপ দিতে কাজ শুরু করেন তারা। লঞ্চঘাটে থাকা অসহায় মানুষের এক বেলা খাবার ব্যবস্থা করার ইচ্ছা থেকেই বরিশালের গণমাধ্যম কর্মীরা কাজ শুরু করে।

প্রথম দুই দিন বরিশাল প্রেসক্লাব সম্পাদক এসএম জাকির হোসেন ব্যক্তিগতভাবে খাবার সরবরাহ করেন। পরে তার সঙ্গে অর্থ ও খাবার সহায়তা নিয়ে আসেন কাজী আফরোজা নামে এক উদ্যোক্তা। এরপরই বরিশালের সকল গণমাধ্যমকর্মীরা লঞ্চঘাটে থাকা সব শিশুদের ধারাবাহিকভাবে রান্না করা খাবার সরবরাহের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তাদের এই উদ্যোগে সরকারি-বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠান করোনায় কর্মহীনদের সহযোগিতা দিচ্ছেন। বর্তমানে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ যুক্ত হচ্ছেন। গণমাধ্যমকর্মী এবং অন্যদের সহযোগিতা নিয়ে প্রতিদিন চলছে এই কার্যক্রম। যা এক মাসেরও বেশি সময় ধরে চলছে।

গণমাধ্যম কর্মীদের এই উদ্যোগ দেখে বরিশাল নদী বন্দর কর্তৃপক্ষ অসহায় এইসব মানুষদের দুপুরের খাবার দেওয়া শুরু করেন। বন্দর কর্মকর্তা আজমর হুদা মিঠু সরকারের উদ্যোগে ওই ব্যবস্থা শুরু হয়। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় রমজান শুরু হওয়ার পর তারা তাদের উদ্যোগটি বন্ধ করে দেন। ফলে ছিন্নুমূল শিশুদের দুপুরের খাবার বন্ধ হয়ে যায়। এই অবস্থা জানতে পেরে গণমাধ্যমকর্মীরা গতকাল রোববার তাদের দুপুরের খাবারও সরবরাহ করে। অব্যাহভাবে দুপুর এবং রাতে তার া খাবার সরবরাহ করবে বলেও জানিয়েছে।

এই কর্মসূচির উদ্যোক্তাদের একজন মুশফিক সৌরভ জানান, করোনার কারণে সংকটে থাকা দুস্থ্য শিশু ও অসহায় মানুষের পাশে খাবার সরবরাহের চেষ্টা অব্যাহত আছে। কোন ধরণের রাজনৈতিক চিন্তা থেকে নয়, কেবল দুঃস্থদের পাশে থাকার জন্য গণমাধ্যমকর্মীরা একাট্টা হয়েছেন। সবাই যার যার অবস্থান থেকে আর্থিক সহযোগিতা দিচ্ছেন। সেই অর্থ দিয়ে প্রতিদিন রান্না করা খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে। যতদিন অবস্থার উন্নতি না হবে ততোদিন এই চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। শুরু থেকে আমরা কেবল রাতের খাবার সরবরাহ করতাম। নৌবন্দর কর্তপক্ষ দুপুরে শিমুদের খাবার সরবরাহ করতো। তারা হঠাৎ তাদের সেই খাবার দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। তাই আমরা দুই বেলা এই অসহায় ও ছিন্নমূল শিশুদের খাবার সরবরাহ করে যাচ্ছি।

শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবত বরিশার প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসেন বলেন, সরকারি-বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠান করোনায় কর্মহীনদের সহযোগিতা দিচ্ছেন। আমরা গত এক মাসেরও বেশি সময় ধরে বরিশাল নদী বন্দরে থাকা ছিন্নমূল শিশু ও অসহয়দের জন্য রাতের খাবার ব্যবস্থা করে চলেছি। আমাদের সঙ্গে নৌবন্দর কর্তৃপক্ষ দুপুরে খাবার দিচ্ছিল। তারা খাবার দেওয়া বন্ধ কর দিয়েছে। তাই গতকাল রোববার থেকে আমরা দুই বেলা খাবার সরবরাহ করছি। যতদিন অবস্থার পরিবর্তন না হবে ততোদিন এই উদ্যোগ চালু থাকবে। আামাদের এই উদ্যোগের সঙ্গে অনেক মানুষ সহযোগিতা দিচ্ছেন। তাদের কাছে আমরা কৃতজ্ঞাতা জ্ঞাপন করছি। এই কর্মসূচির সঙ্গে আমরা চিকিৎসকসহ গণমাধ্যমের প্রতিটি সদস্যর সহযোগিতা প্রত্যাশা করছি। একই সঙ্গে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসনও সহযোগী হয়ে আমাদের পাশে আছে।

এদিকে বরিশাল নৌবন্দর কর্মকর্তা আজমল হুদা মিঠু সরকার বলেন, আমার সীমাবদ্ধতার কারণে দুপুরেরখাবার সরবরাহ বন্ধ করা হয়েছে। তবে আমি আবারও চেষ্টা চালাচ্ছি যাতে দুপুরে খাবার নিয়ে ওদের পাশে থাকতে পারি। সেব্যাপারে গণমাধ্যমকর্মীদের উদ্যোগের সঙ্গে সমন্বয় করে ব্যবস্থা নেবো।

গণমাধ্যম কর্মীরা আহ্বান জানাচ্ছে, তাদের দেওয়া প্রতিদিন খাবার সরবরাহ কর্মসূচির বাইরে যদি কোন ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান খাবার সরবরাহ করতে চান, তাহলে যেন তারা একটু আগে গণমাধ্যমকর্মীদের অবহিত করেন। তাহলে ওইদিন আর গণমাধ্যম কর্মীরা খাবার সরবরাহ করবে না। একই সময় একাধিক ব্যক্তি প্রতিষ্ঠান খাবার সরবরাহ করলে অপচয় হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেবে।

লেখক: গনমাধ্যম ও সংস্কৃতিকর্মী

 

এব্যাপারে এসএম জাকির হোসেন মুঠোফোন: ০১৭১৩৩৭৪৫২৫, কাওসার হোসেন: ০১৭১৮৩২৭৯৭০ নম্বরে যোগাযোগের জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন তারা।

Print Friendly, PDF & Email

নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন




© All rights reserved © crimeseen24.com-2024
Design By MrHostBD