রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:১৫ পূর্বাহ্ন
এইচ আর হীরা (অতিথি প্রতিবেদক) : নথুলাবাদ জিয়া সড়ক এলাকার ইমারত নির্মাণ শ্রমিক বাবু আলী। স্ত্রী, চার সন্তান ও বৃদ্ধা মাকে নিয়ে তার সংসার। দৈনিক সাড়ে ৫শ টাকা মজুরিতে কাজ করতো তাই দিয়েই চলতো তার সংসার। দেড় সপ্তাহ ধরে কাজ না থাকায় সংসার চালাতে দাদন ব্যবসায়ীর দ্বারস্থ হয়েছেন তিনি।
শুধু বাবু আলীই নয় বরিশালের ৪ শত ৫০ জন (বরিশাল জেলা ইমারত নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়ন রেজিঃ ৯১২ হিসেবমতে) ইমারত নির্মাণ শ্রমিক এখন মানবেতর জীবযাপন করছেন। করোনা ভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণরোধে লকডাউনে সড়ক কিংবা ভবন নির্মাণসহ সব উন্নয়ন প্রকল্পই বন্ধ রয়েছে। ফলে এসব উন্নয়নকাজে নিয়োজিত শ্রমিকরা ২০ দিনেরও বেশি সময় ধরে বেকার বসে রয়েছেন। এদের অনেকেই পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করলেও কারও কাছে হাত পেতে কিছু চাইতে পারছেন না। এভাবে আর কিছুদিন চলতে থাকলে ভয়াবহ সংকটের আশঙ্কা করছেন শ্রমজীবী এসব মানুষ।
গত সোমববার (১২এপ্রিল) বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের,জিয়া সড়ক,কাশিপুর,নথুলাবাদ,কলেজ এভিনিউ,বৌদ্ব পাড়া ও রুপাতলীসহ আরও বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে নির্মাণ শ্রমিকদের বর্তমান জীবনযাত্রা সম্পর্কে জানা যায়। বিল্ডিং নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে দিনে ৫শ থেকে সাড়ে ৫শ টাকা মজুরিতে কাজ করেন জিয়া সড়ক এলাকার সালাম হাওলাদার (৩২)। বৃদ্ধ বাবা-মাকে নিয়ে তার সংসার। ১৫ দিন ধরে কাজ না থাকায় ধার-কর্জ করে সংসার চালাচ্ছে তিনি। একই এলাকার বিল্ডিং নির্মাণ শ্রমিক হানিফ,জসিম ও হাবিবেরও কাজ নেই। তারাও পরিবার পরিজন নিয়ে পড়েছেন চরম বিপাকে। বৌদ্ব পাড়া এলাকার টাইলস শ্রমিক এনামুল, আব্দুর রহিম ও জিহাদেরও কাজ নেই ১২ দিন ধরে। মাঝে মধ্যে কাজের সন্ধানে বের হলেও লকডাউন থাকায় বাধ্য হয়ে ঘরে ফিরতে হচ্ছে তাদের। এসব নির্মাণ শ্রমিকরা বলেন, আমরা প্রতিদিনের কাজের মজুরি দিয়ে সংসার চালাই। অথচ করোনা ভাইরাসের কারণে সরকার কাজ বন্ধ করে দিয়েছে। এ অবস্থায় কোনোমতে এক সপ্তাহ কেটে গেলেও এরপর থেকে চালাতে পারছি না। এভাবে আর কিছুদিন চললে পথে বসতে হবে আমাদের। শ্রমিকরা আরও বলেন, শুনেছি সরকার ঘরে ঘরে চাল-ডাল পৌঁছে দেবে।
কিন্তু এখন পর্যন্ত আমাদের কেউই কোনো সাহায্য করেনি। কারও কাছে হাত পেতে চাইতেও লজ্জা লাগে। বাধ্য হয়ে চড়া সুদে দাদন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ঋণ নিতে হচ্ছে। বৌদ্ব পাড়া এলাকার রাজমিস্ত্রির প্রধান ও সাব ঠিকাদার মকবুল হোসেন বলেন, আগে আমার ৬টি সাইডে ৪০ জন শ্রমিক কাজ করতো। বর্তমানে ৪টিই বন্ধ রয়েছে। ২টি সাইটে মাত্র ৬ জন শ্রমিক দিয়ে গোপনে কাজ চালাচ্ছি। অধিকাংশ শ্রমিকরাই বেকার ঘরে বসে রয়েছে। এভাবে কয়দিন চলবে তাও বুঝতে পারছি না। প্রশাসনের প্রতি বেকার দরিদ্র শ্রমিকদের প্রতি দৃষ্টি দেওয়ার আহবান জানান তিনি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক নির্মাণ শ্রমিক বলেন, তারা স্থানীয় মেয়র ও এমপির মধ্যে রাজনীতির মারপ্যাচের শিকার বলে তাদের দুই জনপ্রতিনিধির থেকে এখনো কোনো ত্রাণ সহায়তা পাচ্ছেন না। বরিশাল জেলা ইমারত নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি সেকান্দার আলী বলেন, নির্মাণ শ্রমিকরা করোনা পরিস্থতিতে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
অসহায় হয়ে পরেছে তাদের পরিবার। সরকার ও স্থানীয় প্রশাসনের কাছে যাচাই বাছাই প্রকৃত শ্রমিকদের ত্রাণ সহায়তার অনুরোধ জানিয়েছেন এই শ্রমিক নেতা। সংগঠনের সাধারন সম্পাদক মোঃ মালেক ফকির জানান, আমাদের নির্মাণ শ্রমিকরা খুবই কষ্টে আছে। আমরা প্রশাসন সহ অনেক জনপ্রতিনিধিদের কাছে গেছি কিন্তু কেউ আমাদের দিকে মুখ তুলে তাকায় নি। আমরা চাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর খাদ্য সহায়তা আমাদেরও দেয়া হোক তাহলে আমরা আমাদের পরিবার নিয়ে কোনমতে বেঁচে থাকতে পারবো।
খাদ্য সহায়তা বিতরনের বিষয়ে বরিশালের জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান বলেন, ত্রাণের কোনো সংকট নেই। নির্মাণ শ্রমিক, বাস শ্রমিক, ভাসমান চা-স্টলসহ করোনায় বেকার হয়ে পড়া পরিবারগুলোর তালিকা অনুযায়ী খাবার পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। তালিকা ছাড়াও অনেক অসচ্ছল পরিবার আমাদের কাছে ফোন দিলে আমরা বাড়ি গিয়ে পৌঁছে দিচ্ছি। এছাড়া পানীসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মহোদয় ও বিসিসি মেয়র মহোদয় কর্তৃক খাবার সংকটে থাকা পরিবারগুলোর মাঝে খাবার দেয়া হচ্ছে। আশা করছি খুব দ্রুত পর্যায়ক্রমে খাবার সংকটে থাকা সকলেই খাবার সামগ্রী পাবেন।