মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:২৮ অপরাহ্ন

সর্বশেষ সংবাদ :
কলাপাড়ায় প্রীতি ফুটবল ম্যাচ অনুষ্ঠিত কলাপাড়ায় ডাকাত দলের ৬ সদস্য আটক মৎস্যজীবী দলের দোয়া মুনাজাত বাউফলে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে সার ও বীজ বিতরণ বাউফলে আগষ্টের গনঅভ্যুত্থানে নিহত শহীদদের উদ্দেশ্যে স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত কলাপাড়ায় তারেক রহমান’র মুক্তির খবরে আনন্দ মিছিল কলাপাড়ায় উড়ন্ত মৃদু বিষধর বিলুপ্তপ্রায় লাউডগা সাপ উদ্ধার কলাপাড়ায় যাত্রীবাহি ৩ টি বাস থেকে ২৫ মন জাটকা ইলিশ জব্দ কলাপাড়ায় শের-ই বাংলা নৌ ঘাঁটিতে নৌবাহিনীর নবীন নাবিকের শিক্ষা সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত মামলা থেকে তারেক রহমানকে অব্যাহতি দেওয়ায় দোয়া মাহফিল শ্রমিকদলের আলোচনা সভা এবং দোয়া মুনাজাত নগরীতে নিখোঁজ কলেজ ছাত্রী মিলা বাউফলে একই রাতে দুই বাড়িতে ডাকাতি বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে শহীদদের স্মরণে সরকারি মোজাহার উদ্দিন বিশ্বাস কলেজের কর্মসূচি কুয়াকাটায় সানভিউ প্রপার্টিজ এমডির বিরুদ্ধে ১ কোটি ৮৪ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ
বরিশালে বিক্রি হচ্ছে শ্রম কেনাবেচা

বরিশালে বিক্রি হচ্ছে শ্রম কেনাবেচা

Sharing is caring!

শামীম আহমেদ(বিশেষ প্রতিবেদক): বরিশাল নগরীর চৌমাথা মহা সড়কের পাশে বিক্রি হচ্ছে শ্রম কেনাবেচা । সূর্যোদয়ের সাথে ভোরের নীরবতা ভেঙ্গে একদল মানুষের হাকডাক চলছে।শুধু চৌমাথা নয় আছে রুপাতলী, মড়ক খোলার পুল,সহ নগরীর বিভিন্ন স্থানে ঘুরে দেখা যায় একদল মানুষ গুলোর কারও হাতে কাস্তে-কোদাল,ভেলচা, কারও হাতে বাঁশের ঝুড়ি, কারও হাতে দড়ি, পানি রাখার ড্রাম আর কাঠ দিয়ে বানানো ভারি জিনিস টানার বাহন ও গুলো তাদের সরঞ্জাম।  তবে মূল যা নিয়ে তারা এখানে বসেছেন তা তাদের শরীর। কেউ লম্বা, কেউ বেটে। কেউ সুস্থ্য-সবল, কেউ রোগা-পাতলা। ওটাই মূলত বিক্রি হয়।এ এক নিত্যদিনের চিত্র। প্রতিটি ভোরেই  বসে এই শ্রমজীবী মানুষগুলোর হাট, যে হাটে প্রতিদিন কেনাবেচা হয় তাদের শ্রম। আসলে প্রতিটি মানুষই তাদের নিজেদের বিক্রি করে দরকষাকষির হাটে। নগরীর এই সব বিভিন্ন হাটে প্রতিদিন ভোরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বসে থাকে মানুষগুলো। সামনে থাকে সরঞ্জাম। মহিলা শ্রমিকদের ও দেখে মেলে পুরুষ শ্রমিকের পাশা পাশি। ভোর গড়িয়ে সকাল হতেই ক্রেতার আনাগোণা বাড়তে থাকে।’অ্যাই তুই যাবি? কত নিবি? তোমার বয়স হয়ে গেছে, তোমাকে নেব না।’স্যার আমারে নেন, আমারে নেন, পোষাই দিমু।’এমনই চলে দরকষাকষি। আর সফল দরকষাকষিতে বিক্রি হয় শ্রম।সময় গড়ায়। ধীরে ধীরে খালি হতে থাকে হাট। কেউ কেউ কাজ পেয়ে চলে যান ঠিকাদারের (মাঝি) সঙ্গে। কেউ কেউ কাজ না পেয়ে হতাশ হয়ে বসে থাকেন। এর মধ্যে বয়ষ্করাই বেশি। তবে অভিজ্ঞতার দরেও বিক্রি হয় কারো কারো শ্রম।দিনের শ্রম বেচতে না পেরে কেউ কেউ ঘরে ফিরে যান। কেউ কেউ আবার অন্য কোন কাজের সন্ধানে বেরিয়ে পড়েন। একসময় খালি হয়ে যায় শ্রম বাজার।এই শ্রমজীবী মানুষগুলোর বড় অংশই নির্মাণ শ্রমিকের সঙ্গে ইট-বালু, সিমেন্ট, লোহার রড টানার কাজ করেন। কেউ কেউ ভবন ভাঙার কাজে। কেউ কেউ বিক্রি হন অন্য কোন কাজের জন্য।বরিশালে তাদের ডাকা হয় বদলা।অন্য জেলার  লোকজন বলেন ‘কামলা’। তবে ঠিকাদার আর শ্রমজীবী মানুষ বদলা আর কামলা ডাকের আড়ালে ঢাকা পড়ে যায় তাদের মানুষ পরিচয়। মরক খোলার পুল  কথা হয় কয়েকজনের সঙ্গে। পটুয়াখালী জেলা থেকে আসা সাইদুল (৪০) তিনি বলেন গত ৮ বছর ধরে এই হাটে নিজেকে তুলে শ্রম বিক্রি করছেন।  নগরীর কাউনিয়ায়  এলাকায় আরও কয়েকজন শ্রমিকের সঙ্গে বাসা ভাড়া করে থাকেন। স্ত্রী-ছেলেমেয়ে থাকেন বাড়িতে।তিনি বলেন, আমাদের এলাকায় কাজের সুযোগ কম। সেজন্য বরিশাল শহরে এসেছিলাম। মাসে অন্তত ১২ দিন কাজ পাই। এখন কাজের চাপ কম।মাসে ৮-১০ হাজার টাকা ইনকাম করি। তাতে সংসার চালাতে কষ্ট হয়।বরিশালের উজিরপুর থেকে এসেছেন সিদ্দিক (৪৫) কাজ করছেন ১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে। তিনি অবশ্য স্ত্রী, তিন ছেলেমেয়ে নিয়ে থাকেন বরিশালে। তিনি জানান কোনদিন ৬০০ কোনদিন ৫০০ টাকা পাই। রাত পর্যন্ত কাজ করলে ৮০০ টাকা পর্যন্ত পাই।তাতে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়।সাস্তাবাদের অপর শ্রমিক মো.রাজ্জাক বলেন, ঠিকাদার এককভাবে কাউকে নেন না। উনার যদি ১০ জন লাগে, বেছে বেছে ১০ জনকে নেন। ৫ জন লাগলে ৫ জন নেন। দরদাম করেই তারপর আমাদের কাজ দেন।কয়েকজন ঠিকাদারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মাঝি কিংবা ঠিকাদার মানে মূলত রাজমিস্ত্রি ও নির্মাণ কারিগর।মালিকের কাছ থেকে তারা ভবন তৈরি করে দেওয়ার জন্য চুক্তিবদ্ধ হন। নিজস্ব শ্রমিকের বাইরে সহকারী হিসেবে নেওয়া হয় এই সব হাট থেকে।চল্লিশ পেরুনো এমনই একজন ঝালকাঠি জেলার মো,আরিফ কাজের সন্ধানে আসা এই শ্রমিকের চোখেমুখে একরাশ হতাশার ছাপ। দীর্ঘশ্বাস চেপে বরিশাল সময় বলেন, মাসে ভালো করে সাতদিনও কাজ পাই না। কাজ দিলেও সারাদিন পরিশ্রমের পর ৫০০ টাকা বেতন দেয়। পোষায় না। ভাবছি বাড়ি চলে যাব। ক্ষেতেখামারে কাজ করব। বটতলা এলাকায় কথা হয় এক ঠিকাদারের সাথে তিনি বলেন,বয়স বাড়লে কাজ কমে যাবে, এটা তো খুবই স্বাভাবিক। একজন যুবক যেভাবে ইট-বালু টানতে পারে, বয়স্ক একজন লোক কি সেভাবে পারবে? কাজ যে বেশি করবে, সে-ই তো বেশি টাকা পাবে।তবে অন্যান্য শ্রমিকরা এই যুক্তি মানতে নারাজ। তারা বলেন, বয়স হয়ে গেছে মানে তো একজন শ্রমিক অকেজো হয়ে যায়নি। যে লোক ২০-৩০ বছর ধরে এই কাজ করছে তার অভিজ্ঞতা অনেক। একটা ইয়াং ছেলে পরিশ্রম করে কিন্তু কাজ বুঝে না। একজন বয়স্ক শ্রমিক তার চেয়ে কাজ কম করতে পারলেও বুঝে বেশি। বয়স্করা কাজে ফাঁকি দেন না।এদিকে বরিশাল নগরীর বিভিন্ন স্হানে ঠিক কবে থেকে এই শ্রমিক কেনাবেচার হাট বসছে, তার হিসেব জানা নেই কারও কাছে। তবে কেনাবেচার হাটে দরদামে বিক্রি হওয়া এই মানুষগুলোই নগর সভ্যতার নেপথ্য কারিগর। কারণ তাদের ঘামেরশ্রমেই এই শহর হয়ে উঠেছে কথিত শহুরে সভ্য নাগরিকদের আবাসস্থল।

নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন




© All rights reserved © crimeseen24.com-2024
Design By MrHostBD