বুধবার, ১৪ মে ২০২৫, ১২:৪৭ অপরাহ্ন
এস এল টি তুহিন: ভাঙ্গা থেকে বরিশাল হয়ে সাগরকন্যা কুয়াকাটা সৈকত ও পায়রা বন্দর পর্যন্ত সড়কটির দৈর্ঘ্য প্রায় ২৩৫ কিলোমিটার। ব্যস্ততম সড়কের পুরোটাই মাত্র ২৪ ফুট প্রশস্ত। বর্তমানে সরু এই সড়ক দিয়ে ঢাকা ও বরিশাল বিভাগের ১০ জেলার যান চলাচল করে। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর যানবাহন চরাচল আরো বহুগুনে বেড়ে যাবে।
সূত্রমতে, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর মাত্র পাঁচ ঘন্টায় পরিবহনে ঢাকা থেকে কুয়াকাটায় পৌঁছানো যাবে। কিন্তু ভাঙ্গা থেকে বরিশাল হয়ে কুয়াকাটা পর্যন্ত সরু একটি সড়ক সে হিসেব গোলমাল করে দিতে পারে।
সচেতন বরিশালবাসীর মতে, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর সড়কটিতে বাড়তি যানবাহনের চাঁপ পেরিয়ে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সমুদ্র দেখা কিংবা পায়রা বন্দরে যাতায়াতের যে আশা করা হচ্ছে, তা পূরন হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। কারণ মাত্র ২৪ ফুট প্রশস্ত এই সড়কটিতে বর্তমানে এমনিতেই যানবাহনের ভীড় লেগে রয়েছে। সেতু উদ্বোধনের পর এই ভীড় আরও ৩/৪ গুন বৃদ্ধি পাবে। ফলে বাড়তি যানবাহনের চাঁপে স্বাভাবিকভাবেই এ সড়কে প্রতিদিনই বড় ধরনের যানজটের সৃষ্টি হবে। এতে পাঁচ ঘন্টার পথ পাড়ি দিতে লেগে যেতে পারে ১০ থেকে ১২ ঘন্টা।
এ অবস্থায় উদ্বোধনের পর স্বপ্নের পদ্মা সেতুর সুফল মিলবে না বলেই মনে করা হচ্ছে। অথচ বহু আগে ব্যস্ততম এ সড়কটিকে ছয়লেন করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলো সরকার। প্রাথমিক পর্যায়ের কাজ এবং সড়ক প্রশস্তকরণে জমি অধিগ্রহনের জন্য অর্থ বরাদ্দও দেয়া হয়েছিল। কিন্তু আজ পর্যন্ত শুরু হয়নি সেই কাজ। পরপর তিনবার ফেরত গেছে বরাদ্দ করা অর্থ।
বরিশাল জেলা বাস মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক কিশোর কুমার দে বলেন, বর্তমানে যানবাহনের চাঁপ সামলাতে এমনিতেই হিমশিম খাচ্ছে সড়কটি। বরিশাল থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত চলতে হয় ধীরগতিতে। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর বর্তমান পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে এ সড়কে প্রতিদিন প্রায় পাঁচ হাজার যান চলাচল করে। সেতু উদ্বোধনের পর তখন চলবে কমপক্ষে ১৫ হাজার যানবাহন। ফলে এখন ভাঙ্গা যেতে যে সময় লাগে, তার চেয়ে তখন দ্বিগুন সময় লাগবে।
কিশোর কুমার দে আরো বলেন, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর ব্যস্ততম দক্ষিণাঞ্চলের একমাত্র এই সড়কটিতে দুর্ঘটনার সংখ্যাও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, এই সড়কে শুধু দূরপাল্লার পরিবহনই নয়; থ্রি হুইলারগুলোও চলাচল করছে। এদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ কিংবা আলাদা লেন করে না দিলে প্রতিদিন সড়ক দূর্ঘটনায় মৃত্যুর তালিকা দীর্ঘ হবে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালে ভাঙ্গা-বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়ক চারলেন করার প্রাথমিক কাজ শুরু করে সড়ক ও সেতু বিভাগ। ২০১৮ সালে প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের সভায় তোলা হয়। পরে পাশ হওয়া ওই প্রকল্পে ভাঙ্গা থেকে বরিশাল হয়ে কুয়াকাটা পর্যন্ত ১৯৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ছয়লেনের এক্সপ্রেস সড়ক নির্মাণের অনুমোদন দেয় সরকার। পাশাপাশি সড়কটি নির্মাণে প্রয়োজনীয় জমি অধিগ্রহণের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয় ১ হাজার ৮৬৭ কোটি ৮৫ লাখ ৯০ হাজার টাকা।
সূত্রমতে, প্রকল্প অনুযায়ী সড়কটি হবে ১৭০ ফুট চওড়া। বিপরীতমুখী ডাবল লেনের দুটি সড়কসহ ধীরগতির স্থানীয় যানবাহনের জন্য দুটি আলাদা সার্ভিস লেন করার অনুমোদন দেয় একনেক। ২০১৮ সালের ১১ অক্টোবর পাশ হওয়া ওই প্রকল্প প্রস্তাবে ২০২০ সালের জুন মাসের মধ্যে জমি অধিগ্রহণের কাজ শেষ করতে বলা হয়। কিন্তু ২০২২ সালের মার্চ মাসেও সেই কাজ শুরু করতে পারেনি সড়ক ও সেতু বিভাগ। পরপর তিনবার ফেরত গেছে এই প্রকল্পের জন্য বরাদ্দকরা অর্থ। সর্বশেষ চলতি অর্থবছরে যে টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে তাও ফেরত যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এ ব্যাপারে সড়ক ও সেতু বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সড়ক নির্মাণে ঠিক কতটুকু জমি অধিগ্রহণ করতে হবে তা চিহ্নিত করার দায়িত্ব পাওয়া পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের ভুলের কারণেই এই দীর্ঘসূত্রতা। জমি চিহ্নিত করতে একদিকে যেমন তারা সর্বশেষ ম্যাপ পর্চা ব্যবহার করেনি, অন্যদিকে জমি চিহ্নিতকরণেও ছিল ত্রুটি।
ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, ১৯৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়ক প্রশস্তকরণে তারা মাত্র ৩০২ একর জমি অধিগ্রহনের প্রস্তাব করেছে। বিষয়টি নিয়ে জটিলতা মনে করায় আমরা নিজস্ব সার্ভেয়ার দিয়ে জরিপ করিয়ে দেখেছি জমি লাগবে ১ হাজার ৯১ একর। এভাবে নানা ভুলের কারণে নির্ধারিত সময়ে জমিঅধিগ্রহণ শুরু করা যায়নি বলেও ওই কর্মকর্তা উল্লেখ করেন।
সড়ক ও জনপথ বরিশাল সড়ক সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মিন্টু রঞ্জন দেবনাথ বলেন, মাদারীপুর ও ফরিদপুরের জমি অধিগ্রহণের কাজ বেশ ভালোভাবেই চলছে। তবে একটু ধীরগতিতে চলছে বরিশালে। আমরা গৌরনদীর জমি অধিগ্রহণ করার প্রস্তাবনা জেলা প্রশাসন কার্যালয়ে প্রেরণ করেছি। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ হয়ে যাবে।
প্রকল্পের পরিচালক সড়ক ও সেতু বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী তারেক ইকবাল বলেন, বর্তমানে দ্রুতগতিতে জমি অধিগ্রহনের কাজ চলছে। প্রয়োজনীয় জমি চিহ্নিত করার পর তা অধিগ্রহনের ব্যবস্থা নিতে ইতোমধ্যে বরিশাল, মাদারীপুর, ফরিদপুর এবং গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসনকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে চলতি বছরের শেষ নাগাদ সড়ক নির্মাণ কাজ শুরু সম্ভব হবে বলেও ওই কর্মকর্তা উল্লেখ করেন।